সারদার সংসার
এনআরএ
নন-রেসিডেন্ট আমেরিকান। কলসেন্টার বা বড়-সড় আইটি ফার্মের কর্মীদের আদলে মজা করে নিজেদের এই নামেই ডাকতেন সারদার কোনও কোনও কর্মী। কারণ, তথ্যপ্রযুক্তির অফিসের মতোই সল্টলেকের মিডল্যান্ড পার্কের অফিসও প্রায় আমেরিকার ঘড়ি মেনেই চলত। পিক-আওয়ার মাঝরাত থেকে ভোর চারটে অবধি। কেন এই রুটিন? শোনা যায়, তখনই বস্তা-বন্দি কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা অফিসে ঢুকত। হিসেব-নিকেশ সেরে কাকভোরে নিশাচর সিএমডি স্যার বাড়ি ফিরতেন।

টেবিলে রিভলভার
সিএমডি স্যার-এর টেবিলে পাজামার ছিটকাপড়ের মতো জ্যাকেটে মোড়া বস্তুটি দেখেই বুকটা ছ্যাঁত করে উঠেছিল সংস্থার অধস্তন কর্মীর। কটা চোখের তারা নাচিয়ে স্যার অভয় দেন, “ওটা আমার শত্রুদের জন্য। জীবনে অনেক টেনশন, একটা রিভলভার রাখতেই হয়।” সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে ওই আগ্নেয়াস্ত্র থাকার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন, সারদা-পরিবারের কোনও কোনও সদস্য। সোনমার্গে সুদীপ্ত ধরা পড়ার সময়ে অবশ্য তাঁর কাছ থেকে কোনও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়নি।

ঘরের মধ্যে ঘর
মিডল্যান্ড পার্কের অফিসের খাস কামরার ভিতরের গোপন কুঠুরি। বাইরের ঘরে পাশাপাশি চেয়ারে বসেন দেবা ও দেবী। দু’টি চেয়ারেই এক সঙ্গে বিছানো একখানি ময়লাটে সাদা তোয়ালে। পাশাপাশি, ওই তোয়ালের আসনে বসেই সাম্রাজ্য চালাতেন সুদীপ্ত ও দেবযানী। কোনও কোনওদিন খাস কামরার মিটিংয়ে দেখা যেত দেবযানী নেই। কিন্তু চেয়ারে তাঁর ব্যাগটি রাখা। সারদা-পরিবারের পোড়খাওয়া সদস্যরা বুঝে যেতেন ম্যাডাম রয়েছেন, ভিতরের কুঠুরিতে।

শোধবোধ
সুদীপ্ত সেন ধরা পড়ার খবরে বেজায় খুশি মেচেদার একটি কারখানায় কর্মরত বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার এক কর্মী। বছর দুয়েক আগে সুদীপ্তের ব্যক্তিগত দেহরক্ষীদের অন্যতম ছিলেন ওই যুবক। ডিউটির সময়ের মা-বাপ নেই, স্যার ডাকতেন যখন-তখন। চাকরি ছাড়ার মতলবে চুপিচুপি অন্য একটি সংস্থায় যোগাযোগ করায় সুদীপ্ত তাঁকে লাঠিপেটা করেছিলেন। কাঁদতে কাঁদতে সিএমডি-কে অভিশাপ দিয়ে কাজ ছাড়েন ওই যুবক। এখন বন্দি সুদীপ্তের ছবি দেখে সারদার এক প্রাক্তন আধিকারিককে ফোন করেছেন তিনি। হেসে বলেছেন, “এত দিনে কলজে ঠান্ডা হল!”

শহিদ দু’জন
কলকাতার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত দু’জন সাংবাদিককে মাথায় বসিয়ে ঢালাও খরচ করে সকালবেলা ও দ্য বেঙ্গল পোস্ট নামে দু’টি খবরের কাগজ চালাতে শুরু করেছিলেন সুদীপ্ত সেন। কিন্তু ক’জন সাংবাদিককে নিয়োগের জেরে প্রভাবশালী একটি মহলের সঙ্গে বিরোধ বাধে। প্রথমেই সকালবেলা-র ভারপ্রাপ্ত সাংবাদিককে সরতে হয়। সিএমডি বললেন, “ওঁকে বিশেষ দায়িত্বে গুয়াহাটি পাঠানো হচ্ছে। তিন মাস পরে ফের অফিসে আসবেন।” তিনি ফেরেননি। সকালবেলা-র উপদেষ্টা হন কুণাল ঘোষ। ইংরেজি কাগজের ভারপ্রাপ্ত সাংবাদিকও বেশি দিন টেকেননি। ২০১১-র বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে উপদেষ্টা থেকে সংস্থার গ্রুপ সিইও হন কুণাল ঘোষ। সিবিআই-এর কাছে চিঠিতে এই কুণালের বিরুদ্ধেই সুদীপ্ত নানা অভিযোগ করেছেন।

চ্যানেল তুমি কার
তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ এক চিত্রশিল্পীর টিভি চ্যানেলের গোলমাল থামাতে রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল। পরে সেই চ্যানেল কিনতে হয় সুদীপ্তকে। সেটির মাথায় বসানো হয় তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষকে। অর্পিতাই সুদীপ্তের বিরুদ্ধে কর্মীদের মাইনে না-দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন।

তথ্য: ঋজু বসু ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.