যানজট মুক্ত শহর গড়তে সক্রিয় হল প্রশাসন। বেলডাঙা শহর ও সংলগ্ন প্রতিটি সড়কে ব্যস্ত সময়ে রাস্তায় দীর্ঘ গাড়ির সারির ছবিটা সকলেরই চেনা। যানজটে জেরবার স্কুল পড়ুয়া থেকে অফিসকর্মী সকলেই। বেলডাঙা পুরসভা আগে যানজট নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েকটি ব্যবস্থা নিলেও বিশেষ ফল মেলেনি। শেষ পর্যন্ত শনিবার বেলডাঙার ওসি জামালউদ্দিন মণ্ডলের উদ্যোগে বেলডাঙার সম্পর্ক হলে প্রশাসনের সর্বস্তরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকে পুরসভার প্রতিনিধি, পঞায়েত প্রধান, ব্যবসায়ী সংগঠন, বাস, টেকার, ভ্যান রিক্সা ইউনিয়ন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তাতে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়, গাড়ির গতি বাড়াতে রাস্তাকে দখলমুক্ত করা দরকার। সে জন্য ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’ধার থেকে বেআইনি দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। এ ছাড়া শহরের রাস্তা ও সংলগ্ন রাজ্য সড়কেও একইভাবে দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। |
রাস্তায় যানজট হওয়ার আর একটি বড় কারণ ব্যস্ত সময়ে বড় পণ্যবাহী লরি চলাচল। সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শহরে বড় পণ্যবাহী লরির প্রবেশ ও পণ্য খালাসও নিষিদ্ধ করা হবে। মটর চালিত ভ্যানও ওই নির্ধারিত সময়ে বেলডাঙা থানা চত্বরে প্রবেশ করতে পারবে না বলে জানানো হয়। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া রাস্তাকে যানজট মুক্ত করতে বেআইনি দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। এ ছাড়া বর্ষাকালে জল জমা আটকাতে এলাকার নিকাশি ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে।’’ রবিবার পুলিশ, পুরসভা ও ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা বেলডাঙা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের বড়ুয়া মোর সংলগ্ন এলাকা পরিদর্শন করে সিদ্ধান্ত নেন, রাস্তার বেআইনি দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। জাতীয় সড়কের পাশে বাস দাঁড়ানোর নির্দিষ্ট জায়গাও তৈরি হবে। বেলডাঙার রাস্তায় ব্যবসায়ীরা স্থায়ী ভাবে রাস্তা দখল করে ব্যবসা করতে পারবে না বলেও জানানো হয়।
যানজট নিয়ন্ত্রণে পুরসভা আগেই ১০ জন কর্মী নিয়োগ করেছিল। যদিও তাদের কাজে সন্তুষ্ট না হওয়ায় পুরসভা এপ্রিল থেকে তাদের বেতন বন্ধ করে দেয়। বেলডাঙা পুরসভার পুরপ্রধান কংগ্রেসের অনুপমা সরকার বলেন, “বেআইনিভাবে রাস্তা দখল করে থাকা ব্যবসায়ীদের সরিয়ে দিয়ে শহরবাসীকে যানজটমুক্ত শহর উপহার দেওয়া হবে। রবিবারই মাইকে প্রচার শুরু হয়েছে। এরপর পোস্টারিং করা হবে। পুলিশকেও এ বিষয়ে সমস্ত রকম সহযোগিতা করা হবে।” পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের শীলা ঘোষ বলেন, “শহরকে যানজট মুক্ত করতে পুরসভা ও পুলিশকে আমরা সব রকম সহযোগিতা করবো।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১ মে থেকে রাস্তা যানজট মুক্ত করার সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু হবে। মোটরবাইক আরোহীদেরও প্রয়োজনীয় লাইসেন্স সঙ্গে রাখতে হবে ও ট্রাফিক আইন মেনে বাইক চালাতে হবে। বেলডাঙা বড়ুয়া ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মুক্তাদির মোল্লা বলেন, “আমরা ব্যবসায়ীদের সচেতন করে আগেই যানজট কমানোর চেষ্টা করলেও তার সবটা সফল হয়নি। তবে এ ব্যাপারে পুলিশ সক্রিয় হওয়ায় আশা করি সমস্যার সমাধান হবে।”
বড়ুয়া ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছ, জাতীয় সড়ককে যানজট মুক্ত করতে তাদের নিয়োগ করা ১৬ জন কর্মীকেও বেলডাঙার হাটবার মঙ্গলবারে পথে নামানোর কথা পুলিশকে জানানো হয়েছে। এই উদ্যোগকে সবাই স্বাগত জানালেও এই কর্মসূচী কতটা কার্যকর হবে তা ভবিষ্যতই বলবে। |
যানজট মুক্তির দাওয়াই |
• সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে বেলডাঙা থানা চত্বরে মোটর চালিত ভ্যানের প্রবেশ নিষিদ্ধ।
• গাড়ির গতি বাড়াতে রাস্তা বেআইনি দখলমুক্ত করা।
• সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে বেলডাঙায় পণ্যবাহী বড় গাড়ির প্রবেশ ও পণ্য খালাস নিষিদ্ধ করা।
• মোটর বাইক আরোহীদের প্রয়োজনীয় নথিপত্র সঙ্গে রাখা বাধ্যতামূলক করা।
• বেলডাঙার রাস্তা স্থায়ীভাবে দখল করে ব্যবসা বন্ধ করা। |
|