গণবিবাহের বাসর বসল স্কুলভবনে
শিক্ষা ‘পূর্ণিমার চাঁদ’, তাই বিয়ে দিল পঞ্চায়েত
পাঁচ দুঃস্থ অনাথ মেয়ের গণবিবাহ দিল নলহাটির বারা ১ পঞ্চায়েত। ওই পাঁচ মেয়ের কেউ পরিচারিকার কাজ করে মানুষ হয়েছেন, কেউ বা ছিলেন অন্যের বাড়ির পালিতাকন্যা। মূলত ওই পঞ্চায়েতের প্রধানের উদ্যোগে পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল ও সাধারণ মানুষের আর্থিক সাহায্য নিয়ে শুক্রবার ওই গণবিবাহের আয়োজন করা হয়েছিল। বিয়ের এই আয়োজনে খুশি গ্রামবাসী থেকে সরকারি আধিকারিকেরাও। নলহাটি ২ ব্লকের বিডিও সন্দীপ ভট্টাচার্য বলেন, “প্রধানের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। অনাথ মেয়েদের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি সমাজের উপকার করেছেন।”
যদিও প্রধানের এই উগ্যোগ নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছে। প্রথমত, ওই পাঁচকন্যার প্রত্যেকেই স্কুলছুট। কেউ পঞ্চম কেউ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তারপরে তাঁদের সামনে আর পড়াশোনা করার সুযোগ আসেনি। শিক্ষা অর্জনের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্ষেত্রে তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি কেউই। দ্বিতীয়ত, পঞ্চায়েত প্রধানের স্কুলের চিঠি দেখিয়ে ওই মেয়েদের প্রত্যকেই সাবালক বলে দাবি করলেও বাস্তবে তাঁদের কথাবার্তায় ও শারীরিক আচরণে অপ্রাপ্তবয়স্কের ছাপ ছিল স্পষ্ট। তৃতীয়ত, স্কুলের দিনেই স্কুল ভবন ব্যবহার করা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। ওই পাঁচ অনাথ মেয়ের শিক্ষার সম্পূর্ণ করার ব্যবস্থা না করে বিয়ে দিয়ে দেওয়াটা কতটা ঠিক হল তা নিয়েও তর্ক তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, পঞ্চায়েতের বিশেষ তহবিলের টাকা ওই মেয়েদের পড়াশোনার কাজেও তো খরচ করা যেত। তা না করে কেন বিয়েতে খরচ করা হল?
পঞ্চায়েতের প্রধান সৈয়দ শাহ এহসান আলি-র অবশ্য যুক্তি, “যাদের একটা দিনের খাবারেরও কোনও সংস্থান নেই। তাঁদের পূর্ণিমার চাঁদ দেখাতে গেলে অসুবিধা আছে।” অন্য দিকে, বারা টারাহাট পাড়ার বাসিন্দা, পেশায় প্রাথমিক স্কুলশিক্ষক মহম্মদ জাকির হোসেন বলেন, “বিয়ে হওয়ার আগেই এমন অনাথ মেয়েদের অনেকেই বিক্রি হয়ে পাচার হয়ে যায়। সামাজিক সুরক্ষার দিক থেকে প্রধানের এই কাজকে স্বাগত জানাচ্ছি।”

নব দম্পতিদের সঙ্গে পঞ্চায়েত প্রধান সৈয়দ শাহ এহসান আলি। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, সর্ব শিক্ষা মিশন শুরু হওয়ার এক দশক পেরিয়ে গেলেও গ্রামবাসী থেকে পঞ্চায়েত প্রত্যেকেই এখনও মনে করছেন বিয়ে দিয়ে দেওয়াটাই একমাত্র ‘সামাজিক নিরাপত্তা’। সরকারের হাজারও চেষ্টাতেও অনেকের মন থেকেই সেই পাথুরে ধারণাকে এখনও বদলানো যায়নি। এমনকী যাঁদের বিয়ে হল, সেই রেশমি খাতুন, বাবরুন্নেশা খাতুন, মুসফেরা খাতুন, খাতেমা খাতুন, রঙ্গিলা খাতুন-রাও মনে করছে “আমাদের কখনও বিয়ে হবে না বলেই মনে করতাম। আজ বুঝতে পারছি, সেই ধারণা কতটা ভুল ছিল। আমরা ভীষণ খুশি।” গ্রামের বাসিন্দা সানাউল হকও বলছেন, “বর্তমান সমাজে গরিব মানুষের পক্ষে মেয়েদের বিয়ে দেওয়াটা কষ্টসাধ্য। তার উপরে এরা অনাথ। প্রধান এ ভাবে পাশে না দাঁড়ালে তাঁদের ভবিষ্যৎ খুব একটা সন্তোষজনক হত বলে মনে হয় না।”
এ দিন অবশ্য সকাল থেকেই এলাকার প্রাথমিক স্কুল চত্বর ছিল সরগরম। সেখানে রীতিমতো প্যান্ডেল খাটিয়ে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। স্কুল ছুটির পরে স্কুল ভবন কার্যত পাত্রপাত্রী ও নিমন্ত্রিতদের দখলে চলে গেল। ভবনের দোতলা ছিল পাত্রীপক্ষের। পাত্রপক্ষ ছিল একতলাতেই। অতিথিদের আপ্যায়ন করে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করলেন খোদ পঞ্চায়েত প্রধান। এহসানবাবুর কথায়, “ওই মেয়েদের কী ভাবে বিয়ে হবে তা নিয়ে অনেকেই চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। তাই এলাকার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এই দুঃস্থ অনাথ মেয়েদের বিয়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছি।” একই ভাবে গত বছরই তাঁরা চার অনাথের বিয়ে দিয়েছিলেন বলেও জানিয়েছেন। বিয়ের আসরে রেশমি খাতুনের পালিতা মা সুফিয়া বিবি বললেন, “বহু কষ্ট করে নিজের মেয়ের মতো রেশমিকে আমরা মানুষ করেছি। কিন্তু বিয়েটা কী করে হবে তাই নিয়েই খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। সেই চিন্তা এ বারে দূর হল।”
শুধু বিয়ে দিয়েই কি দায়িত্ব শেষ হয়ে গেল?
এহেসানবাবু বলেন, “তা কেন হবে! ভবিষ্যতের কথা ভেবে প্রত্যেককে ‘গীতাঞ্জলি’ প্রকল্পের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। এমনকী যাঁদের ঘর তৈরির জন্য জায়গা নেই, তাঁদের জায়গা কিনেও ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে।” কংগ্রেস প্রধানের এই উদ্যোগে সামিল ছিলেন পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেত্রী শীলা বিবির স্বামী তথা এলাকার সিপিএম নেতা মহম্মদ জাকির হোসেনও। তিনি বলছেন, “সহায় সম্বলহীন মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হচ্ছে এর থেকে ভাল আর কী হতে পারে? তাই এমন মহৎ কাজে হাত না বাড়িয়ে থাকতে পারিনি।” এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার বর্ষিয়ান সিপিএম নেতা গোরাচাঁদ দত্ত এবং নলহাটি ২ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য মসিউর রহমানও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.