বছর তিনেক আগের এক শীতের সকালে কুয়াশায় ঢাকা ভাগীরথীর মাঝ নদীতে দুটি নৌকার মধ্যে সংঘর্ষ লাগে। ওই সংঘর্ষে টাল সামলাতে না পেরে নৌকা থেকে পড়ে ভাগীরথীর জলে তলিয়ে যান ভগবানগোলার বাসিন্দা আক্কাশ শেখ। পরে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ওই শীতের সকালে সাইকেল-সহ তিনি নৌকায় পার হচ্ছিলেন। ওই ধাক্কায় তাঁর সাইকেলটিও ভাগীরথীর জলে তলিয়ে যায়। ওই ঘটনার জেরে মাঝিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। ওই মামলা এখনও বিচারাধীন রয়েছে।
ওই ঘটনার প্রায় ১০ বছর আগে একই ভাবে দুটি নৌকার মধ্যে ধাক্কা লেগে পড়ে গিয়ে ভাগীরথীর জলে তলিয়ে যান এক জন মহিলা। ঘটনার দু’দিন পরে তাঁর মৃতদেহ ভাগীরথীর জলে ভেসে ওঠে। তখন হাতে টানা নৌকায় ভাগীরথী পারাপার করা হত। হাতে টানে নৌকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টো দিক থেকে আসা নৌকায় ধাক্কা লাগলে নৌকা থেকে নামেন মহিলা।
সেই সময়ে ওই দুটি ঘটনা সামাল দিতে বেগ পেতে হয়নি নৌকা পারাপারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের। কিন্তু রবিবার দুপুরের ঘটনায় অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়। তিনটে নৌকায় আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। তার পর থেকেই নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সোমবারও জিয়াগঞ্জ সদরঘাট থেকে নৌকা পারাপার না করায় ভোগান্তির মুখে পড়েন ভাগীরথীর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ের বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। তবে নৌকা পারাপার স্বাভাবিক করতে এদিন সন্ধ্যায় ঘাটের দায়িত্বে থাকা জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ বোটম্যান ফেরিঘাট কো-অপারেটিভ ট্রান্সপোর্ট সোসাইটি’র সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন ব্লক প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা। শেষ পর্যন্ত প্রশাসন নিরাপত্তার আশ্বাস দিলে মঙ্গলবার সকাল থেকে নৌকা চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। |
এদিকে সোমবার সকাল থেকে লঞ্চে করে ভাগীরথী জলে ওই যুবকের খোঁজে সন্ধান চালানো হয়। নামানো হয় ডুবুরিও। তা সত্ত্বেও এখনও সন্ধান মেলেনি আক্রাম আনসারির নামে ওই যুবকের। ওই ফেরিঘাট সোসাইটি’র সম্পাদক অজিত বিশ্বাস বলেন, “তিন বছর আগের ওই ঘটনায় এখনও মামলা চলছে। তার আগে মহিলা ডুবে যাওয়ার ঘটনাটি নিজেদের মধ্যে বসে মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে।” তাঁর কথায়, “২০০১ সাল থেকে জিয়াগঞ্জ সদর ঘাট, সাধকবাগ বরানগর ঘাট, বারোদুয়ারি ভট্টপাড়া ঘাটের দায়িত্ব পায় আমাদের সোসাইটি। পরে ২০০৬ সালে শিবতলা ঘাট দিয়ে নৌকা চালানোর দায়িত্ব পাই। ৪টে ঘাটে নৌকা পারাপারের জন্য প্রশাসনকে বছরে প্রায় ১১ লক্ষ টাকা আমাদের দিতে হয়।”
জিয়াগঞ্জ সদর ঘাটে প্রতি দিন ৫টি নৌকা চলত। তিনটে নৌকা পুড়িয়ে দেওয়ায় এখন দুটি নৌকায় পরিস্থিতি কি ভাবে সামাল দেওয়া যাবেতা ভেবে শঙ্কিত সোসাইটি’র সদস্যরা। এজন্য নিমতলা ঘাট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বাড়তি ১টি নৌকা নিয়ে আসার ব্যবস্থা হচ্ছে। তবে সোসাইটির বিরুদ্ধে নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী তোলার অভিযোগ উঠেছে। অজিতবাবু বলেন, “৮০ জন যাত্রী বহণের ক্ষমতা নৌকাগুলির আছে এবং বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তা জানানো হয়েছে। তবে অনেক সময় তাড়াহুড়ো করে কোনও যাত্রী ঝুঁকি চেপে পড়েন। নিষেধও করা হলেও একশ্রেণির যাত্রী শোনে না।” সোসাইটি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি দিন পারাপারে ১৪-১৫ হাজার টাকা আয় হয়।
|