|
|
|
|
প্রণবের পথ নিয়ে প্রশ্ন চিদম্বরমের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
প্রাক্তন বনাম বর্তমান অর্থমন্ত্রী। অবশ্য সরাসরি নয়। দেশের আর্থিক বৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রাক্তনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করলেন বর্তমান। আজ তারই সাক্ষী রইল এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক (এডিবি)-এর বার্ষিক সম্মেলনের মঞ্চ। দেশের আর্থিক বৃদ্ধির জন্য মনমোহন-সরকারের প্রচেষ্টার কথা বলতে উঠে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জমানার নীতির দিকেই আঙুল তুললেন পি চিদম্বরম। তাঁর যুক্তি, মন্দা কাটাতে তাঁর পূর্বসূরির আমলে যে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তার জন্যই বৃদ্ধির হার কমেছে এবং বাণিজ্য ঘাটতি বা কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিটের সঙ্কট গভীর হয়েছে।
প্রণববাবু রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে অর্থ মন্ত্রকে এসেই প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর জমানায় বেশ কিছু নীতি বদলাতে শুরু করেছিলেন চিদম্বরম। বিশেষত ভোডাফোন-চুক্তিতে কর বসানো ও কর ফাঁকি প্রতিরোধ আইনের মতো যে সিদ্ধান্তে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে নেতিবাচক বার্তা যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল, সেই সব সিদ্ধান্ত হিমঘরে পাঠানোর কাজ শুরু হয়। চিদম্বরমের উপদেষ্টারাও প্রণবের জমানার সিদ্ধান্তগুলি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন।
আজ গ্রেটার নয়ডায় এডিবি-র বার্ষিক সম্মেলনের আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের সামনে মুখ খুললেন চিদম্বরম নিজেই। বলেছেন, গত অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার যে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে, তার জন্য আন্তর্জাতিক কারণের পাশাপাশি ঘরোয়া কারণও দায়ী। এক বারের জন্য প্রণববাবুর নাম না করলেও জানিয়েছেন, ২০০৮ সালের আন্তর্জাতিক মন্দা থেকে দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করতে যে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তার জন্যই আজ নতুন করে সমস্যা তৈরি হয়েছে। প্রণববাবুর আমলে বিশ্ব জোড়া মন্দার পরিস্থিতিতে অর্থনীতিকে বাঁচাতে বেশ কিছু উৎসাহবর্ধক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। উৎপাদন ও আমদানি শুল্কের হার কমানো হয়। পরিকল্পনা খাতে সরকারি খরচও বাড়ানো হয়। তিন দফায় এই ‘ফিসক্যাল স্টিমুলাস’ ঘোষণা করেছিলেন প্রণব। |
 |
এডিবি-র মঞ্চে পি চিদম্বরম। ছবি: পিটিআই |
আজ চিদম্বরম বলেন, “ওই সব ব্যবস্থার ফলে কেনাকাটার পরিমাণ ৮ শতাংশের বেশি হারে বেড়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ফল হয়ে দেখা দিয়েছে চড়া হারের অনড় মূল্যবৃদ্ধি। যার জন্যই রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে কড়া সুদ নীতি নিতে হয়েছে। তার ফলে কেনাকাটার চাহিদা কমেছে। সুদের হার বেশি হওয়ায় ২০১১-’১২ থেকে শিল্পে বিনিয়োগও ধাক্কা খেয়েছে। বৃদ্ধি কমে যাওয়ার সরকারের জনমুখী প্রকল্পে ব্যয়ের তুলনায় রাজস্ব আয় বাড়েনি। তার ফলে রাজকোষ ঘাটতি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি সঞ্চয় কমে যাওয়ায় বেড়েছে কারেন্ট অ্যকাউন্ট ঘাটতির হার।” চিদম্বরমের বক্তৃতার পরে এডিবি-র সম্মেলনে উপস্থিত অর্থ মন্ত্রক, বণিকসভা ও বিদেশি প্রতিনিধিরা সকলেই মনে করছেন, বর্তমান অর্থমন্ত্রী আসলে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর জমানার সবথেকে বড় সিদ্ধান্তকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, সেই সঙ্কটে তিনিই যে ফের হাল ধরেছেন, তা-ও বুঝিয়েছেন তিনি। চিদম্বরমের দাবি, “মন্দা কাটাতে এবং ঘাটতিতে লাগাম পড়াতে গত কয়েক মাসে কার্যকর পদক্ষেপ করা হয়েছে। তার ফলও মিলতে শুরু করেছে।”
অর্থ মন্ত্রকের সকলেই অবশ্য চিদম্বরমের সঙ্গে একমত নন। নর্থ ব্লকের অনেকেরই যুক্তি, প্রণববাবুর জমানায় ওই ‘ফিসক্যাল স্টিমুলাস’-এর জোরেই বিশ্বব্যাপী মন্দার গ্রাস থেকে নিজেকে অনেকটা বাঁচাতে পেরেছিল ভারত। বিশেষজ্ঞরা সে কথা বহু বার স্বীকারও করেছেন। কিছু দিন আগেই প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান সি রঙ্গরাজন যে আর্থিক পর্যালোচনা রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন, তাতেও এ কথাই বলা হয়েছে। রঙ্গরাজনের রিপোর্টে স্পষ্ট বলা হয়েছে, আশাতীত দ্রুততার সঙ্গে মন্দা কাটিয়ে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
শুধু আন্তর্জাতিক মন্দা নয়, ২০০৯-এর গ্রীষ্মে সবথেকে ভয়ঙ্কর খরা দেখা দিয়েছিল। সে সময় ৬ শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধিও আশা করা হয়নি। কিন্তু পরে দেখা যায়, ২০০৯-’১০-এ বৃদ্ধির হার ৮.৬ শতাংশ ছুঁয়েছিল। এমনকী পরের বছরও বৃদ্ধির হার প্রত্যাশার তুলনায় অনেক উপরে গিয়ে ৯.৩ শতাংশে পৌঁছেছিল। অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “ওই সময়ের প্রেক্ষিতে প্রণববাবু ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন।” |
|
|
 |
|
|