ভুঁইফোঁড়েদের দাপট কমাতে উদ্যোগী সৌরভ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • জলপাইগুড়ি |
প্রত্যন্ত এলাকার অনেকের কাছেই ব্যাঙ্কে যাতায়াত ঝকমারির ব্যাপার! জলপাইগুড়ি সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী তা-ই মনে করেন। সে জন্য সোমবার ব্যাঙ্কের দায়িত্বগ্রহণ করেই সৌরভবাবু বলেন, “প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দাদের আর ব্যাঙ্কে ছোটাছুটি করতে হবে না। এখন থেকে মাঝেমধ্যে আগাম ঘোষণা করে ব্যাঙ্কই হাজির হবে প্রত্যন্ত এলাকায়।” সব ঠিকঠাক থাকলে মে মাস থেকেই জলপাইগুড়ির কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের পরিষেবা গ্রামাঞ্চলে পৌঁছতে ধারাবাহিক শিবির চালু করা হবে। পাশাপাশি, বাড়ি-বাড়ি গিয়ে আমানত সংগ্রহের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগের পরিকল্পনাও নিয়েছেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। তাঁদের যুক্তি, সুদের হার ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলির চেয়ে কম হলেও নিশ্চয়তা ষোল আনা রয়েছে। সে জন্য সমবায় ব্যাঙ্কে আমানতের দিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের উৎসাহ দিতে হবে।”
ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা যায়, জলপাইগুড়ি কোচবিহার ও দার্জিলিং জেলার ১৭টি শাখাতেই এজেন্ট নিয়োগ করা হবে। ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলি সম্পর্কে গ্রামের বাসিন্দাদের সর্তক করতে গ্রামে গিয়ে সচেতনতা শিবিরও করবে তাঁরা। সেই শিবিরে সমবায়ে আমানত রাখলে কী হারে সুদ পাওয়া যাবে, আমানতের ওপর ভিত্তি করে কতটা ঋণ পাওয়া যাবে সে বিষয়েও জানানো হবে।
প্রায় তিন দশক বাদে ওই ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতি বামেদের হাতছাড়া হয়। জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব ব্যাঙ্কের সমিতি নির্বাচনে বামেদের আমলের দুর্নীতির অভিযোগকে হাতিয়ার করেন। প্রদেশ তৃণমূল নেতা সৌরভবাবু শুধু নন, তৃণমূলের জলপাইগুড়ির আইনজীবী সেলের নেতা গৌতম দাস ওই সমিতির ভোটে জেতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন। ভোটে জয়ের পরে এদিন ব্যাঙ্কের নতুন পরিচালন সমিতির বৈঠকে সর্বসম্মত ভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে সৌরভবাবু। তিনি বলেন, “ভুঁইফোঁড় সংস্থায় টাকা লগ্নি করে অনেকে সর্বস্ব খোয়াতে বসেছেন। প্রতিদিন তাঁরা প্রশাসন-পুলিশের কাছে টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় হত্যে দিচ্ছেন। ভবিষ্যতে যাতে এই পরিস্থিতি এড়ানো যায়, সে কারণেই সমবায় ব্যাঙ্ক এদিন বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাধারণ নিম্ন আয়ের ব্যাক্তিদের সমবায় ব্যাঙ্ককে টেনে আনাই প্রথম লক্ষ্য।”
ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলির মোকাবিলা করতে এই ধরনের উদ্যোগ রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্কগুলির মধ্যে জলপাইগুড়িই প্রথম বলে কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে। কৃষিজীবীদের কাছে ব্যাঙ্ককে জনপ্রিয় করতে গ্রামে গিয়ে করা শিবিরে কৃষি ঋণ পাওয়ার নিয়মাবলীও জানাবে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি, স্বল্প আয়ের ব্যক্তিরা যে জমা প্রকল্পে টাকা রাখবেন তার সুদের হার কিছুটা বাড়ানো যায় কি না তাও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। বছরে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার লেনদেন হয় জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে। আগামী তিন বছরে কৃষকদের ৯০ কোটি টাকা কৃষি ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ. চলতি মাসেই ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির নির্বাচনে নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পায় তৃণমূল। সোমবার নতুন পরিচালন সমিতি গঠন হয়েছে। ব্যাঙ্কের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন কমল রায়। সৌরভ বলেন, “আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। ভুইফোঁড় সংস্থাগুলির থেকে মানুষকে সমবায়ের সুরক্ষিত ক্ষেত্রে নিয়ে আসতে চাইছি। ওই সব সংস্থার মত না হলেও কম আয়ের ব্যক্তির সঞ্চয় প্রকল্পে সুদের হার কতটা বাড়ানো যায় তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” |