জিন্দলের ঘোষণায় শালবনির আকাশে সংশয়ের মেঘ
দ্বেগ আছে। কিঞ্চিৎ সংশয়ও।
দু-মানুষ সমান উঁচু পাঁচিল আর সার দেওয়া কর্মী আবাসগুলির দিকে তাকিয়ে গভীর এক বিশ্বাসে বুক বাঁধা শালবনি তাই বলছে, ‘কারখানা হবে তো বাবু!’
তাদের প্রস্তাবিত কারখানায় কাঁচামালের ঘাটতির দোহাই দিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন জেএসডব্ল্যু স্টিলের কর্ণধার সজ্জন জিন্দল। আর সেই সূত্রেই শালবনির আকাশে এখন অনিশ্চয়তার মেঘ।
ঠিকাদার সংস্থার কর্মী গুরুচরণ শীট, বাচ্চু মাহাতোরা তাই বলছেন, “কারখানা চালু হতে যত দেরি হচ্ছে তত ভয় লাগছে, জানেন!” আর জিন্দলদের সংস্থায় প্রশিক্ষণ নিয়ে সদ্য নার্স হওয়া আসনাশুলি গ্রামের জয়শ্রী মাহাতো বলেই ফেলছেন, “সকালে কলেজে পড়ি। তারপর ১০টা-৫টা কাজ। ২ হাজার টাকা স্টাইপেন্ড পাই। কারখানা না হলে এই টাকাটাও তো বন্ধ হয়ে যাবে।”
বছর কয়েক আগেও সম্বৎসরের নাম মাত্র চাষটুকু সম্বল করে বেঁচে থাকা বুদ্ধেশ্বর মাহাতো কিংবা বাবলু রায়দেরও কারখানায় কর্মসংস্থানের কোনও স্বপ্ন ছিল না। কিন্তু বছর পাঁচেক আগে, ২০০৮ সালে ড্রোজার আর পে-লোডারের হুঙ্কার দিয়ে শালবনিতে ওই শিল্পলগ্ন শুরু হওয়ার পরে ‘বড় আশায়’ বুক বেঁধেছিলেন তাঁরা। দু-জনেই বলেন, “বর্ষায় একবার চাষ হত। তা দিয়ে আর কতটুকু চলে। তাই জিন্দলেরা জমি চাইতেই দিয়েছিলাম। দামও পেয়েছি। কিন্তু সেখানে চাকরি পাওয়ার আশাটাই আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছিল। সে স্বপ্নটা ভেঙে গেলে আর বাঁচব কী নিয়ে?”
পাঁচিল ঘেরা প্রকল্প এলাকা শালবনিতে। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
এই সংশয়ের আবহেও জিন্দলদের কারখানার টুকটাক কাজ চলেছে। চলছে স্বাস্থ্য শিবিরও। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিখরচায় চিকিৎসা, পরীক্ষা তো বটেই দুর থেকেও রোগীরা আসছেন। যেমন দেখা গেল বাঁকুড়ার জয়া মুর্ম্মুকে। জিন্দলের ঘোষণায় তাঁদেরও ভরসা ঈষৎ টলে গিয়েছে যেন। বলছেন, “সস্তায় ভাল চিকিৎসা পাব বলে এখানে আসা। কারখানা না হলে এই স্বাস্থ্য শিবির কতদিন চালাবেন ওঁরা!”
তবে এর মাঝেই ঘেরা পাঁচিল বরাবর রাস্তা তৈরি প্রায় শেষ। গোদাপিয়াশাল থেকে চন্দনকাঠ হয়ে অন্য একটি রাস্তা তৈরির কাজও চলছে। সন্দরা থেকে আর একটি রাস্তা তৈরির জন্য সমীক্ষাও শুরু হয়েছে। দানমারি থেকে অন্য রাস্তাটি তৈরি ও রেললাইনের উপর ওভার ব্রীজ তৈরির জন্যও পদক্ষেপ শুরু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
জিন্দলদের কারখানা সূত্রেই জানা গিয়েছে, কুলটি-সীতারামপুর থেকে আসবে কয়লা। কয়লার জন্য দুর্গাপুরে অফিসও করা হয়েছে। বিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির জন্য চিনের সাংহাই ইলেকট্রিক কর্পোরেশনের সঙ্গে বয়লার টার্বাইনের ব্যপারে চুক্তিও হয়ে গিয়েছে। কোলাঘাটের ছাতিন্দা থেকে রূপনারায়ণ নদীর উপর জল নিয়ে আসার কথা। কোন দিক দিয়ে জল নিয়ে আসা হবে তার সমীক্ষা শুরু হয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা বলতে, কাঁসাই নদীর অ্যানিকেত থেকে জল পাওয়া যায় কিনা তার জন্যও আবেদন করা হয়েছে। তাহলে?
জেএসডব্ল্যু এনার্জি লিমিটেডের (পশ্চিমবঙ্গ প্রকল্প) অ্যাসোসিয়েট ভাইস প্রেসিডেন্ট অলোক ভট্টাচার্য বলেন, “কারখানার পরিকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি যাবতীয় কাজ চলছে। ইস্পাত ও বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প শুরু হওয়ার আগে যা প্রয়োজন তার উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি করতে সমস্ত পদক্ষেপই করা হচ্ছে।” কিন্তু ঘোষণা অনুযায়ী ২০১৩ সালে উৎপাদন যে শুরু করা যাবে না তা প্রায় নিশ্চিত। সংস্থার অন্যতম কর্তা বিশ্বদীপ গুপ্ত ভরসা জোগাচ্ছেন, “আকরিক লোহা ছাড়া তো ইস্পাত কারখানা হতে পারে না। এটা ঠিক যে, আকরিক লোহা পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়তা না থাকায় কাজের গতি কিছুটা শ্লথ হয়েছে। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের সাহায্য নিয়েই আমরা এগিয়ে চলেছি। আমরা আশাবাদী।” আশায় বুক বেঁধে রয়েছে শালবনিও।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.