ব্যানার-পোস্টার আর জিন্দাবাদে কাও-বরণ দলের
ক দলীয় সহকর্মীকে খুনের অভিযোগ তাঁর মাথায়। তবু জেল থেকে বরো নির্বাচনে ভোট দিতে এসে তৃণমূল সমর্থকদের কাছে কার্যত ‘বীর’-এর সম্মান পেলেন তৃণমূল কাউন্সিলর শম্ভুনাথ কাও। অথচ দলীয় কর্মীকে খুনের অভিযোগে দলই তাঁকে সাসপেন্ড করেছিল। এমনকী শম্ভুনাথের উপর এতটাই ক্ষিপ্ত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে, তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশকে সব রকম আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছিলেন। সেই কাও-কেই সোমবার ‘দলের সম্পদ’, ‘কাছের মানুষ’, ‘মমতা ব্যানার্জির স্নেহধন্য’ লেখা পোস্টার-ব্যানারে স্বাগত জানালেন একদল তৃণমূল কর্মী। অনেকটা কঙ্কাল-কাণ্ডে অভিযুক্ত সিপিএমের সুশান্ত ঘোষকে তাঁর দলের কমরেডরা যেমন করেছিলেন।
এ দিন ৭ নম্বর বরোর নির্বাচনকে ঘিরে কড়া পুলিশি ব্যবস্থা ছিল। বেলা সওয়া ১২টা নাগাদ পুলিশের ভ্যানে জেল থেকে কাওকে নিয়ে আসা হয় মল্লিকবাজারের কাছে ৭ নম্বর বরো অফিসে। সেই সময়েই অফিসের বাইরে শ’খানেক তৃণমূল কর্মী ‘শম্ভু কাও জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে থাকেন। ব্যানার-পোস্টার হাতে কর্মী-সমর্থকদের ভিড়ে তখন পার্ক স্ট্রিটমুখী লোয়ার সার্কুলার রোড কার্যত অবরুদ্ধ তখন। বরো নির্বাচনে কাও যোগ দেওয়ায় এ দিন ভোট বয়কট করেছিলেন চার জন বাম কাউন্সিলর। ফলে বিনা লড়াইয়ে ওই বরোর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তৃণমূলের সুস্মিতা ভট্টাচার্য।
কাওকে স্বাগত জানাচ্ছেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। —নিজস্ব চিত্র
ভোটদান পর্বের আগেই এ দিন বিতর্ক ছড়ায় কাওয়ের একটি মন্তব্য ঘিরে। কাও পুলিশ ভ্যান থেকে নেমে ভোটের জন্য বরো অফিসে ঢোকার মুখে সদর্পে বলেন, “আমি দোষী নই। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।”
কে ফাঁসিয়েছে?
জবাব এল, “স্বর্ণকমল সাহা ও আরও এক জন।” (হট্টগোলে দ্বিতীয় জনের নাম অস্পষ্ট থেকে গেল।) স্বর্ণকমলবাবু তৃণমূলেরই এন্টালি কেন্দ্রের বিধায়ক। তাঁর নাম জুড়ে দলকেই অস্বস্তিতে ফেলেছেন কাও। তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, দলেরই এক কর্মীর খুনের অভিযোগের পিছনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা তুলে আইনের চোখে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চাইছেন কাও। এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী বলেন, “দল তো আগেই ওঁকে (শম্ভুনাথ কাও) সাসপেন্ড করেছে। এখন আর ও সব কথা বলে কী হবে? ও কে?”
ক্ষুব্ধ স্বর্ণকমলবাবুর বক্তব্য, “আসলে ও জানত ওর ভোটটা দলের দরকার। তা ছাড়া দলের কিছু সমর্থক ওর নামে জিন্দাবাদ দেয়। ওর যদি নিজের প্রতি এত বিশ্বাস, তা হলে পালাতে গেল কেন? পুলিশ তো ওকে উত্তরপ্রদেশ থেকে ধরে এনেছে!” তাঁর বিরুদ্ধে কাও যা বলেছেন, সবই ভিত্তিহীন বলে জানান স্বর্ণকমলবাবু।
বামেদের অভিযোগ, ভোটে ফায়দা তুলতে তৃণমূল কংগ্রেস খুনের মামলায় অভিযুক্তের সমর্থন নিতেও পিছপা হল না। অন্য দিকে, কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ভোটই তো হল না, সমর্থনের প্রশ্ন আসে কী করে?”
দলীয় কর্মী খুনের অভিযোগে বর্তমানে জেলে বন্দি রয়েছেন কাও। এরই মধ্যে চলে আসে ৭ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান নির্বাচন পর্ব। কাও ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়। কারণ ওই বরোর আসন বিন্যাসে তৃণমূল ৫ ও বামেরা ৪। তাই বরো দখলে রাখতে কাওয়ের ভোট প্রয়োজন ছিল তৃণমূল শিবিরের। ‘একঘরে’ হওয়া কাও নিজেকে ফের দলের একনিষ্ঠ সেবক করে তুলতে এই সুযোগটি কাজে লাগান। বরো নির্বাচনে ভোট দিতে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে আবেদন জানান। আবেদন মঞ্জুর হয়। ভোট দিতে এ দিন দু’ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পান তিনি। পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী সিপিএমের রূপা বাগচী বলেন, “পুরসভায় সংবিধানের প্রতি বিশ্বাস রেখে শপথ নিতে হয়েছে কাউন্সিলরদের। সেই শপথ ভুলে একজন জেলবন্দির ভোট পাওয়ার জন্য পুরসভাকে কলঙ্কিত করল তৃণমূল বোর্ড।” বিরোধী নেত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে শোভনবাবু বলেন, “সিপিএমের কাছে নীতি শিখব না। এ তো দেখছি চোরের মায়ের বড় গলা।”

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.