এসপিকে রিপোর্ট তলব আইজি’র |
মানবাধিকার কমিশনে শৈলেন্দ্রর পরিজনেরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
পুলিশ-প্রশাসনের গাফিলতিতেই শৈলেন্দ্রনাথ রায়ের মৃত্যু হয়েছে, এই অভিযোগে মানবাধিকার কমিশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁর পরিবারের সদস্য-সদস্যারা। সোমবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব এবং শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য শৈলেন্দ্রনাথবাবুর দেশবন্ধুপাড়ার বাড়িতে যান। তাঁদের সামনেই ক্ষোভ উগরে দেন পরিবারের সদস্যরা। কেন মৃত্যু হল শৈলেন্দ্রনাথের? সে প্রশ্ন তুলে তদন্তের দাবি তোলেন তাঁরা। সেখানেই তাঁরা মানবাধিকার কমিশনে যাবেন বলেও জানিয়ে দেন। রবিবার সেবকে শূন্যে ঝুলে তিস্তা পেরোনোর সময় মৃত্যু হয় শৈলেন্দ্রনাথবাবুর।
সোমবার এই ঘটনা নিয়ে দার্জিলিং জেলা পুলিশ সুপারের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠান রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের আইজি অনুজ শর্মা। রবিবার সেবকে শূন্যে ঝুলে তিস্তার উপর দিয়ে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে যাওয়ার সময় মৃত্যু হয় শৈলেন্দ্রনাথবাবুর। ওই ঘটনার পর নিরাপত্তা নিয়ে গাফিলতির অভিযোগ উঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। আইজি বলেন, “ওই ঘটনার রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে। তা দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।” |
শৈলেন্দ্রনাথের বাড়িতে গৌতম দেব। —নিজস্ব চিত্র। |
শৈলেনবাবুর বাড়ির লোকজনদের অনেকেরই ক্ষোভ, ঘটনার পরে পুলিশ আধিকারিকরা পরিবারের পাশে থাকার কথা জানান। অথচ ২৪ ঘণ্টা পরে শৈলেন্দ্রনাথবাবুর বাড়িতে কোনও পুলিশ কর্তা পা দেননি বলে অভিযোগ। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন শুধু নন, অন্য কোনও পুলিশ আধিকারিক, এমনকী যে সহকারি পুলিশ কমিশনার গণেশ বিশ্বাসের গাড়ি চালাতেন তিনি, সেই এসিপিকেও ওই বাড়িতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “শৈলেন্দ্রনাথবাবুর মৃত্যু দুঃখজনক। তাঁর পরিবারের পাশে আমরা রয়েছি। শৈলেন্দ্রনাথবাবুর চাকরি এতদিনেও কেন স্থায়ী হল না সে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। তাঁর দুই ছেলে অস্থায়ী ভাবে পুলিশে চাকরি করেন বলে শুনেছি। মেয়েও রয়েছে। সবার কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। সব খতিয়ে দেখা হবে।” বিধায়ক রুদ্রনাথবাবু জানান, ওই দিন পুলিশের আরও সজাগ থাকা প্রয়োজন ছিল। তিনি বলেন, “শৈলেন্দ্রনাথবাবু কয়েকদিন আগে আমার কাছে এসে তাঁর অভিযানের কথা জানান। সে সময় আমি নিরাপত্তাব্যবস্থা ঠিক রাখার ব্যপারে পরামর্শ দিই। তার পরে এই ঘটনা শুনে হতবাক হয়েছি। পুলিশের আরও সজাগ থাকা প্রয়োজন ছিল। এই ব্যপারে সঠিক পদক্ষেপ করতে পুলিশ কর্তাদের কাছে আবেদন জানাব।” তিনি শৈলেন্দ্রনাথবাবুর স্ত্রীর হাতে পাঁচ হাজার টাকা তুলে দেন।
প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য অশোক ভট্টাচার্য পুলিশের ওই ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “মন্ত্রী-বিধায়ক গেলেন কি না সেটা বড় কথা নয়। একজন পুলিশ কর্মীর মৃত্যু হল আর কোনও পুলিশ অফিসার যাবেন না এটা ভাবা যায় না। সমবেদনা জানাতেও কেউ যায়নি বলে শুনেছি। এটা দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ। এই ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হওয়া উচিত। কারণ, এরকম শৈলেন্দ্রনাথের জন্ম বার বার হবে না।”
এ দিন শৈলেন্দ্রনাথবাবুর দুই ছেলে সুরজিত্, বিশ্বজিত্ এবং শ্যালক গৌতম কর্মকার জানান, শৈলেন্দ্রনাথবাবু সমস্ত পুলিশ কর্তাকে অভিযানের কথা জানিয়ে আমন্ত্রণ করেছিলেন। এ ছাড়া তিনি ওই কথা জানিয়ে ছুটি নিয়েছিলেন। এর পরেও কেন সেখানে নিরাপত্তার নূন্যতম ব্যবস্থা করা হল না? চিকিত্সক, অ্যাম্বুলেন্স, দমকল কেন রাখা হল না? নিচে কেন একটি জালের ব্যবস্থা করা হল না? গৌতমবাবু বলেন, “পুলিশ কর্তারা বলছেন অভিযানের কথা জানতেন না। এটা ঠিক কথা নয়। সবাইকে জানিয়েই তা করছিলেন শৈলেন্দ্রনাথবাবু। গোটা শিলিগুড়িতে পোস্টার, হোর্ডিংয়ে ভরে গিয়েছিল। পুলিশের উচিত ছিল নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া। আমরা মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ জানাব। থানাতেও এফআইআর করব।” তাঁর দুই ছেলে বলেন, “এই মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না। আমরা তদন্ত চাই।”
শৈলেন্দ্রনাথবাবুর স্ত্রী সরস্বতীদেবী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমি বার বার বলেছিলাম সব ঠিক আছে তো? কোনও ভয় নেই তো? তিনি বলেছিলেন পুলিসের সব অফিসাররা থাকবেন, ভয়ের ব্যপার নেই। এখন শুনছি কিছু ঠিক ছিল না। পুলিশের কোনও অফিসারও আমাদের বাড়িতে আসলেন না। শুধু, তাঁর কিছু সহকর্মী, বন্ধু এসে কিছু টাকা দিয়ে যায়।”
দার্জিলিংয়ের পুলিশ অফিসার কুণাল অগ্রবাল জানান, ওই ঘটনার তদন্ত করা হবে। তিনি বলেন, “বিষয়টি নিয়ে দার্জিলিং জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলেছি। একটি তদন্ত করা হবে। তার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোন পরিস্থিতিতে কি হল তা জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” শিলিগুড়ির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ওজি পাল বলেন, “শৈলেন্দ্রনাথবাবু নিজস্ব উদ্যোগেই ওই অভিযান করছিলেন। সেখানে শিলিগুড়ি পুলিশের কিছু করণীয় ছিল না।”
|