আইনি লড়াইয়ে রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন আটকে গিয়েছে। আর পঞ্চায়েত ভোট হচ্ছে না বলে অনিশ্চিত হয়ে পড়ল রাজ্যের ১৩টি পুরসভার নির্বাচনও। কারণ রাজ্য সরকার সাফ জানিয়ে দিয়েছে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে পুরভোটের কথা ভাবা হবে না।
সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দ্বৈরথে রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট কবে হবে, ঠিক নেই। কলকাতা হাইকোর্টে এই নিয়ে যে-মামলা চলছে, তার নিষ্পত্তির আগে পঞ্চায়েত ভোটের কোনও সম্ভাবনা নেই। আর সোমবার রাজ্য সরকারের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পঞ্চায়েত নির্বাচন মেটার পরেই ১৩টি পুরসভার ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে ভাববে তারা। কিন্তু কেন? পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “সরকার পঞ্চায়েত ভোটের পরেই পুর নির্বাচন করতে চায়। পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে কমিশনের সঙ্গে সরকারের বিবাদ আদালতে গড়িয়েছে। তার ফয়সালা কী হয়, সেটা দেখেই পুর নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে চায় রাজ্য সরকার।”
অথচ দিনের শুরুতে পুরভোট নিয়ে সমস্যা মেটার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। কারণ অনেক চিঠিপত্র চালাচালির পরে এ দিনই ঠিক হয়, রাজ্যের পুরসচিব বি পি গোপালিকা ১৩টি পুরসভার ভোট নিয়ে কথা বলার জন্য রাজ্য নির্বাচন কমিশনে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত গেলেনও। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। কমিশন সূত্রের খবর, পুরসচিবের সঙ্গে আলোচনায় পুরভোটে নিরাপত্তার প্রসঙ্গ ওঠে। কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, যে-হেতু ১৩টি পুরসভা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এবং ভোট হবে ছোট ছোট এলাকায়, তাই রাজ্যের সশস্ত্র পুলিশ দিয়েই ভোট করানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন নেই।
কমিশন সূত্রের খবর, ১৫ জুলাই ওই ১৩টি পুরসভার বেশির ভাগেরই বর্তমান বোর্ডের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশন যে তার আগেই ১৩টি পুরসভা এবং অন্যান্য পুরসভার ২১টি ওয়ার্ডের উপনির্বাচন সেরে ফেলতে চায়, এ দিনের বৈঠকে পুরসচিবকে তা জানানো হয়। পুরসচিব বৈঠকে মীরাদেবীকে জানান, কমিশনের কথা তিনি সরকারের যথোপযুক্ত স্তরে জানাবেন। বৈঠকের পরে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, “পুরসচিবের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলে গিয়েছেন, সরকারি সিদ্ধান্ত পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।” পঞ্চায়েত ভোট নির্ভর করছে আদালতের ফয়সালার উপরেই। কিন্তু অনেক টানাপোড়েনের পরে পুরসচিব এ দিন কমিশনের দফতরে গিয়ে মীরাদেবীর সঙ্গে বৈঠকে বসায় ১৩টি পুরসভার নির্বাচন নিয়ে জট খুলছে বলেই আশা করছিলেন নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত আমলারা। কিন্তু পুরমন্ত্রী সরকারের মনোভাব পরিষ্কার করে দেওয়ার পরে বোঝা গেল, এ দিনের বৈঠক স্রেফ নিয়মরক্ষার জন্য। সরকার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে আইনি লড়াইয়ের ফলাফল দেখে পুরভোটের পথে এগোনো হবে। |