প্রশ্ন বিচারপতির |
|
ভিন্ রাজ্যের পুলিশ এলে
কেন্দ্রীয় বাহিনী কেন নয়
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
|
পঞ্চায়েত নির্বাচন করাতে রাজ্য সরকার যদি ভিন রাজ্যের কাছে সশস্ত্র পুলিশ চাইতে পারে, কেন্দ্রের কাছে বাহিনী চাইতে তাদের আপত্তিটা কীসের? রাজ্য নির্বাচন কমিশন বনাম রাজ্য সরকারের মামলার শুনানির সময় মঙ্গলবার এই প্রশ্ন তুললেন বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার।
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) বিমল চট্টোপাধ্যায় এ দিন আদালতে বিচারপতির প্রশ্নের কোনও জবাব দিতে পারেননি। তিনি বলেন, রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলার পরেই তিনি এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেন। এজি দাবি করেন, রাজ্য সরকার ঠিক সময়েই পঞ্চায়েত নির্বাচন করাতে আগ্রহী। ১০ জুনের মধ্যে ভোট না হলে সাংবিধানিক সঙ্কট দেখা দেবে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। এজি-র এই বক্তব্য শুনে বিচারপতি বলেন, এ জন্যই তো তিনি দু’পক্ষকে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তা হয়নি। তাই এখন হাইকোর্টের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া পথ নেই।
রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার যে অভিযোগ উঠছে, তা ঝেড়ে ফেলতেই এজি এ দিন আদালতে ১০ জুনের মধ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন করার আগ্রহ দেখিয়েছেন বলে ধারণা আইনজীবীদের একাংশের। এর আগে নির্বাচন কমিশন আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পরেই ৫ ও ৮ মে ভোট করতে চেয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল রাজ্য সরকার। নিজের সওয়ালের সময়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী সমরাদিত্য পালও জানান, ঠিক সময়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচন করার জন্য কমিশন আন্তরিক।
তবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানো ডিজি-র নোটে উল্লেখ করা ‘সিএপিএফ’ কথাটি নিয়েই এ দিন সওয়াল-জবাবের অধিকাংশ সময় ব্যয় করেন এজি। নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী সমরাদিত্য পালের বক্তব্য ছিল, সিএপিএফ-এর অর্থ ‘সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্স’ বা কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী। ডিজি যেখানে ওই বাহিনী চেয়েছেন, সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনীতে রাজ্য সরকারের আপত্তি কোথায়? সিএপিএফ বলতে ডিজি ঠিক কী বুঝিয়েছেন, তা অবশ্য এজি আদালতকে জানাতে পারেননি। তার প্রেক্ষাপটে আদালত ডিজি-র কাছে ওই কথাটির ব্যাখ্যা চেয়ে পাঠান।
অ্যাডভোকেট জেনারেল এ দিন আদালতে ডিজি-র তরফে সিএপিএফ কথাটির অর্থ ব্যাখ্যা করেন। এজি বলেন, রাজ্যে বর্তমানে জঙ্গল মহলে ৩৪ কোম্পানি সিএপিএফ রয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওই কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মনে করেন ডিজি। অর্থাৎ রাজ্যে মোতায়েন কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার করতে যে রাজ্য সরকারের আপত্তি নেই, তা এ দিন এজি-র ব্যাখ্যায় স্পষ্ট হল বলেই মনে করছেন আইনজীবীরা।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী-সহ মোট ১ লক্ষ ৭৮ হাজার নিরাপত্তা কর্মী লাগবে বলে জানিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। তারা চায়, প্রত্যেকটি বুথে অন্তত চার জন করে সশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনী থাকুক। এই সময় বিচারপতি জানতে চান, রাজ্য সরকার প্রতি বুথে কত জন করে উর্দিধারী পুলিশ রাখবে? এজি বিচারপতির এই প্রশ্নেরও জবাব দিতে পারেননি। তিনি বলেন, সরকারের কাছে জেনে তিনি এটাও জানাবেন।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের পাশাপাশি ১৩টি পুরসভার ভোট ঠিক সময়ে না হওয়া নিয়েও এ দিন সরব হয়েছে সিপিএম। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব বলেন, ১৩টি পুরসভার ভোটও সময় মতো করতে চাইছে না তৃণমূল সরকার। সময়ে পুরভোটের দাবি জানিয়ে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু রাজ্যের মুখ্যসচিবকে গত ২৬ এপ্রিল চিঠি দিয়েছিলেন।
রবীনবাবু জানান, পুরসচিব সোমবার আলিমুদ্দিনে ফোন করে জানিয়েছেন, ভোটের ব্যাপারে সরকার কিছু জানে না। বিমানবাবু যেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলেন। রবীনবাবুর অভিযোগ, “নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন করা নিয়ে রাজ্য সরকারের কোনও তাপ উত্তাপ নেই। কারণ, কোনও গণতান্ত্রিক সংস্থাতেই ভোট করতে চায় না তৃণমূল।”
|