ভাঙচুর সিউড়িতে
শিশু মৃত্যু, ফের অভিযুক্ত দেবাশিস দেবাংশী
বিতর্ক যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না সিউড়ি সদর হাসপাতালের বিতর্কিত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ দেবাশিস দেবাংশীর। ফের তাঁর বিরুদ্ধে গাফিলতিতে সদ্যোজাতের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। শিশু মৃত্যুর জেরে শুক্রবার ভাঙচুর হয়েছে সিউড়ি সদর হাসপাতালে।
গত কয়েক বছরে ওই চিকিৎসকের গাফিলতিতে সদ্যোজাতের মৃত্যুর একাধিক অভিযোগ উঠেছে। তাঁর তত্ত্বাবধানে থাকা প্রসূতিকে ছেড়ে দেওয়ার পর রাস্তায় এবং বাসে বাচ্চা প্রসব হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। একাধিকবার এমন অভিযোগের তদন্তও হয়েছে। তাঁকে বদলি করা হলেও এক অজ্ঞাত করণে তিনি সিউড়ি সদর হাসপাতালে বহাল রয়েছেন। এটা কী করে সম্ভব? স্বাভাবিক ভাবে এই প্রশ্ন জেলার আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়ালেও তার স্পষ্ট উত্তর কোনও তরফ থেকে মেলেনি। শুক্রবারের ঘটনা তার প্রমাণ। প্রসঙ্গত, প্রসব করাকালীন ও পরে প্রসবের শিশু মৃত্যুর অভিযোগে তাঁকে গত বছর অগস্ট মাসেই সাসপেন্ড করা হয়েছিল। তিন মাস সাসপেন্ড থাকার পরে তিনি ওই হাসপাতেলে কাজে যোগ দেন। কিন্তু জেলার অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের অভিমত, “যে কারণেই হোক, কোনও চিকিৎসক সাসপেন্ড হলে ফের তাঁকে ওই একই হাসপাতালের কাজে যোগ দিতে দেওয়াটা ঠিক হয়নি।” শুধু তাই নয়, কয়েক মাস আগেই সিউড়ির একটি নার্সিংহোমে দেবাশিস দেবাংশী কেন কাজ করছেন, এই প্রশ্ন তুলে ওই নার্সিংহোমে বন্দুক উঁচিয়ে চড়াও হওয়ার অভিযোগ উঠেছিল আশিস দে নামে তৃণমূলের এক নেতার বিরুদ্ধে।
নিজের অফিসেই বসে আছেন সুপার। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মহম্মদবাজার থানা এলাকার শ্রীরামপুর গ্রামের বধূ তিথি সাহা বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ওই সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ছিলেন দেবাশিস দেবাংশী। ওই বধূর বাবা জীবন মণ্ডল বলেন, “ওই দিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে মেয়েকে কয়েকটি ইঞ্জেকশন দিয়ে হাসপাতাল থকে চলে যান ওই চিকিৎসক। পরের দিন সকাল ৯টার সময় এলে আমার মেয়েকে লেবার রুমে নিয়ে যান এবং তারপরেই উনি হাসপতাল ছাড়েন।” জীবনবাবুর অভিযোগ, “ওই দিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও ওই চিকিৎসকের দেখা পাইনি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ চিকিৎসক দেবাশিসবাবু এসে নার্সদের বলে যান অস্ত্রোপচার করে বাচ্চা প্রসব করাতে হবে। সেই মতো নার্সরা আমার কাছে স্বাস্থ্যবিমার কোনও কার্ড আছে কি না তা জানতে চান। কার্ড থাকায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সই করে তা জমা দিই এবং রাত দেড়টা নাগাদ ওই চিকিৎসক এসে মেয়ের ‘ফরসেপ ডেলিভারি’ করান। কিছুক্ষণের মধ্যেই নাতির মৃত্য হয়।” তাঁর দাবি, শিশুটির গলায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে কাটাকুটির চিহ্ন রয়েছে।
কেনই বা ওই চিকিৎসক প্রথমে অস্ত্রোপচার করার কথা বললেন? তার পরে সিদ্ধান্ত বদল করে ‘ফরসেপ ডেলিভারি’ করেন? অভিযুক্ত চিকিৎসকের ফোন পরিসীমার বাইরে থাকায় অভিযোগের উত্তর মেলেনি। এমনকী বিকেলে তাঁর বাড়িতেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। এর সদুত্তরও মেলেনি হাসপাতাল সুপার মানবেন্দ্র ঘোষের কাছ থেকে। তিনি শুধু বলেন, “লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। তাঁরা যা নির্দেশ দেবেন সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে ‘ফরসেপ ডেলিভারি’ কি করা যায়? স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “সেটা পরিস্থিতির উপরে নির্ভর করে। এক্ষেত্রে ঠিক কী ঘটেছিল তা না জেনে বলা যাবে না।” হাসপাতালের সুপার অবশ্য বলেন, “ফরসেপ করলেন কেন? এই প্রশ্ন করা হলে, ওই চিকিৎসক বলেন, ‘মাথা বেরিয়ে এসেছিল। তাই ফরসেপ করেছি।”
এ দিকে, শিশু মৃত্যুর জেরে শুক্রবার সকালে আত্মীয়স্বজন নিয়ে হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখান বধূর বাবা। সেই সময় চিকিৎসক দেবাশিসবাবু মোটরবাইকে করে হাসপাতালে আসছিলেন। তাঁকে দেখতে বিক্ষুব্ধরা ধাওয়া করেন। বেগতিক বুঝে বাইক ঘুরিয়ে চম্পট দেন চিকিৎসক। পরে ভাঙচুর করার পাশাপাশি ওই প্রসূতির আত্মীয়স্বজন হাসপাতাল সুপারের কাছে লিখিতভাবে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত গাফিলতির আভিযোগ জমা দেন। জীবনবাবু জানান, অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালিন সিউড়ির অন্য এক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে তাঁর মেয়ের নিয়মিত চিকিৎসা করিয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ থেকে এক জন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞকে ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে তিনি রিপোর্ট পেশ করবেন। তার পরে পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির হবে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.