গত ডিসেম্বরে তাঁর শেষ পুরুলিয়া সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, আতঙ্কের দিন পিছনে ফেলে রেখে শুধু পর্যটনকে সামনে রেখেই আবার ঘুরে দাঁড়াবে অযোধ্যা পাহাড়। অযোধ্যাকে ঘিরে ‘হোম-ট্যুরিজম’-এর পরিকল্পনার কথাও তিনি জানিয়েছেন। এর পরে কেটে গিয়েছে চার মাস। পর্যটন পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য কেন্দ্রের পাঠানো ১ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের কাছে পড়ে রয়েছে মাস চারেক। কাজ এগোয়নি।
কেন? প্রশাসন সূত্রের খবর, অযোধ্যায় পর্যটন পরিকাঠামো গড়ার জন্য রাজ্য পর্যটন দফতর মনোনীত সংস্থা যে প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করেছে, তা জেলা প্রশাসনের মনঃপূত না হওয়ায় টাকা এসে পড়ে থাকলেও কাজ শুরু হয়নি। কী রয়েছে ওই রিপোর্টে? জানা গিয়েছে, অযোধ্যার যে সমস্ত স্থানে এখনও পর্যটকদের পা পড়েনি, সেখানে যাতায়াতের জন্য রাস্তা গড়া। অতিথি নিবাস তৈরি, বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ, আলো ও পানীয় জলের ব্যবস্থা, সৌন্দর্যায়ন ইত্যাদি। পাহাড়ে বাসিন্দা, পেশায় গাইড বেণু সেন বলেন, “বামনি ফলসে যাওয়ার রাস্তা নেই। টুরগা ফলস দেখতে যাওয়া যথেষ্ট ঝুঁকির। রাস্তা সরু ও খাড়াই। এখানে সিঁড়ি ও রেলিং করলে ভাল হয়। উসুলডুংরি থেকে কালীঝর্না যাওয়ার রাস্তাও খারাপ।” অযোধ্যা পাহাড় যাওয়ার অন্যতম প্রধান শিরকাবাদ-হিলটপ রাস্তারও বেহাল অবস্থা।
স্থানীয় বিধায়ক নেপাল মাহাতো বলেন, “বছর দেড়েক আগে তৎকালীন কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রী সুবোধকান্ত সহায়কে পাহাড়ে নিয়ে এসেছিলাম। তিনি সরজমিন পাহাড় ঘুরে দেখার সময় তাঁকে এখানকার পর্যটন পরিকাঠামো গড়ার জন্য কয়েকটি প্রস্তাব দিই। ফিরে গিয়ে তিনি প্রথম দফায় ৪ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেন। টাকা এসে পড়ে থাকলেও কেন জেলা প্রশাসন কাজ শুরু করতে পারছে না, তা আমার কাছে পরিষ্কার নয়।”
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, বিভিন্ন দফতরের হাত ঘুরে অযোধ্যার পর্যটন সংক্রান্ত সেই ফাইল এখন রয়েছে জেলাশাসক মহম্মদ গুলাম আলি আনসারির কাছে। তাঁর কথায়, “যে সংস্থা প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করেছে, তাতে কিছু অসঙ্গতি থাকার জন্যই টাকা থাকা সত্ত্বেও কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। বিষয়টি আমরা রাজ্য পর্যটন দফতরকে জানিয়েছি।” প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, বাঘমুণ্ডি-বলরামপুর সড়কের কাছাকাছি শনকূপি মৌজার কিছু কাজ নিয়ে যে সংস্থা প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করেছে, সেই সংস্থার সঙ্গে জেলাশাসকের মতানৈক্য তৈরি হয়েছে। সোমবার পুরুলিয়ায় এসে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যের পর্যটন সচিব বিক্রম সেন। তিনি বলেন, “প্রকল্প রিপোর্টে পর্যটকদের থাকার জায়গার কোনও উল্লেখ নেই। সেটা আমাদের যোগ করতে হবে। সেটা নিয়ে এ দিন আলোচনা করেছি। কাজ শুরু হবে।”
নেপালবাবুর কথায়, “আমি বিধানসভায় পযর্টনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর কাছে কাজ শুরু না হওয়ার কারণের পাশাপাশি জানতে চেয়েছি, অযোধ্যার জন্য কেন্দ্রের বরাদ্দ ৪ কোটি ৯৪ লক্ষের মধ্যে কেন মাত্র ১ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা জেলায় এসেছে। এই প্রশ্নের এখনও কোনও জবাব পাইনি।” তাঁর অভিযোগ, এই প্রকল্পে বরাদ্দ বাকি তিন কোটি টাকা রাজ্য সরকার অন্য প্রকল্পে খরচ করেছে। যদিও পর্যটনমন্ত্রীর বক্তব্য, “এই অভিযোগ ঠিক নয়। এটা কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ। টাকা রাজ্যের কাছেই আছে। পর্যায়ক্রমে তা জেলায় পাঠানো হবে।” তিনি আরও জানান, যে প্রকল্প রিপোর্ট রয়েছে, তার ভিত্তিতেই কাজ হবে। ওই প্রকল্প রিপোর্ট বদলানো যাবে না। কাজ যাতে শীঘ্রই শুরু হয়, তা তিনি দেখবেন বলেও জানিয়েছেন। |