বছর দশেক আগে বহরমপুর-জঙ্গিপুর ভায়া লালগোলা রাজ্য সড়ক লাগোয়া মল্লিকপুরে বিঘা তিনেক জমিতে তৈরি হয় লালগোলা বাস টার্মিনাস। তারও বছর পাঁচেক পর ২০০৮ সালে ওই টার্মিনাস চত্বরে গড়ে ওঠে মাছ ও সব্জি বাজার। গড়া হয় স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর দোকানঘর। যাত্রীদের থাকার জন্য বাসটার্মিনাসের অফিসঘর লাগায়া ডরমেটরিও হয়। সবই হল, কিন্তু প্রায় কোটি টাকা মূল্যের ওই নির্মাণের বাস্তবতা কোথায়? টার্মিনাসে বাসই এল না। নির্বিকার লালগোলা পঞ্চায়েত সমিতি। এত দিন ধরে ওই টার্মিনাস ও বাজার চালু না হওয়ার কোনও যুৎসই কারণ নেই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির কাছে।
২০০৩ সালের প্রথম দিকে সিপিএম পরিচালিত লালগোলা পঞ্চায়েত সমিতির তত্ত্বাবধানে বাসটার্মিনাসের নির্মান শেষ হয়। কিন্তু উদ্বোধনের আগেই পঞ্চায়েতের ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। তার পর পঞ্চায়েত সমিতি দখল করে কংগ্রেস। বাস টার্মিনাসের উদ্বোধন করা হয়। বাস টার্মিনাস পরিচালনার জন্য ২৪ জনের একটি কমিটিও গড়া হয়। কিন্তু ওই টার্মিনাসে বাস ঢোকে না। টার্মিনাসের অদূরে নেতাজি মোড় ও জাগলহাট মোড়ে রয়েছে দু’টি বাসস্টপ। সেখানেই বহরমপুর-জঙ্গিপুর ভায়া লালগোলা রুটের বাসগুলি দাঁড়ায়। স্থানীয় বাসিন্দা সারজেমান শেখ বলেন, “তখন স্থানীয় যুবকরা মিলে আমরা রাজ্যসড়কে দাঁড়িয়ে বাস গুলিকে টার্মিনাসের ভিতরে ঢোকানোর ব্যবস্থা করি। কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।”
টার্মিনাসে বাস না ঢুকলেও সেখানে কিন্তু ফের নির্মাণ শুরু হয়। পঞ্চায়েত সমিতি নির্মাণ করে মাছ ও সব্জি বাজার। স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের গড়া হয় দোকানঘর। সে সব কিন্তু আজও ব্যবসায়ী ও স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর মধ্যে বিলি করা হয়নি। পূর্বতন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুজাউদ্দিন বলেন, “ব্যবসায়ীদের মধ্যে দোকান বিলির আগেই ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন এসে যায়। ফলে তা বিলি করা যায়নি।”
ভোটে পালা বদল ঘটে। পঞ্চায়েত সমিতির দখল নেয় সিপিএম। পূর্বতন বাস টার্মিনাস কমিটির সম্পাদক অজয় ঘোষ বলেন, “নতুন পঞ্চায়েত সমিতি বাস টার্মিনাস ও বাজার চালু করার কমিটি ভেঙে দেয়। তারপর পাঁচ বছরে অন্তত ৮ বার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং বিডিও-র কাছে আবেদন করা সত্ত্বেও টার্মিনাস চালু, কমিটি গঠন ও দোকানঘর বিলিকিছুই হয়নি।”
লালবাগ মহকুমাশাসক চিরঞ্জীব ঘোষ অবশ্য বলেন, “ওই টার্মিসানের বিষয়ে আমাকে কেউ কিছু বলেননি। গত ৫ বছরে ৪ জন মহকুমাশাসক বদল হয়েছেন। আমার কাছে ওই টার্মিনাসের ভবিষ্যত নিয়ে কোনও খবর নেই।”
লালগোলা ট্রেকার কর্মী সংগঠনের সম্পাদক অজয় সিংহ বলেন, “বাস টার্মিনাসের অদূরে রয়েছে নেতাজি মোড় ও জাগলহাট মোড়। সেখান থেকে লছিমন, অটো ও ম্যাজিক গাড়ি গুলি যাত্রী তোলে। তাই টার্মিনাসে থাকা বাস ও ট্রেকারে যাত্রী হয় না। ফলে টার্মিনাসে বাস ও ট্রেকার ঢোকে না।” মুর্শিদাবাদ জেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক তপন অধিকারী বলেন, ‘‘লছিমন ও অটোর দৌরাত্ম্য বন্ধ হলেই টার্মিনাসে বাস ঢোকানোর সমস্যা থাকবে না।” |