পকেট ভর্তি টাকা নিয়ে শহরতলির তস্য গলিঘুঁজি থেকে বিএমডব্লু চেপে সোজা বিমানবন্দর। সেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে ব্যক্তিগত জেট বিমান। সেটা চেপেই সোজা বিদেশ পাড়ি। আর এর জন্য শুধু দলে দলে বিনিয়োগকারী ধরে আনতে হবে।
বছর তিনেক আগে এমনই ব্যবসা ফেঁদেছিল ভিআইপি রোড রঘুনাথপুরের একটি ভুইঁফোঁড় আর্থিক সংস্থা। অভিযোগ, তাদের দেখানো এই অলীক স্বপ্নের ফাঁদে পা দিয়েছিলেন বাগুইআটি-সহ রাজ্যের নানা প্রান্তের এক দল বাসিন্দা। ২০১১ সালে প্রথম প্রতারিত হওয়ার ঘটনাটি বুঝতে পারেন লেকটাউন-বাঙুর অ্যাভিনিউয়ের এক দল বাসিন্দা। ওই বছরেরই ২১ মার্চ বাগুইআটি থানায় অভিযোগও জানান তাঁরা (জেনারেল ডায়েরি নম্বর-১৩১৩)। দু’বছর কেটে গেলেও ধরা পড়েনি এক জনও।
অভিযোগকারীরা জানান, পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে সংস্থায় যোগ দিতে হত। তার পরে ধরে আনতে হত আরও বিনিয়োগকারী। তাঁদের বোঝানো হয়েছিল, এ ভাবেই এক বিনিয়োগকারীর নীচে দুই, দু’জনের নীচে চার জন করে বাড়তে থাকবে এবং সেই সঙ্গে বাড়বে আয়ও। শুধু তাই নয়, ধাপে ধাপে উপরে ওঠার সঙ্গে মিলবে বিএমডব্লু-র মতো গাড়ি, এমনকী জেট বিমানও। সূত্রের খবর, ২০১০ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে দফায় দফায় অন্তত ৪০ কোটি টাকা প্রতারণা করেছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
কেন কোনও ব্যবস্থা নিল না পুলিশ?
পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, তদন্তে গিয়ে ওই নামের কোনও সংস্থার হদিস মেলেনি। বিষয়টির এফআইআর করা হয়েছিল কি না, তা-ও জানাতে পারেনি পুলিশ। তবে গোয়েন্দাদের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এই সংস্থাটি গত কয়েক বছরে বার বার নাম বদলেছে। আর একই কায়দায় প্রতারণা করেছে সাধারণ মানুষকে। কখনও তার নামের সঙ্গে জুড়েছে ইনস্যুরেন্সের মতো শব্দ, কখনও বা ‘এইচআরডি মার্কেটিং’। একই কথা বলেছেন অভিযোগকারীরাও। তাঁদের এক জন জানান, প্রথমে সংস্থাটির নাম ছিল রয়্যাল ইনস্যুরেন্স কর্পোরেশন। পরে তা নাম বদলে রয়্যাল এইচআরডি মার্কেটিং প্রাইভেট লিমিটেড
হয়ে যায়। একটি সূত্রের খবর, রয়্যাল এইচআরডি মার্কেটিং-এর পরে তা নাম দু’বার নাম বদলেছে।
প্রথমে রঘুনাথপুরের সাগরদীপ বহুতলে অফিস থাকলেও পরে সেখান থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে নিয়েছে সংস্থাটি। তবে ওই এলাকাতেই ভিআইপি রোড সংলগ্ন আর একটি বহুতলে অন্য নামে আর্থিক সংস্থা চলছে বলে গোয়েন্দারা খবর পেয়েছেন।
ইন্টারনেটের বেশ কিছু সাইটেও ওই সংস্থার কিছু বিজ্ঞাপন রয়েছে। সেখানে যোগাযোগের জন্য তিনটি মোবাইল নম্বরও দেওয়া রয়েছে। সেগুলিতে ফোন করে দেখা গিয়েছে, দু’টি নম্বর বন্ধ। অন্য একটিতে ফোন করলে এক মহিলা ধরেন। তিনি বলেন, “আমরা হাওড়ার শ্যামপুরে থাকি। এটি আমার স্বামীর নম্বর। আমরা ওই নামে কোনও সংস্থার কথা জানি না।”
(নিরাপত্তার কারণে মহিলা ও তাঁর স্বামীর নাম, ফোন নম্বর প্রকাশ করা গেল না।) |