পশ্চিমবঙ্গে টিকে থাকা একমাত্র বড় শিল্প প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ ঘিরে ফের সংশয়ের আবহ।
রবিবার নয়াদিল্লিতে জেএসডব্লিউ স্টিলের কর্ণধার সজ্জন জিন্দল সংবাদসংস্থাকে জানিয়েছেন, আকরিক লোহা পাওয়ার সমস্যায় পশ্চিমবঙ্গের শালবনিতে তাঁদের ইস্পাত প্রকল্পের কাজ থমকে গিয়েছে। জিন্দলের বক্তব্য, কারখানা চালাতে গেলে দীর্ঘ মেয়াদে আকরিক লোহার জোগানের নিশ্চয়তা প্রয়োজন। তিনি বলেন, “সেটা নিশ্চিত করতে না-পারলে আমরা এগোতে পারছি না।” তাঁর দাবি, “বিষয়টি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। তাই এই মুহূর্তে প্রকল্পের কাজ আটকে যাচ্ছে।”
স্বাভাবিক ভাবেই জিন্দলের এই মন্তব্যে শালবনি প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। আকরিক লোহার জোগানে সমস্যার দায় অবশ্য কেন্দ্রের উপরই চাপিয়েছেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, এই প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকার তাদের যা করণীয় করেছে। কিন্তু কয়লা নিয়ে জাতীয় নীতি থাকলেও আকরিক লোহার ক্ষেত্রে তা নেই বলে সমস্যা হচ্ছে।
তবে কি শালবনির প্রকল্পও বাতিল হয়ে যাবে? জেএসডব্লিউ স্টিল সংস্থাটির শীর্ষ আধিকারিকদের দাবি, শালবনির প্রকল্পটি বাতিল হচ্ছে এমন নয়। রবিবার রাতে সংস্থার তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে প্রকল্পটি এগিয়ে নিয়ে যেতে ও রাজ্যের উন্নয়নে শরিক হতে তারা দায়বদ্ধ। সংস্থার অন্যতম কর্তা বিশ্বদীপ গুপ্ত বলেন, “প্রকল্প বাতিলের প্রশ্নই নেই। কারণ ইতিমধ্যেই শালবনিতে কয়েক হাজার কোটি টাকা লগ্নি হয়েছে। কোনও সংস্থার পক্ষেই এ রকম পরিস্থিতিতে প্রকল্প ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া সহজ নয়।”
শালবনিতে এক কোটি টনের (প্রথম পর্যায়ে অবশ্য ৩০ লক্ষ টন) ইস্পাত ও নিজস্ব ব্যবহারের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য জেএসডব্লিউ স্টিল পর্যায়ক্রমে ৩৫ হাজার কোটি টাকা লগ্নির প্রস্তাব দিয়েছিল বাম আমলে। সংস্থার দাবি, আকরিক লোহা পাওয়ার সমস্যা গোড়া থেকেই ছিল। সাম্প্রতিক কালে কর্নাটক, গোয়ার মতো আকরিক লোহাসমৃদ্ধ রাজ্যে দুর্নীতির অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বহু খনি বন্ধ হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। আকরিক লোহার জোগানের অভাবেই বছর দেড়েক ধরে কর্নাটকে জেএসডব্লিউ স্টিল তাদের কারখানায় পূর্ণ ক্ষমতার চেয়ে কম উৎপাদন করছে।
পশ্চিমবঙ্গের মতো যে সব রাজ্যে আকরিক লোহা নেই, সেখানে এ ধরনের প্রকল্প আরও বেশি করে সঙ্কটের মুখে পড়ছে। কারণ ওড়িশার মতো যে সব রাজ্যে আকরিক লোহা রয়েছে, তারা লোহা দেওয়ার বদলে নিজের রাজ্যে বাড়তি লগ্নির নিশ্চয়তা চাইছে। জিন্দলদের দাবি, প্রকল্পের শুরু থেকেই এই সমস্যা তাঁদের তাড়া করে ফিরছে। বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে তাঁরা কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় পক্ষের সঙ্গেই আলোচনা চালাচ্ছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পরে গোড়ার দিকে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কিছু বিষয়ে জিন্দলদের মতপার্থক্য ছিল। জমি অধিগ্রহণ বা রাজ্যের সঙ্গে চুক্তির মতো সেই সব সমস্যা সম্প্রতি মিটেছে। তাই এখন এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনও রকম অনিশ্চয়তা দেখা দিলে তার দায় কেন্দ্রের বলেই দাবি করছেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পার্থবাবু এ দিন বলেন, “জিন্দলদের এই প্রকল্পের জল, জমি-সহ সব সমস্যা আমরা মিটিয়ে দিয়েছি। ভবিষ্যতেও সব রকম সহযোগিতা করব। তবে আকরিক লোহা তারা কোথা থেকে আনবে, কী ভাবে আনবে, তা সংস্থার সমস্যা।” তবে আকরিক লোহার ক্ষেত্রেও কয়লার মতো জাতীয় নীতি থাকা উচিত বলে মনে করেন শিল্পমন্ত্রী। সে ব্যাপারে তিনি নিজে এবং মুখ্যমন্ত্রী, উভয়েই কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছেন। পার্থবাবুর কথায়, “কয়লার জাতীয় নীতি রয়েছে। তাই আমাদের রাজ্য থেকে কয়লা নিয়ে অন্য রাজ্য ব্যবহার করতে পারছে। কিন্তু আকরিক লোহা নিয়ে জাতীয় নীতি নেই বলে বাধা পাচ্ছে রাজ্যের শিল্পায়ন প্রক্রিয়া।”
|