ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার দৌরাত্ম্য ঠেকানোর লক্ষ্যে ২০০৯ সালে পাশ হওয়া বিল কেন ফেরত নেওয়া হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা চেয়ে সুর চড়াল বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস। বিধানসভায় অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র আজ, মঙ্গলবার নতুন যে বিলটি (‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রোটেকশন অফ ইন্টারেস্ট অফ ডিপোজিটর্স ইন ফিনান্সিয়াল এস্টাব্লিশমেন্টস বিল’, ২০১৩) পেশ করবেন, সেখানে উল্লিখিত একটি বাক্যও নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে।
নতুন বিলটির উদ্দেশ্য ও কারণ সংক্রান্ত বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, ২০০৯ সালের বিলটি প্রত্যাহার করার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র। এই বক্তব্য নিয়েই আপত্তি উঠেছে। বিধানসভায় সোমবার কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস বিধায়কেরা দাবি করেছেন, রাষ্ট্রপতি কী কারণ দেখিয়ে বিল ফেরত পাঠিয়েছেন, লিখিত ভাবে তা এ দিনই জানিয়ে দেওয়া হোক। যাতে আজ বিধানসভায় ওই নিয়ে বিতর্কের জন্য প্রস্তুতির সুযোগ পান বিধায়কেরা। কিন্তু স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের জানিয়ে দিয়েছেন, প্রস্তাবের ব্যাখ্যা দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়।
বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্য, বিলে যেমন বলা হয়েছে, সেই ভাবে কেন্দ্র রাজ্য বিধানসভায় পাশ হওয়া কোনও বিল প্রত্যাহার করতে বলতে পারে না। তিনি বলেন, “সংবিধানে এই রকম ক্ষমতা কেন্দ্রকে দেওয়া নেই। রাষ্ট্রপতির পরামর্শেই যদি বিল ফেরত এসে থাকে, তা হলে তিনি কী বার্তা দিয়েছেন, তা আগেই জানাতে হয়।” একই বক্তব্য কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ারও। মানসবাবুর প্রশ্ন, পুরনো বিলটি ফেরত পাঠানোর সময় রাষ্ট্রপতির কী পর্যবেক্ষণ এবং সুপারিশ ছিল, তা জানানো হচ্ছে না কেন?
বিরোধীদের এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিমও। তাঁর বক্তব্য, “কেন্দ্র কখনওই কোনও বিল প্রত্যাহার করতে বলতে পারে না। তারা বিল পরিমার্জন, সংযোজন বা সংশোধনের কথা বলতে পারে। তার ভিত্তিতে বিল প্রত্যাহার করা হবে কি না, সেটা সংশ্লিষ্ট আইনসভার বিচার্য।” তবে একই সঙ্গে হালিম বলেন, বিধানসভায় আজ পুরনো বিলটি প্রত্যাহারের প্রস্তাব আনার সময় সরকার কী বলে, তা না-জেনে চূড়ান্ত কিছু বলা সম্ভব নয়।
বিল প্রত্যাহারের কারণ জানতে চেয়ে বিরোধীরা কেন আগেই হইচই করছে, তা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন পরিষদীয়মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, “আগে প্রস্তাবটা সভায় তুলি। তার পরে তো ব্যাখ্যা দেব!” সূর্যবাবুদের আক্রমণ করে পার্থবাবু পাল্টা বলেছেন, “সিপিএম ভুলে গিয়েছে, ১৯৭৭ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত রাজ্যে অসংখ্য ভুঁইফোঁড় সংস্থা সাধারণ মানুষের হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে গেল! আর বাম সরকারের হিমঘুম ভাঙল ২০০৩-এ! সেই বিল দিল্লিতে পাঠানো হল ২০০৫-এ। পরে দিল্লি যখন বিল ফেরত পাঠাল সংশোধনের জন্য, তাতে কী কী বলা হয়েছিল, কিছুই বিধানসভাকে জানায়নি বাম সরকার!” এই দাবি আবার খারিজ করে দিয়েছেন সূর্যবাবু।
আরও একটি প্রশ্ন তুলেছেন সূর্যবাবু। ২০০৯ সালে পাশ হওয়া বিলটি প্রত্যাহার করতে চেয়ে চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে রাজ্যপালের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে আর্জি জানানো হয়েছিল বলে রাজ্য সরকারের তরফে এর আগে জানানো হয়েছিল। সূর্যবাবু এ দিন বলেন, “বিধানসভার অনুমোদন ছাড়া এই রকম কোনও আর্জি রাজ্য সরকার পাঠাতে পারে না। পাশ হওয়া কোনও বিল বিধানসভায় আলোচনা ছাড়া এ ভাবে ফেরানো যায় না।”
প্রসঙ্গত, বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনের প্রথম দিন শোকপ্রস্তাবে প্রয়াত এসএফআই নেতা সুদীপ্ত গুপ্তের নাম না-থাকায় ক্ষুব্ধ বিরোধীরা। পরে এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক সৌমেন বসুর নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল পার্থবাবুর সঙ্গে দেখা করে সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবি জানায়।
|