|
|
|
|
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমালেও হতাশ শিল্প
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ফের বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ককে দেওয়া ঋণে সুদের হার কমাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। জানুয়ারি থেকে এই নিয়ে টানা তিন বার। কিন্তু তা সত্ত্বেও এখনই বাড়ি, গাড়ি-সহ বিভিন্ন ঋণে মাসিক কিস্তির অঙ্ক কমার সম্ভাবনা প্রায় নেই বলেই জানিয়ে দিল অধিকাংশ ব্যাঙ্ক। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই আশাহত শিল্প। প্রত্যাশার ফানুস অনেকটাই চুপসে গেল শেয়ার বাজারেও।
শুক্রবার ঋণনীতি পর্যালোচনায় শীর্ষ ব্যাঙ্ক রেপো রেট (রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে সুদে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ককে ঋণ দেয়) ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে করেছে ৭.২৫%। কিন্তু নগদ জমার অনুপাত (সিআরআর) বদলায়নি। রয়েছে আগের ৪ শতাংশেই।
শিল্প, শেয়ার বাজার-সহ অনেকেরই আশা ছিল, মূল্যবৃদ্ধির হার অনেকখানি নীচে নেমে যাওয়ায় থমকে থাকা বৃদ্ধিকে চাঙ্গা করতে এ বার ৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। বাজারে নগদের জোগান বাড়াতে সিআরআর (বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে বাধ্যতামূলক ভাবে যে টাকা জমা রাখতে হয়) কমানো হবে বলেও আশা করেছিলেন অনেকে। কিন্তু এ দিন শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর ডি সুব্বারাও স্পষ্ট জানিয়েছেন, মূল্যবৃদ্ধি কমলেও তা ফের বাড়ার প্রবণতা এখনও পুরোদস্তুর বহাল রয়েছে। তাই এ বার ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমানোর পর আগামী দিনে ফের তা হ্রাসের সম্ভাবনাও যথেষ্ট কম। |
|
এখনও কড়া। সুব্বারাও। ছবি: পিটিআই |
আর এর পরই এখন আপাতত ঋণে সুদ কমানোর সম্ভাবনা কার্যত নাকচ করে দিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক-সহ দেশের বেশ কয়েকটি প্রথম সারির ব্যাঙ্ক। স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান প্রতীপ চৌধুরী জানান, “রেপো রেট যা কমেছে, তাতে ঋণে সুদ কমানোর সুযোগ নেই বললেই চলে। এ ব্যাপারে চেষ্টা করা বৃথা।” প্রতীপবাবু-সহ অনেক ব্যাঙ্ক কর্তারই মত, রেপো রেটের পাশাপাশি নগদ জমার অনুপাতও যদি কমলে ব্যাঙ্কগুলির পক্ষে সুদ কমানো সম্ভব ছিল। সুব্বারাওয়ের অবশ্য দাবি, বাজারে নগদের জোগান যথেষ্ট। তা ছাড়া, আগামী ৩-৬ মাসের মধ্যে ব্যাঙ্কগুলি সুদ কমাতে শুরু করবে বলেও আশা করছেন তিনি। তবে এই আশ্বাসে মন ভেজেনি শিল্পের। সিআইআই, অ্যাসোচ্যামের মতো বণিকসভাগুলি রেপো রেট কমানোকে স্বাগত জানিয়েছে ঠিকই। কিন্তু একই সঙ্গে ‘অভিযোগ’ করেছে, অর্থনীতির হাল ফেরাতে এই পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়।
থমকে যাওয়া বৃদ্ধি নিয়েও এ দিন দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন সুব্বারাও। তাঁর মতে, চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধি দাঁড়াবে ৫.৭%। যা অর্থ মন্ত্রকের (৬.১-৬.৭%) পূর্বাভাসের তুলনায় কম। যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুয়ালিয়ার মতে, এই পর্যবেক্ষণ নিরাশাবাদী (পেসিমিস্টিক)।
এ দিন আরও দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলো ফেলেন সুব্বারাও। প্রথমত, তিনি জানিয়েছেন সম্প্রতি এক ‘স্টিং অপারেশন’-এ তিন ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে তদন্ত জারি থাকবে। ক্লিনচিটের প্রশ্ন নেই। আর দ্বিতীয়ত, চলতি খাতে বাণিজ্যিক লেনদেনে ঘাটতি কমাতে সোনার আমদানি আরও নিয়ন্ত্রণ করা হবে। শুধু রফতানির গয়না তৈরির জন্যই সোনা আমদানি করবে ব্যাঙ্কগুলি। বেঁধে দেওয়া হবে সোনার কয়েন বন্ধক রেখে ঋণের ঊর্দ্বসীমাও। উল্লেখ্য, সুদ কমানো থেকে বৃদ্ধির হার বিভিন্ন বিষয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সুব্বারাওয়ের ‘মতানৈক্য’ আছে ঠিকই। কিন্তু চলতি খাতে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোই যে, এখন বড় চ্যালেঞ্জ, তা নিয়ে দু’পক্ষ একমত। |
|
|
|
|
|