সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর পর রাজ্যের মন্ত্রী মদন মিত্র।
সারদা গোষ্ঠী তথা সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা অভিযোগ উঠেছে। সোমবার বর্ধমানের পালশিটে এক কাগজকলের উদ্বোধনে গিয়ে পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্রও পরামর্শ দিলেন, ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা রাখতে ভরসা না পেলে তা এখনই তুলে নিন। রবিবারই শুভেন্দু পরামর্শ দিয়েছেন, “চিট ফান্ডে টাকা রাখবেন না। আর এজেন্টদের বলছি, প্রয়োজনে নুন-ভাত খেয়ে জীবন-যাপন করুন।”
রাজারহাটের ফ্ল্যাটে বর্ধমানের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেত্রী পিয়ালি মুখোপাধ্যায়ের ঝুলন্ত দেহ মেলার পরে এই প্রথম এই এলাকায় এলেন পরিবহণ মন্ত্রী। সেই ঘটনায় মদনবাবুর নাম জড়িয়ে কথা উঠেছিল, যেমন এক সময়ে তিনি জনতাকে সারদায় টাকা রাখার পরামর্শ দিতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। মদনবাবু তা উড়িয়ে দাবি করেন, “সবই কম্পিউটারের কারিকুরি। জাল ছবি দেখিয়ে সংবাদমাধ্যমের একাংশ আমাদের কালিমালিপ্ত করতে চাইছে। এই ষড়যন্ত্র ধোপে টিঁকবে না।”
রাজ্যে প্রতারিত আমানতকারীদের সংখ্যা প্রায় কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আন্দাজ করে মদনবাবু বলেন, “যদি কোনও চিটফান্ড থেকে টাকা ফেরত নেওয়ার থাকে, অবিলম্বে তা ফেরত নিন। তাতে যদি এক দিনের বদলে দু’দিন লাইন দিতে হয়, তাও দেবেন।” দলের কারও যদি এই ধরনের সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ থাকে, তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, একের পর এক কেলেঙ্কারিতে যে ভাবে মদনবাবুর নাম জড়াচ্ছে তাতে যে দলনেত্রী খুশি নন, তা-ও তিনি ভালই জানেন। ফলে কার্যত কোণঠাসা হয়েই তাঁর অবস্থান বদল।
সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগের প্রশ্ন উঠতেই মদনবাবু দাবি করেন, “অভিযোগ করলেই তো হবে না, প্রমাণ করতে হবে! পুলিশ আছে, আদালত আছে, তদন্ত চলছে। প্রমাণ করুক।” দলের অন্য নেতাদের মতো তিনিও ভুঁইফোঁড় লগ্নি সংস্থার বাড়বাড়ন্তের জন্য সিপিএমকেই দায়ী করেছেন। এ ধরনের বেশ কিছু সংস্থার কর্তাদের মাথায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-নিরুপম সেনদের হাত ছিল দাবি করে মদনবাবু বলেন, “এখন সিপিএম নেতারা বলছেন, কিছুই জানতাম না! ৩৪ বছরে ওঁরা কিছু জানলেন না আর ক’দিন ক্ষমতায় এসেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব জেনে ফেলবেন এমন আশা কি সঙ্গত?”
তৃণমূলের এক রাজ্য নেতা বলেন, পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, তাঁরা আগেই টের পেয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “২০১১ সালের ২১ জুলাই ব্রিগেডে ‘শহিদ দিবসে’ সমাবেশের নিয়ন্ত্রণ একটা সময়ে কার্যত সারদার চেয়ারম্যান সুদীপ্ত সেনের হাতে চলে যায়। সুব্রত বক্সীর মতো নেতারা উপস্থিত থাকতেও কী করে এটা ঘটল, তা নিয়ে দলের ভিতরেও কথা ওঠে।” কৃষ্ণনগরের সাংসদ তাপস পালের কাছে নদিয়ার বেশ কিছু লগ্নি সংস্থার আপত্তিকর কার্যকলাপ নিয়ে চিঠি আসছিল জানিয়ে ওই নেতা বলেন, “তাপস ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন। কিন্তু দলের কিছু ‘বড় মাথা’র আপত্তিতে তা গিলে ফেলতে বাধ্য হন।” তাপস অবশ্য বলেন, “আমি দলকে এমন কিছু বলেছি বলে মনে পড়ছে না।” |