বদলেছে সময়, তাল মিলিয়ে পাল্টে গিয়েছে বারোদোলও
যাঁতা থেকে জাঁতি। বঁটি থেকে বেলনচাকি। ঘর সংসারের যাবতীয় জিনিস কেনার জন্য বছরভর বারোদোলের অপেক্ষায় থাকতেন নদিয়া রাজপরিবারের দোর্দণ্ডপ্রতাপ রানি জো্যর্তিময়ী দেবী। বারোদোলের মেলার মতো এ সব জিনিস এত ভাল আর কোথাও পাওয়া যায় না বলে গভীর বিশ্বাস ছিল তাঁর।
নদিয়া জেলার মানুষ সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে এমনই কিছু মেলার জন্য যার মধ্যে রয়েছে নবদ্বীপের রাস, শান্তিপুরের ভাঙারাস, কল্যাণী ঘোষপাড়ার সতীমায়ের মেলা ও অবশ্যই বারো দোলের মেলা। প্রায় একমাস ধরে চলতে থাকা বারোদোলের মেলা সেকালের কৃষ্ণনগরের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করত। নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র প্রবর্তিত বারোদোলের মেলা তিন শতাব্দী ধরে তার নিজের ঐতিহ্য বজায় রেখে চলেছে। জলঙ্গি দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে তবে বারোদোলের মেলা আজও একইরকম জনপ্রিয়।
বত্রিশ বছর আগে রাজপরিবারে বিয়ে হয়ে এসেছিলেন অমৃতা রায়। তিনি বলেন, ‘‘বাড়ির বয়স্কদের থেকে শোনা আগে সারাবছর ধরে কার কি দরকার তার তালিকা তৈরি হত। সব কেনা হত বারোদোলের মেলা থেকে। জো্যতির্ময়ী দেবী ঘনিষ্ঠদের মেলার বঁটি উপহার দিতেন।”
রাসবাড়ি মাঠে জমে উঠেছে বারোদোলের মেলা। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।
নদিয়া জেলা চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের গোকুল বিকাশ সাহা হলেন, “সময়ের সাথে সাথে ওই মেলা নিজেকে অনেক বদলে ফেলেছে। একটা গ্রামীণ মেলা থেকে এখন বারোদোলের মেলা শিল্পমেলা বা ‘এক্সপো’র চেহারা নিয়েছে। আগের মতো এই মেলা এখনকার মানুষের চাহিদাও পূরণ করতে পারছে বলে মেলার সাফল্য বাড়ছে।” মেলা কমিটির সম্পাদক সুবীর ঘোষ বলেন, “প্রায় কুড়ি বিঘা জমির উপর মেলায় ছোট বড় মিলিয়ে সাতশোটি দোকান। সাড়ে পাঁচ হাজার লোক অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। মেলায় প্রায় দশ কোটি টাকার ব্যবসা হয়।
এটাই হল এখনকার বারোদোলের মেলার চেহারা।”
গত বছর মেলায় প্রথম দোকান করেছিলেন তপোলদ্ধা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “গত বছর বুটিকের দোকান খুলে যেভাবে সাফল্য পেয়েছি তাতেই এবার আবার এসেছি। এত মানুষের সামনে নিজের পণ্য বিপণনের সুযোগ আর কোথাও পাব না।” প্রায় এক দশক ধরে একটু একটু করে বদলাতে শুরু করেছে বারোদোলের মেলা। এ বারের মেলায় বাংলাদেশ থেকে ঢাকাই জামদানি র বিক্রেতারা সরাসরি এসেছেন তাদের শাড়ির পসরা নিয়ে।
কি নেই এ বারের মেলায়। উত্তরপ্রদেশের কার্পেট থেকে ভাগলপুরের সিল্ক, মেদিনীপুরের মাদুর থেকে তামার বাসন সবই রয়েছে মেলায়। তার সঙ্গে রয়েছে চার হাজার স্কোয়ার ওই বিপণির প্রধান সঞ্জন দাস বলেন, “আজ থেকে ন’বছর আগে প্রথমবার মেলায় আসি। প্রতিদিন প্রায় আট হাজার মানুষ আমাদের কাছে আসেন। বারোদোলের মেলা এখন আধুনিক মেলার সব বৈশিষ্ট্য নিয়ে জমজমাট।” ন’এর দশকে এই মেলার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। অমৃতাদেবী বলেন, “সেই সময় ঘরের টাকা দিয়ে মেলা করতে হয়েছিল। ২০০৪-০৫ সাল থেকে ধীরে ধীরে মেলা ক্রমশ বাণিজ্য সফল হয়েছে।”
তবে বাণিজ্য সফল বারোদোলের মেলা হারিয়ে ফেলেছে তার অনেক কিছু। কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা এবং জেলা তথ্য আধিকারিক অলোক সান্যাল বলেন, “আর পাঁটচা মেলার সঙ্গে এখন বারোদোলের মেলার কোনও পার্থক্য নেই। মেলায় সারারাত ধরে যাত্রা বা পুতুল নাচে গ্রামীণ মানুষের ঢল এখন অতীত। মেলায় নেই হাঁসখালির সরবৎ বা ঘূর্ণির মাটির পুতুলের দোকান। আধুনিক শপিং মলের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে সেই বারোদোলের মেলা।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.