সংস্থার বাসে শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত ৩ কর্মীকে সাসপেন্ড করলেন উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে ওই বাসের চালক ও কন্ডাক্টরকেও শোকজ করা হয়। মঙ্গলবার কোচবিহারে সংস্থার ম্যানেজিং ডাইরেক্টর জয়দেব ঠাকুর সাংবাদিক বৈঠক করে এ কথা জানান। নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, সাসপেন্ড হওয়া কর্মীদের নাম প্রদীপ চক্রবর্তী বিশ্বজিত্ পাঠক ও উত্তম দে। তাদের মধ্যে প্রথম দুই জন নিগমের স্থায়ী কর্মী। প্রদীপবাবু চালক। তিনি কোচবিহার ডিভিশনে কর্মরত। বিশ্বজিত্ পাঠক শিলিগুড়ি ডিভিশনের কন্ডাক্টর। উত্তম দে সংস্থার ঠিকাদার নিযুক্ত কর্মী। সকলের বাড়িই কোচবিহারে।
গত রবিবার রাতে শিলিগুড়ি-কোচবিহারগামী এনবিএসটিসির চলন্ত বাসে ৩ জন এক মহিলার শ্লীলতাহানি করেন বলে ধূপগুড়ি থানায় অভিযোগ জমা পড়ে। মহিলার স্বামীকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনার পর নিগমের তরফেও এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়া হয়। তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতেই মঙ্গলবার তাঁদের সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেন নিগম কর্তৃপক্ষ। নিগমের পক্ষে জয়দেববাবু বলেছেন, “এনবিএসটিসি-তে এমন ঘটনা হয়নি। যাঁদের যাত্রী সুরক্ষায় যত্নবান হওয়ার কথা তাঁদের বিরুদ্ধেই এমন অভিযোগ ওঠায় আমরা মর্মাহত। বিষয়টি নিয়ে এক সদস্যের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সোমবার পেয়েছি। তা খতিয়ে দেখে তিন জনকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।” পাশাপাশি, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সংস্থার শৃঙ্খলাভঙ্গের বিভাগীয় তদন্ত শুরুর কথা জানিয়েছেন নিগমের এমডি। তিনি বলেন, “পুলিশের কাছে আমরা রিপোর্ট চেয়েছি। সেটা পেলে শৃঙ্খলাভঙ্গের ব্যাপারে বিভাগীয় তদন্ত হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আরও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিলিগুড়ি-কোচবিহারগামী বাসের চালক মিলন সূত্রধর ও কন্ডাক্টর ধীরেন্দ্রনাথ সাহাকে ঘটনার জেরে শোকজ করেছে নিগম। দুই কর্মীর ভূমিকা নিয়ে আধিকারিকদের কাছেও অভিযোগ রয়েছে। চালক ও কন্ডাক্টরকে এ দিন চিঠি দিয়ে ৩ দিনে শোকজ-এর উত্তর দিতে বলা হয়েছে।
নিগম সূত্রে খবর, এর পুনরাবৃত্তি এড়াতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সংস্থার ম্যানেজিং ডাইরেক্টর সব ডিভিশনাল ম্যানেজারকে চিঠি দিয়ে যাত্রী সুরক্ষায় যত্নবান হওয়ার জন্য বাস চালক ও কন্ডাক্টরদের নিয়ে বৈঠক করার নির্দেশ দিয়েছেন। ডিভিশনাল ম্যানেজারেরা কোনও ডিপোতে যেতে না পারলে সংশ্লিষ্ট ডিপো ইনচার্জরা গিয়ে ওই বৈঠক করবেন। প্রয়োজন হলে রাতের বাসে পুলিশ পাহারার বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে।
কর্মী সংগঠনগুলি সংস্থার সিদ্ধান্ত স্বাগত জানিয়েছে। ইনটাক অনুমোদিত ওয়ার্কার্স ইউনিয়নে বিভাগীয় সম্পাদক সুজিত সরকার বলেন, “রাজ আমলের ঐতিহ্যবাহী এই সংস্থার সুনাম নষ্টের ঘটনা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। কর্তৃপক্ষ কড়া ব্যবস্থা নিয়ে একদম ঠিক করেছেন।” সিটুর এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সম্পাদক জগতজ্যোতি দত্তের বক্তব্য, “সংস্থার তিন কর্মীকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত একেবারে সঠিক পদক্ষেপ।”
|