সব হারিয়ে বইয়ের দোকানে কাজই এখন সম্বল দেবব্রতর |
কেউ স্বেচ্ছাবসর নিয়ে লগ্নি করেছেন সমস্ত টাকা, আবার কেউ প্রতি মাসে একটু একটু করে জমিয়ে রেকারিং ডিপোজিট করেছেন, কিন্তু লগ্নি সংস্থা পথে বসায় কপালে হাত সকলেরই। কারও অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসা, কারও মেয়ের পড়াশোনা, বিয়ে, সারদা গোষ্ঠীর ভরাডুবিতে রাজ্য জুড়ে আরও হাজার হাজার মানুষের মতো বিপাকে পড়েছেন এঁরা সকলেই।
কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদীদের হাতে গুলি খেয়ে স্বেচ্ছাবসর নিতে বাধ্য হয়েছিলেন এক বিএসএফ জওয়ান। এজেন্টের পরামর্শে অবসরকালে পাওয়া সমস্ত অর্থ লগ্নি করেছিলেন সারদা গোষ্ঠীতে। এখন সব হারিয়ে পাড়ার বইয়ের দোকানে কাজ নিয়েছেন দুর্গাপুরের ঝান্ডাবাগের গোঁসাইডাঙার বাসিন্দা দেবব্রত মুখোপাধ্যায়। মেয়ে শুভাঙ্গী জন্ম থেকেই নার্ভের জটিল রোগে আক্রান্ত। তাঁর চিকিৎসা, পড়াশোনার খরচ কীভাবে জোগাবেন জানেন না দেবব্রতবাবু। তিনি বলেন, “এজেন্টের কথায় বেশি সুদের লোভে ব্যাঙ্কে না রেখে সারদা গোষ্ঠীতে আমার সব অর্থ লগ্নির সিদ্ধান্ত নিই। ধাপে ধাপে ১১ জুলাই ২০০৯ থেকে ২৩ অগস্ট ২০১২ পর্যন্ত প্রায় ১১ লক্ষ টাকা জমা দিই। এজেন্ট সুব্রত চক্রবর্তী কিছু টাকা এমআইএস খাতে ও কিছু ফিক্সড ডিপোজিট হিসাবে লগ্নি করেন।” এ থেকে প্রতি মাসে সাড়ে ১০ হাজার করে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টাকাও পেয়েছেন। মার্চে কিছু টাকা কম পান, আর এপ্রিলে তো বন্ধই হয়ে যায়। তারপরে খোঁজ করেও এজেন্টের দেখা পাননি তাঁরা। এখন বইয়ের দোকানে কাজ করে মাসে দু’হাজার টাকাই ভরসা তাঁদের।
দেবব্রতবাবুর মতোই সারদায় লগ্নি করে বিপাকে পড়েছেন বন্ধ হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা, ‘মাইনিং অ্যান্ড অ্যালায়েড মেশিনারি কর্পোরেশন’ (এমএএমসি) থেকে স্বেচ্ছাবসর নেওয়া দুই প্রাক্তন কর্মীও। এমএএমসি আবাসনেই থাকেন বিধানচন্দ্র রায়। ২০১০ সালে স্বেচ্ছাবসর নেওয়ার সময় প্রাপ্য অর্থ থেকে ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা এমআইএস খাতে ১৫ মাসের জন্য লগ্নি করেছিলেন সারদায়। বছর দু’য়েক সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু ২০১২ সালে ম্যাচিওর করা টাকা না তুলে নিয়ে নতুন করে আবার তা লগ্নি করেন তিনি। এখন হা হুতাশ করা ছাড়া আর উপায় নেই।
একই দশা দুর্গাপুরের সন্ধ্যা চক্রবর্তীর। তিনিও ১৫ মাসের জন্য এমআইএস খাতে আড়াই লক্ষ টাকা লগ্নি করেছিলেন। তিনি বলেন, “এখন হাত কামড়ে মরছি। কেন যে লোভে পড়ে ওদের কাছে রাখতে গেলাম!” বিধানবাবু এবং সন্ধ্যাদেবী-দু’জনেই নিউ টাউন শিপ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
বেনাচিতির এক মুদিখানা দোকানের কর্মচারী কাদা রোড এলাকার বাসিন্দা সঞ্জয়কুমার সিংহ প্রতি মাসে ১১২০ টাকা করে তিন বছরের রেকারিং ডিপোজিট করেছিলেন সারদা গোষ্ঠীতে। তিনি জানান, সামান্য রোজগার। তার মধ্যেও মাসে মাসে টাকা বাঁচিয়ে সঞ্চয় করেছিলেন। একমাত্র মেয়ে সোনিয়া ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। তার বিয়ে, পড়াশোনার কথা ভেবে টাকা জমাচ্ছিলেন তিনি। ১৯ এপ্রিল আমানত ফেরত পাওয়ার কথা ছিল তাঁর। ফের নতুন করে সেই অর্থ লগ্নি করার পরিকল্পনাও ছিল। কিন্তু এখন সঙ্গী শুধুই অসহায়তা। |