কমিশন টাকা ফেরাতে পারবে কি, শুনানির আসরেই প্রশ্ন বিপন্নদের
সারদা গোষ্ঠীতে সাড়ে সাত লক্ষ টাকা রেখেছিলেন অন্ডালের বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক স্বপন চক্রবর্তী। খবরের কাগজ পড়ে জেনেছেন, টাকা উদ্ধারের জন্য তদন্ত কমিশন বসেছে কলকাতায়। তাই মেয়েকে নিয়ে মঙ্গলবার সাত সকালেই অন্ডাল থেকে পৌঁছে যান কাউন্সিল হাউস স্ট্রিটে। ওখানেই দফতর তদন্ত কমিশনের।
স্বপনবাবুর দুই মেয়ে আর এক ছেলে। ছোট মেয়ে পাঞ্চালী। কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার ডিগ্রি করছেন। তিনি বলেন, “আড়াই বছর আগে বাবা অবসর নিয়েছেন। অবসরকালীন ভাতা হাতে আসার পরে আমরা তার একটা অংশ ফিক্সড ডিপোজিট করার কথা ভেবেছিলাম। সেটা জানতে পেরে বাবারই এক ছাত্র ওই টাকা সারদায় রাখার কথা বলেছিল।” কমিশনের দফতরে বসে বাবা-মেয়ের চোখ বারবার জলে ভরে গিয়েছে। পাঞ্চালীর কথায়, “সরকারের নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে ওই সংস্থার অনেকের দহরম-মহরমের ছবি দেখেছি। এজেন্ট ওয়েবসাইট দেখিয়ে কোম্পানি সম্পর্কে ভাল ভাল কথা বলেছিল। এখন বুঝছি, মস্ত বড় ভুল হয়ে গিয়েছে।” স্বপনবাবুর প্রশ্ন, “কমিশন কি টাকা ফিরিয়ে দিতে পারবে?”
একই প্রশ্ন হাওড়ার মল্লিক ফটকের বাসিন্দা ৫৫ বছরের সন্ধ্যা বাহাদুরের। বাড়িতে একাই থাকেন। এখানে-ওখানে কাজ করে কোনও রকমে সংসার চালান। সোমবার এক বার কমিশনে এসে অভিযোগপত্র জমা দিয়ে গিয়েছেন। এ দিন শুনানির আশায় বেলা ১১টার মধ্যেই হাজির হন কমিশনের দফতরে।
কী ভাবে সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ হল?
সন্ধ্যাদেবী বলেন, “এজেন্ট আমার বোনের পরিচিত। বোনও তার মাধ্যমে সারদায় টাকা রেখেছিল। তা দেখেই উৎসাহিত হই।” মাসে মাসে ২০০ টাকা জমিয়ে ১০ হাজার টাকা হয়েছিল তাঁর। পুরো টাকাটা ১৫ মাসের জন্য ফিক্সড ডিপোজিট করেন সারদায়। এজেন্ট তাঁকে বলেছিলেন, মাত্র দেড় বছরে আড়াই হাজার টাকা সুদ পাওয়া যাবে। সন্ধ্যাদেবীর উপলব্ধি, “লোভই আমার কাল হল।”

লোভই আমার কাল হল।
টাকা মিলবে তো?

এক সময় পিয়ারলেস সংস্থায় কাজ করতেন বেলেঘাটার দিলীপ মুখোপাধ্যায়। আপাতত বেকার। সারদার লগ্নির কারবার তাঁকেও আকৃষ্ট করেছিল। বললেন, “ওদের প্রতিটি প্রকল্পই আকর্ষক ছিল। তাই আমানতকারী জোগাড় করতে কোনও অসুবিধা হয়নি। বছর দুয়েকের মধ্যেই বেশ কয়েক লাখ টাকার ব্যবসাও করেছি।” আপাতত মাথা বাঁচিয়ে পাড়ায় ঘুরতে হচ্ছে তাঁকে। বললেন, “এজেন্টদের জন্যই কমিশনে এসেছি। কমিশনের যাঁকে দেখছেন, প্রশ্ন করছেন, “দাদা, টাকা মিলবে তো?”
সোমবার পর্যন্ত এ-রকম ৩২ জন কমিশনের কাছে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান, প্রাক্তন বিচারপতি শ্যামলকুমার সেন জানান, মঙ্গলবার ৩২ জনেরই শুনানি শেষ হয়েছে।
কী কী প্রশ্ন ছিল শুনানিতে?
শুনানির পরে বেরিয়ে এসে সঞ্জীব সরকার নামে বারাসতের এক এজেন্ট বলেন, “কার পরামর্শে, কেন ওই সংস্থায় টাকা রেখেছি, কেন সরকারি ব্যাঙ্কে যাইনি এ-সব জানতে চাওয়া হয়। নিজে কত টাকা রেখেছি, আমানতকারীদের কাছ থেকে কত টাকা তুলেছি, জানতে চাওয়া হয়েছে তা-ও।”
এ দিন নতুন করে আরও শ’দেড়েক অভিযোগপত্র জমা পড়েছে কমিশনে। কলকাতায় কমিশনের অফিস ছাড়া এখনও অবশ্য রাজ্যের অন্য কোথাও অভিযোগপত্র জমা নেওয়ার কাজ শুরু হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, সারদা গোষ্ঠীর এজেন্টের সংখ্যা প্রায় দু’লক্ষ ৮৩ হাজার। স্বভাবতই আমানতকারীর সংখ্যা এর অনেক গুণ বেশি। এত লোকের কাছ থেকে অভিযোগপত্র জমা নেওয়ার কাজটা কী ভাবে হবে, তা নিয়ে কমিশনের সদস্যদেরও চিন্তা বাড়ছে। কমিশনের তরফে কী করে তাঁদের সঙ্গে কথা বলা হবে, অনেক আমানতকারী এবং এজেন্ট তা বুঝতে পারছেন না। মাত্র ছ’মাসের মধ্যে এই কাজ কী করে করা সম্ভব, তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে সংশয় তৈরি হয়েছে।
অভিযোগকারী ছাড়াও এ দিন কমিশনের দফতরে যান রাহুল সিংহ-সহ বিজেপি নেতারা। রাজ্য সরকারের হেফাজতে জেরার সময় সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের প্রাণসংশয় হতে পারে বলে কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যামল সেনের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তাঁরা।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.