দীর্ঘায়ত বসন্ত চৈত্র ছাপিয়ে বৈশাখেও আসন পেতেছিল। তার মধ্যে এক দিনের জন্য হলেও তাপপ্রবাহ হয়ে গিয়েছে। অবশেষে ছদ্ম-বসন্তের পালা শেষ করে গ্রীষ্ম নিজের ছন্দে ফিরতেই ফের তাপপ্রবাহের চোখরাঙানি দক্ষিণবঙ্গে। বাড়ছে অস্বস্তিও। সব মিলিয়ে মে মাসের শুরুতে রুদ্ররূপ ধরছে বৈশাখ।
এপ্রিলের গোড়াতেই এক বার তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছিল রাজ্যের কয়েকটি জেলা। বাঁকুড়ার তাপমাত্রা উঠে গিয়েছিল ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। একই অবস্থা হয়েছিল রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের বাকি জেলাগুলিতেও। কিন্তু তার পরে আবহাওয়ার ভোলবদলে বসন্তের মেজাজ ফিরে এসেছিল রাজ্যে। আবহবিদেরা জানান, দক্ষিণবঙ্গে লাগাতার কালবৈশাখীর পরিস্থিতি চলতে থাকায় তাপমাত্রা অনেকটা নেমে গিয়েছিল। গভীর রাতে বা ভোরে গায়ে হাল্কা চাদরও চাপাচ্ছিলেন অনেকে। কিন্তু চলতি সপ্তাহ থেকেই সেই পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আসে। ফের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে রাজ্য জুড়ে।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, সোমবার কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের থেকে এক ডিগ্রি বেশি। হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, গরমের সঙ্গে সঙ্গে এ দিন অস্বস্তি বাড়িয়েছে আর্দ্রতাও। মহানগরে অস্বস্তিসূচক ছিল ৬৪। যা স্বাভাবিকের তুলনায় নয় বেশি। আগামী কয়েক দিনে তা আরও বাড়বে বলেই পূর্বাভাস দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। তবে এ দিন রোদের তেজ থাকলেও ততটা জ্বলুনি অনুভূত হয়নি বলে আবহবিজ্ঞানীদের দাবি। কেন? বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, দখিনা হাওয়া বইতে থাকায় রোদের তেজ কম মালুম হয়েছে। আগামী দিনে ওই হাওয়ার অভাবে দহন বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।
তবে তাপমাত্রা দ্রুত বাড়ছে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ এ দিন বলেন, “আগামী ৪৮ ঘণ্টায় পশ্চিমের জেলাগুলিতে তাপপ্রবাহ চলতে পারে। দক্ষিণবঙ্গের সর্বত্রই তাপমাত্রা বাড়বে।” সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি বেশি হলে আবহবিজ্ঞান তাকে বলে তাপপ্রবাহ। পশ্চিমের বিভিন্ন জেলায় সেই পরিস্থিতির আভাস মিলেছে।
মে মাস থেকেই কি চূড়ান্ত দহনজ্বালা সইতে হবে রাজ্যবাসীকে?
তেমনই ইঙ্গিত আলিপুরের আবহবিদদের। গোকুলবাবু জানান, দক্ষিণবঙ্গে আপাতত তেমন বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। অবশ্য তাপমাত্রা যে-ভাবে বাড়ছে, তাতে কোথাও কোথাও স্থানীয় ভাবে ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। তবে তা গরম কমাতে কতটা সহায়ক হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে আবহবিদদেরই।
উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায় এ বার গরমের ছবিটা অবশ্য বদলে গিয়েছে। রাজস্থান, হরিয়ানা, দিল্লিতে অন্যান্য বছর এই সময়ে তাপপ্রবাহ চলে। কিন্তু এ বার সেখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচে রয়েছে। মৌসম ভবনের আবহবিদেরা বলছেন, এর পিছনে রয়েছে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা (ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে বয়ে আসা বায়ুপ্রবাহ, যা আফগানিস্তান, পাকিস্তান হয়ে কাশ্মীর ঢোকে। এর জেরেই শীত আসে এ দেশে)। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের বদলের ফলে গরম পড়লেও কাশ্মীরে একের পর এক পশ্চিমী ঝঞ্ঝা এসেই চলেছে। তার ফলেই উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে তাপমাত্রা বাড়তে পারছে না। |