হাসপাতাল খালি করে দুই ফার্মাসিস্ট কাজহীন ক্লিনিকে
যেখানে তাঁদের দরকার, সেখানে তাঁরা নেই। অথচ, যেখানে দরকার নেই, সেখানে তাঁরা রয়েছেন!
তাঁরা, অর্থাত্‌ দু’-দু’জন ফার্মাসিস্ট, যাঁরা সরকারি হাসপাতালে পদ খালি রেখে দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত্‌ কাজ করে যাচ্ছেন সল্টলেকে স্বাস্থ্যভবনের একতলায়, ফার্স্ট এড ক্লিনিকে। এই ধরনের ক্লিনিকে যে ফার্মাসিস্টদের কোনও কাজ থাকে না, তা স্বাস্থ্যকর্তারাও স্বীকার করছেন। তা সত্ত্বেও দু’জন ফার্মাসিস্ট বছরের পর বছর সেখানে কী করছেন, তার জবাব জোগায়নি তাঁদের মুখে।
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও ডিস্ট্রিক্ট রিসার্ভ স্টোরে (যেখানে জেলার ওষুধ এসে জমা থাকে) এই মুহূর্তে ফার্মাসিস্টের প্রায় ৯০০ পদ খালি। গত আট-নয় বছর স্বাস্থ্য দফতর কোনও ফার্মাসিস্ট নিয়োগ করেনি। ফলে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ফার্মাসিস্টের অভাব ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
ফার্মাসিস্টরা হাসপাতালে কী ধরনের কাজ করেন?
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, প্রতি মাসে হাসপাতালে কী ওষুধ কতটা কেনা হবে, জরুরি ভিত্তিতে কোন কোন ওষুধ লাগবে, কোন ওয়ার্ডে কখন কতটা ওষুধ পাঠানো হবে এ সব দেখেন ফার্মাসিস্টরা। আউটডোর থেকে যে ওষুধ লিখে দেওয়া হয়, সেটাও হাসপাতালের ফার্মাসি থেকে সংগ্রহ করেন রোগী বা তাঁর বাড়ির লোক। ফার্মাসিস্টরা ওষুধ খাওয়ার সময় ও নিয়ম তাঁদের বুঝিয়ে দেন।
সরকারি হাসপাতালে ফার্মাসিস্টের এই আকাল সত্ত্বেও ২০০৭ সাল থেকে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট দেবাশিস ভট্টাচার্যকে এবং ২০১০ সাল থেকে ‘রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ অপথ্যালমোলজি’র (আরআইও) ফার্মাসিস্ট নিশাকান্ত পালকে স্বাস্থ্যভবনের ফার্স্ট এড ক্লিনিকে এনে রাখা হয়েছে। তাঁরা কিন্তু মাইনে পান সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল থেকে। নিশাকান্তবাবু চলে আসার পরে আরআইও-র মতো ২৪৮ শয্যার হাসপাতালে গত আড়াই বছর ধরে কোনও ফার্মাসিস্ট নেই। অন্য দিকে, ১০০ শয্যার বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে ফার্মাসিস্টদের অনুমোদিত পদ পাঁচটি। রয়েছেন তিন জন। তাঁদের অন্যতম দেবাশিসবাবু গত ছ’বছর ধরে রয়েছেন স্বাস্থ্যভবনের ক্লিনিকে।
ফার্স্ট এড ক্লিনিকে তো শুধু রক্তচাপ, জ্বর মাপা হয়, টুকটাক কেটে যাওয়া ফেটে যাওয়ার চিকিত্‌সা হয়, অল্প ব্যথার ওষুধ, জ্বরের ওষুধ, পেট খারাপের ওষুধ দেওয়া হয়। সেখানে দু’জন চিকিত্‌সক থাকা সত্ত্বেও দু’জন ফার্মাসিস্টকে হাসপাতাল থেকে তুলে আনার অর্থ কী?
স্বাস্থ্য দফতরের অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের এক উচ্চকর্তার অভিযোগ, “শাসকদলের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে এই ফার্মাসিস্টদের যোগ রয়েছে। সেই জোরে বছরের পর বছর হাসপাতালের চাকরি না করে এই ক্লিনিকে বসে রয়েছেন। তাঁদের কোনও কাজ নেই। শুধু কে কোথায় বদলি হবে এই সব তত্ত্বাবধান করে বেড়াচ্ছেন। এ তো তবু ফার্মাসিস্ট, বেশ কয়েক বছর পর্যন্ত দুই হাসপাতাল থেকে দু’জন অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার এখানে এসে বিনা কাজে পড়েন!”
এই অভিযোগের বিরোধিতা করে ফার্মাসিস্ট দেবাশিস ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমাকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এখানে এনেছেন, তাই আছি। সরকার যদি বিনা কাজে আমাকে রেখে দেন তা হলে এটা তার সমস্যা।” তিনি ক্লিনিকে ঠিক কী কাজ করেন, তা অবশ্য ব্যাখ্যা করতে চাননি দেবাশিসবাবু। আর নিশাকান্তবাবুর অভিযোগ, “আরআইও-তেও আমাকে বসিয়ে রাখত। আমি আসতে চাইনি। ওখানকার কর্তারাই জোর করে আমাকে এখানে পাঠিয়েছেন। আমি আরআইও-র স্টোরে থাকলে ওঁদের অনেক দুর্নীতি ধরে ফেলতাম, তাই।”
অভিযোগের জবাবে আরআইও-র কার্যনির্বাহী অধিকর্তা গৌতম ভাদুড়ি বলেন, “ওই ফার্মাসিস্টকে যে কাজই করতে বলা হত তিনি করবেন না বলে জানিয়ে দিতেন। আমাদের সুবিধার থেকে অসুবিধা বেশি হচ্ছিল। তাই ওঁকে স্বাস্থ্যভবনে পাঠানো হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.