এক যুবকের ভাগিরথীর জলে তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় উত্তেজনা ছড়াল আজিমগঞ্জে। রবিবার দুপুরে নৌকা পার হওয়ার সময় জিয়াগঞ্জের লোকপাড়ার বাসিন্দা বছর উনিশের যুবক আক্রম শেখ জলে পড়ে যান। ওই ঘটনায় নৌকার মাঝির গাফিলতির অভিযোগ তুলে উত্তেজিত জনতা তাণ্ডব চালায়। তিনটি নৌকায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গেলে শুরু হয় জনতা-পুলিশ খন্ডযুদ্ধ। ইটের ঘায়ে জখম হয়েছেন ৪ পুলিশকর্মী। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “মাঝির বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ আনা হয়েছে। তদন্ত চলছে। পুলিশকে মারধরের অভিযোগে জনতার বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগ এনেছে।”
|
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, আক্রম শেখ নামে ওই যুবক স্থানীয় একটি লেদ কারখানায় কাজ করতেন। এ দিন কারখানার পাত কিনতে মালিকের ছেলে-কে নিয়ে আজিমগঞ্জে যান। ফেরার সময় দুপুর আড়াইটে নাগাদ তার ধাক্কাতেই আক্রম শেখ জলে পড়ে যান বলে অভিযোগ। তিনি সাঁতার জানতেন না।
সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকেন। মাঝি সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি বলে পরিবারের লোকজনের দাবি। আক্রমের মামা নজরুল হোসেন ও কুদ্দুস হোসেন আজিমগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে ভাগ্নেকে উদ্ধারের আর্জি জানান। কিন্তু পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে উল্টে তাঁদের মারধর করে বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দা সঙ্গীতা প্রসাদ প্রতিবাদ করলে তিনিও পুলিশের রোষে পড়েন। সঙ্গীতাদেবী বলেন, “পুলিশ তলিয়ে যাওয়া যুবকের দুই মামাকে মারধর করছিল। প্রতিবাদ করতেই আমাকেও চুল ধরে মারে।” |
নৌকো থেকে এক যুবক ভাগীরথীতে পড়ে যাওয়ায় নৌকায় আগুন ধরিয়ে দিল জনতা। রবিবার
মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জে এই ঘটনার পরে পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধ বাধে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক |
পুলিশি ঢিলেমিতে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। ক্ষিপ্ত জনতা ঘাটের তিনটি নৌকায় আগুন লাগায়। মাঝিদের তাড়া করে। প্রাণভয়ে বেশিরভাগ মাঝিই জলে ঝাঁপ দেন। কেউ বা তীরবর্তী জঙ্গলে লুকান। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ আসে। শুরু হয় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি। ইটের আঘাতে চার পুলিশকর্মী আহত হন। এক জনের মাথা ফেটে যায়। তবে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছাড়া পান ওই চার জনই।
পরে র্যাফ ও কমব্যাট ফোর্স নেমে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। ফেরি চলাচলের দায়িত্বে রয়েছে জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ বোটম্যান ফেরিঘাট কো-অপারেটিভ ট্রান্সপোর্ট সোসাইটি। সোসাইটির সম্পাদক অজিত বিশ্বাস বলেন, “মাঝির দোষ ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” ঘটনায় পর থেকেই মালিক-পুত্র বেপাত্তা। তাঁর বাবা আসরাফ মিঞার বক্তব্য, “ঠেলে ফেলে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আক্রম নিজেই গরমে সাঁতরে পার হওয়ার জন্য জলে ঝাঁপ দেন।” এই ঘটনায় ভাগিরথীর বিভিন্ন ঘাটে সারা দিনের জন্য নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। হয়রানির শিকার হন হাজার-হাজার যাত্রী। অন্য দিকে এ দিন গভীর রাত পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়েও তলিয়ে যাওয়া ওই যুবকের সন্ধান মেলেনি। জেলা পুলিশ ইঙ্গিত, প্রয়োজনে ডুবুরি নামানো হতে পারে। |