রবিবার জেরার মুখে জানিয়েছিলেন তৃণমূলের পাঁচ নেতা-মন্ত্রীর কথা। সোমবার সুদীপ্ত সেন জানালেন এক প্রভাবশালী সিপিএম নেতার নামও।
সোমবার কুণাল ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদের আগে সারদা কর্তা সুদীপ্তকে জেরা করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় ওই প্রভাবশালী সিপিএম নেতার নাম করে সুদীপ্ত দাবি করেন, বাম আমলে ওই নেতা নানা ভাবে তাঁর কাছ থেকে অর্থ ও অন্য সুযোগ-সুবিধা নিয়েছিলেন। বিনিময়ে শাসক দলের বদান্যতা পাইয়ে দিয়েছেন সারদা গোষ্ঠীকে।
সুদীপ্তবাবু আরও জানিয়েছেন, ওই বাম নেতা যে ভাবে তাঁর কাছ থেকে সুবিধা নিতেন, রাজ্যে ক্ষমতা বদলের আগেই তৃণমূলের এক নেতা সেই জায়গা নিয়ে নেন। ওই তৃণমূল নেতা এখন রাজ্যের মন্ত্রী। তদন্তের স্বার্থে ওই বাম নেতা ও তৃণমূল মন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলতে পারে পুলিশ।
জেরায় মন্ত্রী-নেতাই শুধু নয়, রাজ্য প্রশাসনের একাধিক কর্তার নামও সারদা মালিক জানিয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রের খবর। বিধাননগর কমিশনারেট সূত্রের খবর, নিরাপদে ব্যবসা করতে কেন্দ্র ও রাজ্যের আমলা-পুলিশকে খুশি রাখতেন সুদীপ্ত। ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থাগুলির সঙ্গে প্রাক্তন পুলিশকর্তাদের যোগাযোগ সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
এ দিনই দিল্লিতে কনট প্লেস থানায় সুদীপ্তবাবুর বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। একটি করেন চ্যানেল টেন-এর কর্মীরা, একটি সকালবেলা-র ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। সকালবেলা-র রেসিডেন্ট এডিটর ও সংবাদ বিভাগের কর্মীদের তরফেও দু’টি আলাদা অভিযোগ দায়ের করা হয়। সব ক’টি ক্ষেত্রেই বেতন না দেওয়া, বিশ্বাসভঙ্গ ইত্যাদি অভিযোগ আনা হয়েছে।
চ্যানেল টেন-সহ সারদা গোষ্ঠীর সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা বিভিন্ন থানায় একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করছেন। রবিবার রাতে পার্ক স্ট্রিট ও সোমবার দুপুরে ভবানীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। দু’টি ক্ষেত্রেই একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এ দিন পুলিশ জেরা করে দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের গাড়ির চালক রতন ঠাকুরকে। দেবযানী সাধারণত কোন অফিস দেখতেন, সংস্থা বন্ধ হওয়ার আগের ক’মাস তিনি কোন কোন অফিসে ঘনঘন যেতেন, সে সব তথ্য রতনের কাছে জানতে চায় পুলিশ।
জেরার পাশাপাশি সারদার নথিপত্রের খোঁজে বিভিন্ন অফিসেও তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। কমিশনারেট সূত্রের খবর, সারদা ভ্রমণ সংস্থার এক মহিলা কর্মীকে নিয়ে রবিবার ওই সংস্থার মিডল্যান্ড পার্কের অফিসে তল্লাশি চালান গোয়েন্দারা। বেলঘরিয়ার বাসিন্দা ওই মহিলাকর্মী অফিসে দেবযানীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। পুলিশ জেনেছে, সারদার আর্থিক সংস্থায় ২ লক্ষ ৮৩ হাজার এজেন্ট ও আড়াই হাজার কর্মী ছিল। তাঁদের উপরে ভরসা করে গ্রামেগঞ্জে এটিএম পরিষেবা-সহ ব্যাঙ্ক তৈরিরও পরিকল্পনা ছিল সারদার। পুলিশ সূত্রের খবর, তদন্ত কমিশন ও সিট গঠন হওয়ার কথা শুনে কিছুটা বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে সারদা মালিককে। তুলনায় অনেক স্বাভাবিক দেবযানী ও তাঁদের ঘনিষ্ঠ অরবিন্দ সিংহ চৌহান। এ দিন সুদীপ্ত ছাড়াও অরবিন্দ ও মনোজকুমার নেগেলকে জেরা করা হয়। মঙ্গলবার সকালে দেবযানীকে জেরা করা হতে পারে।
|