|
|
|
|
জটে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক কোর্স
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে বড় মাপের সংস্কারের প্রয়োজন বলে দীর্ঘদিন ধরেই সরব শিক্ষাবিদরা। সেই সংস্কারের রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে এখন বিতর্কের কেন্দ্রে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়। স্নাতক পাঠ্যক্রমের মেয়াদ তিন থেকে চার বছর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। আগামী জুলাই মাস থেকে শুরু হচ্ছে তার শিক্ষাবর্ষ। ইতিমধ্যেই মেয়াদ বাড়ানোর প্রতিবাদে সরব হয়েছে লেডি শ্রীরাম, সেন্ট স্টিফেন্স, হংস রাজের মতো প্রথম সারির কলেজগুলির বেশ কিছু বিভাগ। আপত্তি তুলেছে দিল্লি ইউনিভার্সিটি টিচারস্ অ্যাসোসিয়েশন (ডুটা)-র একটি বড় অংশও। অভিযোগ উঠেছে, সংশ্লিষ্ট সব মহলের সঙ্গে আলোচনা না করেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একতরফা ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী এম এম পল্লম রাজু অবশ্য আজ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে দাঁড়িয়ে চার বছরের পাঠ্যক্রমকেই স্বাগত জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, বিদেশে স্নাতক পাঠ্যক্রম সাধারণত চার বছরের হয়ে থাকে। ফলে এ দেশে স্নাতক হয়ে বিদেশে পড়তে গেলে সমস্যায় পড়েন পড়ুয়ারা। তাই বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে সঙ্গতি আনতে পাঠ্যক্রমের মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজু উল্লেখ করেন, নতুন ব্যবস্থায় পাঠ্যক্রমে কিছুটা নমনীয়তাও আসবে। দু’বছরের মাথায় কেউ পড়া শেষ করতে চাইলে তাঁকে ডিপ্লোমা দেওয়া হবে। তিন বছর পড়লে মিলবে স্নাতক ডিগ্রি। সাম্মানিক স্নাতক ডিগ্রি মিলবে পুরো চার বছর পড়লে। এখানেই আপত্তি বহু শিক্ষকের। তাঁদের মতে, দু’বছর পড়ে পাওয়া ডিপ্লোমা নিয়ে কোনও ছাত্র ভবিষ্যতে কোথাও উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হতে পারবেন না। চাকরির বাজারেও তাঁদের কোনও দাম থাকবে না।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কিন্তু দাবি, নতুন পাঠ্যক্রম বৃত্তিমূলক ও সময়োপযোগী। প্রথম দু’বছর সাম্মানিক বিষয় পড়ার সঙ্গে অন্যান্য বিষয়ও পড়তে হবে। ফলে অন্য বিষয়ও শিখতে পারবেন পড়ুয়ারা। যাঁরা সাম্মানিক স্তরে পড়তে আগ্রহী তাঁদের দু’টি (মেজর ও মাইনর) বিষয় নিয়ে পড়তে হবে। ফলে কাজের বাজারে বা গবেষণার ক্ষেত্রে সুযোগ বাড়বে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দীনেশ সিংহের কথায়, “মেয়াদ বাড়ানোর অন্যতম কারণই হল গবেষণার উপর জোর দেওয়া। এতে পাঠ্যক্রম যেমন বৃত্তিমূলক হবে, তেমনই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের কদর বাড়বে।” সেন্ট স্টিফেন্স কলেজের পদার্থবিদ্যা বিভাগের পাল্টা যুক্তি, এক জন স্নাতক হবে কোনও একটি বিষয়েই। কিন্তু নতুন ব্যবস্থায় অনেক ছাত্রছাত্রীকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাড়তি একটি বিষয় পড়তে হবে। এতে আখেরে পড়ুয়ার কোনও লাভ হবে না বলেই মনে করছে শিক্ষকদের একাংশ।
বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক ক্রমেই বাড়তে থাকায় আজ আসরে নামতে বাধ্য হন পল্লম রাজু। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন কলেজ ও ডুটা’র প্রতিনিধিদের একাংশ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওই একতরফা সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মুখর হয়েছে। সে সবের জবাবে রাজু এ দিন দাবি বলেন, “ইতিমধ্যেই ৪৩টি কলেজ নতুন পাঠ্যক্রমের বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে। এ ছাড়া ৩ হাজার স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে গোটা বিষয়টি ব্যাখ্যা করার পরেও তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশই নতুন পাঠ্যক্রমটি নিজেদের জন্য ভাল বলে মেনে নিয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে শিক্ষা সংক্রান্ত একটি সম্মেলনে শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত প্রায় ১৪০০ সংস্থা চার বছরের পাঠ্যক্রমের বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে।”
নতুন ব্যবস্থার বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছেন পরিকাঠামো নিয়েও। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় রয়েছেন প্রায় আড়াই লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী। বাড়তি এক বছর পড়াতে হলে বাড়তি যে পরিকাঠামো দরকার, অল্প কিছু কলেজেই তা আছে। ঘাটতি শিক্ষকেরও। এখনই বিভিন্ন কলেজে প্রায় চার হাজার শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। কোনও ভাবে অতিথি শিক্ষক দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। ডুটার বক্তব্য, ওই শূন্য পদগুলি পূরণ না করে তড়িঘড়ি চলতি বছর থেকেই নতুন ব্যবস্থায় যাওয়া অর্থহীন। তাদের পরামর্শ, শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের শূন্য পদ পূরণ করে ও সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনে ২০১৫ থেকে এই ব্যবস্থা চালু করা হোক। |
|
|
|
|
|