ভুঁইফোঁড় সংস্থায় অর্থ লগ্নির বিপদ ঠেকাতে আমজনতাকে সচেতনতার বর্মে সুসজ্জিত করার কাজে নামছে রাজ্য ক্রেতা-সুরক্ষা দফতর। ক্রেতা-সুরক্ষামন্ত্রী সাধন পাণ্ডে রবিবারই তার ইঙ্গিত দিয়েছেন। কোমর বাঁধছে অর্থ দফতরও। ওই সব সংস্থায় টাকা রেখে সর্বস্বান্ত হওয়ার ঝুঁকি, এবং সরকারি স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের আর্থিক নিরাপত্তা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার কাজ তারা এত দিনে জোরকদমে শুরু করতে চলেছে।
রাজ্য জুড়ে প্রচার অভিযান শুরুর লক্ষ্যে সব জেলার স্বল্প সঞ্চয় আধিকারিকদের বৈঠক ডাকা হয়েছে ৮ মে, মহাকরণের রোটান্ডায়। প্রশাসনিক সূত্রের খবর: বৈঠক-ফেরত আধিকারিকেরা ব্লকস্তরের সঞ্চয় উন্নয়ন আধিকারিক এবং স্বল্প সঞ্চয় এজেন্টদের নিয়ে আলোচনায় বসবেন। সারদা কাণ্ডের প্রেক্ষাপটে তাঁদের নতুন উদ্যমে কাজে নামতে বলা হবে। বাড়তি কমিশনের লোভে যে সব এজেন্ট ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলির হয়ে আমানত সংগ্রহ করছিলেন, তাঁদের তালিকা বানানো হচ্ছে। তালিকা ধরে এজেন্ট-লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলে জানান অর্থ দফতরের এক কর্তা।
কিন্তু ঘটনা হল, ভুঁইফোঁড় লগ্নি সংস্থার দৌরাত্ম্যে স্বল্প সঞ্চয়ে আমানতের বহর হু-হু করে পড়তে থাকলেও অর্থ দফতরের তরফে কিছু প্রচারপত্র বিলি করা ছাড়া তেমন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। আবার স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে যুক্ত সরকারি কর্মীদের অভিজ্ঞতা বলছে, কিষাণ বিকাশপত্র প্রত্যাহার, মাসিক আয় প্রকল্পে বোনাস বিলোপ ও এজেন্টদের কমিশন হ্রাসের ফলেও স্বল্প সঞ্চয়ের আকর্ষণ কমেছে। উপরন্তু আমানতকারীদের পরিচয়পত্র দাখিল বাধ্যতামূলক হওয়ায় নিম্ন-মধ্যবিত্তদের অনেকে ওই দিকে ঝুঁকছেন না। সব মিলিয়ে রাজ্যে স্বল্প সঞ্চয় কিছুটা বিপর্যস্তই। ২০১০-১১ অর্থবর্ষে রাজ্যে স্বল্প সঞ্চয় খাতে নিট জমার পরিমাণ ছিল ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি। ২০১১-১২’য় তা নেমে দাঁড়ায় ১৭০০ কোটিরও কম। আর ২০১২-১৩’য় অঙ্কটা একটু বেড়ে ১৭০০ কোটি ছাড়ালেও তা মোটেই আশানুরূপ নয় বলে স্বীকার করে নিচ্ছেন অর্থ-কর্তারা। অথচ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প চালাতে স্বল্প সঞ্চয় খাতে নিট জমার পুরোটাই কেন্দ্র রাজ্যকে সহজ শর্তে ঋণ হিসেবে দেয়। ফলে স্বল্প সঞ্চয়ে টান পড়লে উন্নয়নের সুযোগও হাতছাড়া হতে বাধ্য।
ভুঁইফোঁড় লগ্নিসংস্থার রমরমা রুখে গ্রামে-গ্রামে স্বল্প সঞ্চয়ের উপযোগিতা প্রচারে জোর দিতে চাইছে রাজ্য সরকার। যদিও অর্থ দফতরের খবর: স্বল্প সঞ্চয় সংক্রান্ত প্রচার খাতে সরকারি বরাদ্দ যথেষ্ট নয়, বছরে সাকুল্যে দশ লক্ষ টাকা। তাই অল্প খরচে বেশি লোকের কাছে পৌঁছাতে বাউল গানের মাধ্যমেও প্রচার চলছে। অর্থ-কর্তাদের দাবি, সবলা মেলায় প্রচার চালিয়ে ভাল ফল মিলেছে। গ্রামের হাটে গিয়েও প্রচার হচ্ছে। |