|
|
|
|
৮ এপ্রিল আসে চূড়ান্ত চিঠি |
সেবি মুম্বইয়ে ডাকতেই উধাও হন সারদা-কর্তা
জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় • কলকাতা |
ভাঁড়ার ফাঁকা। এগিয়ে আসছে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার দিন। এর মধ্যেই এল সেবি-র চূড়ান্ত চিঠি। যেখানে তারা জানিয়ে দেয়, পাঠাতে হবে সংশ্লিষ্ট সব নথি। হাজিরা দিতে হবে মুম্বইয়ে, সেবি-র দফতরে। না হলে সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেশন অফিস-কে (এসএফআইও) সারদার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করতে বলবে তারা। সেবি-র তদন্তের ফাঁস যে গুটিয়ে আসছে, বুঝতে পারছিলেন সুদীপ্ত সেন। তদন্তকারীরা মনে করছেন, সেবি-র এই চূড়ান্ত সমন পাওয়ার পরেই অতি দ্রুত কলকাতা ছেড়ে গা ঢাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সুদীপ্তবাবু। তাঁরা জানিয়েছেন, সুদীপ্ত সেনের অফিস থেকে ওই চিঠি, সমন ও অন্য নথি পাওয়া গিয়েছে।
সুদীপ্তবাবুর সঙ্গে বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি-র চিঠির সম্পর্ক বছর তিনেকের। তদন্তকারী অফিসারেরা বলছেন, ২০১০ সালের মাঝামাঝি সারদা গোষ্ঠীকে প্রথম চিঠি পাঠায় সেবি। চিঠিতে সুদীপ্তবাবুকে তারা জানায়, এ ভাবে টাকা তোলাটা বেআইনি কাজ। তাদের অনুমতি ছাড়া বাজার থেকে টাকা তোলা যাবে না। কারণ, সেবি আইনের ১১এ ধারা অনুযায়ী, সব কালেক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিম (সিআইএস) সেবি-র আওতায় আসে।
এর পর থেকেই সেবি-র সঙ্গে সারদা গোষ্ঠীর চিঠি-পাল্টা চিঠি চলতে থাকে। সারদার বিভিন্ন সংস্থা ধরে বারবার চিঠি পাঠাতে থাকে সেবি। নানা আইনগত প্রশ্নও তোলা হয়। ওই সময় তারা সুদীপ্তকে দু’বার মুম্বইয়ে তাদের অফিসে ডেকে পাঠায়। গত বছর নভেম্বরের শেষে সেবি-র দ্বিতীয় শুনানিতে আইনজীবী নরেশ বালোটিয়া এবং দেবযানীকে সঙ্গে নিয়ে মুম্বইয়ের অফিসে হাজিরাও দেন সুদীপ্ত।
কিন্তু সারদা কর্তার সঙ্গে কথা বলে সেবি যে সন্তুষ্ট হয়নি, সেটা এ বছরের গোড়াতেই স্পষ্ট হয়ে যায়। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, জানুয়ারি থেকে সারদা গোষ্ঠীর কাজকর্ম নিয়ে তদন্তে গতি আনে সেবি। মার্চের মাঝামাঝি সারদার মালিকের কাছ থেকে এক গুচ্ছ নথিপত্র চেয়ে পাঠায় তারা। নথি পাঠানো নিয়ে সেবি এবং সারদার মধ্যে কিছুটা টানাপোড়েনও চলে। সুদীপ্ত সেনের সংস্থা এত বেশি এবং অপ্রাসঙ্গিক নথি পাঠাতে থাকে যে সেবি জানিয়ে দেয়, ঠিক নথি পাঠাতে হবে। এই ভাবে সুদীপ্ত তদন্তে ব্যাঘাত ঘটাতে চাইছেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।
কিন্তু এ ভাবে দীর্ঘদিন সেবি-কে আটকে রাখতে পারেননি সুদীপ্ত। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সেবি-র শেষ চিঠির পর সুদীপ্ত সেন ভয় পেয়ে যান। সেবি-কে অনুরোধ করেন, তাদের কলকাতায় শাখা অফিস থেকেই যেন সারদা সংক্রান্ত কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সেবি তাতেও রাজি ছিল। তদন্তকারী অফিসারেরা মনে করছেন, সেবি-র কলকাতা অফিস থেকে তদন্ত পরিচালিত হলে সেখানে প্রভাব খাটানোর মতলবে ছিলেন সুদীপ্ত।
মার্চের মাঝামাঝি সেবি যে চিঠি পাঠায়, সেখানে বলা হয়েছিল, এ বারে যদি সুদীপ্ত সেন কোম্পানির সমস্ত নথিপত্র জমা দিতে না পারেন, তা হলে সংবাদপত্রে ঘোষণা করা হবে, সারদা গোষ্ঠী বাজার থেকে বেআইনি ভাবে টাকা তুলছে। সেবি-র এই চিঠির জবাবে সুদীপ্ত সেন পাল্টা চিঠি দেন। তাতে নিজের কোম্পানির অন্যান্য কর্তা ও কর্মীদের উপর সব দায় চাপিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “সব কাগজ দিতে পারছি না। কোম্পানির কর্মীরা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।” কিন্তু সেবি এ বারে কড়া অবস্থানে অনড় থাকে। ৮ এপ্রিল সুদীপ্তকে চিঠি দিয়ে তারা জানায়, সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে সব দায় তাঁকেই নিতে হবে। কোম্পানির সমস্ত কাগজ সেবি-র মুম্বইয়ের অফিসে পাঠাতেই হবে। না হলে এসএফআইও-কে সারদা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্ত করতে আর্জি জানাবে সেবি। সমন পাঠিয়ে তাঁকে ডেকেও পাঠানো হয় মুম্বইয়ে।
এই চিঠির পরেই সুদীপ্তবাবু বুঝে যান, সেবি ফাঁস ধীরে ধীরে গুটিয়ে আনছে। এর মধ্যে গত বছরের নভেম্বর থেকে টাকাও ঠিক ভাবে উঠছিল না। সারদা গোষ্ঠীর ১৬০টি সংস্থা চালাতে রোজ ৮০ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছিল। বাজার থেকে তা-ও তুলতে পারছিল না সারদা গোষ্ঠী। অথচ এপ্রিলের মাঝমাঝি থেকে লগ্নিকারীদের টাকা ফেরত দিতে হত। তবে তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, সেবি-র শেষ চিঠি সারদা গোষ্ঠীর অফিসে এসে পৌঁছয় এপ্রিলের ১০ তারিখে।
তত ক্ষণে পালিয়ে গিয়েছেন সুদীপ্ত সেন।
|
পুরনো খবর: ৬৩ পেটি ঘাঁটার পরে ১৭০ পেটি, রক্ষে করুন! |
|
|
|
|
|