|
|
|
|
স্বল্প সঞ্চয় এজেন্টদের অঙ্গীকারপত্র চায় রাজ্য |
সুপ্রকাশ চক্রবর্তী • কলকাতা |
সারদা-কাণ্ড থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত এজেন্টদের অঙ্গীকারপত্র দিতে বলবে রাজ্যের অর্থ দফতর। লাইসেন্স নবীকরণের সময়ে সেই অঙ্গীকারপত্রে এজেন্টদের বলতে হবে, কোনও অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক নেই। পাশাপাশি, আরও বেশি সংখ্যায় মহিলা এজেন্ট নিয়োগের কথাও ভেবেছে রাজ্য সরকার।
অর্থ দফতরের এক মুখপাত্র শুক্রবার জানান, খাতায়-কলমে রাজ্যে ত্রিশ হাজারের মতো স্বল্প সঞ্চয় এজেন্ট রয়েছেন। কিন্তু এঁদের মধ্যে কত জন এখনও আমানত সংগ্রহের কাজ করেন, তা নিয়ে সরকারি মহলেই সন্দেহ রয়েছে। ওই মুখপাত্রের কথায়, বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির দেওয়া চড়া কমিশনের মোহে ডাকঘর স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের এজেন্টদের একাংশ নিজেদের কাজ প্রায় শিকেয় তুলে দিয়েছেন। এমন বেশ কিছু অভিযোগ ইতিমধ্যেই পেয়েছে সরকার।
স্বল্প সঞ্চয়ের পদস্থ আধিকারিকদের অনেকেরই অভিজ্ঞতা বলছে, বিভিন্ন বৈঠকে এজেন্টরা তাঁদের কাছে সরাসরি জানতে চেয়েছেন যে, অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির অনেক বেশি কমিশনের প্রস্তাব পেয়ে তাঁদের কী করা উচিত? জবাবে কর্তারা তাঁদের বুঝিয়েছেন, বেশি কমিশন দেওয়া অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি আমানত সংগ্রহের আড়ালে আসলে কী করে, সারদার ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। তাই এজেন্টদের বলা হচ্ছে, বেশি লোভ করলে সাময়িক লাভ হলেও আখেরে ক্ষতিই হয়। স্বল্প সঞ্চয়ের এজেন্টরা এখন ‘ঠেকে শিখে’ তা বুঝতেও শুরু করেছেন বলে কর্তাদের দাবি।
তবে সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে আগামী ৮ মে মহাকরণের রোটান্ডায় সমস্ত জেলার স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত উপ-অধিকর্তা ও সঞ্চয় আধিকারিকদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন রাজ্যের স্বল্প সঞ্চয় অধিকর্তা মোবাশ্বের আলি বৈদ্য। ওই বৈঠক থেকে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে লগ্নি করার জন্য গরিব ও নিম্নবিত্ত মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রচার চালানোর নির্দেশ দেওয়া হবে। প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় অন্তত এক জন স্বল্প সঞ্চয় এজেন্ট যাতে সেই প্রচার চালান, তা সুনিশ্চিত করতে বলা হবে আধিকারিকদের।
কী ভাবে প্রচার করা হবে?
স্বল্প সঞ্চয় অধিকর্তা জানান, ভোটার তালিকা ধরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বল্প সঞ্চয়ের পক্ষে সওয়াল করতে হবে এজেন্টদেরই। তাঁর মত, “স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে যত এজেন্ট রয়েছেন, তাঁরা সক্রিয় হলেই অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির দৌরাত্ম্য কমতে বাধ্য। কারণ, স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে অত্যন্ত সামান্য টাকায় সেভিংস ব্যাঙ্ক, রেকারিং ডিপোজিট আ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ রয়েছে নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের। কিন্তু সে সম্পর্কে সকলে অবহিত নন।”
পাশাপাশি, সর্ষের ভিতরের ভূত তাড়াতে চলবে ঝাড়াই-বাছাইয়ের কাজও। কী ভাবে?
সরকারি নিয়মে প্রতি তিন বছর অন্তর স্বল্প সঞ্চয় এজেন্টদের লাইসেন্স নবীকরণ করতে হয়। ঠিক হয়েছে, এ বার লাইসেন্স নবীকরণের সময় এজেন্টদের কাছে থেকে ওই অঙ্গীকারপত্র আদায় করা হবে। পর্যায়ক্রমে সেই অঙ্গীকারপত্র আদায় করা হবে সব এজেন্টের কাছ থেকেই। তার পরেও কোনও এজেন্ট সম্পর্কে অভিযোগ এলে প্রথমে তাঁকে কারণ দর্শাতে বলা হবে। সন্তোষজনক জবাব না-মিললে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে কেবলমাত্র মহিলা এজেন্টদের জন্য কোনও কোনও ক্ষেত্রে যে বাড়তি কমিশনের সংস্থান রয়েছে, তার সুযোগও পুরোমাত্রায় নিতে চাইছে সরকার। তাই আরও বেশি সংখ্যায় মহিলা এজেন্ট নিয়োগের কথা ভাবা হচ্ছে। এখন থেকে নতুন এজেন্ট নিয়োগের সময় লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি মৌখিক পরীক্ষাতেও গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্রার্থী এই কাজে আদৌ আগ্রহী, নাকি অন্য কোনও সুযোগ পেলে তিনি স্বল্প সঞ্চয় এজেন্টের কাজ ছেড়ে চলে যাবেন, মৌখিক পরীক্ষার সময়েই তা বুঝে নেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। |
|
|
|
|
|