|
|
|
|
দুবরাজপুর |
‘রেফার’ হওয়া অন্তঃসত্ত্বার পথেই প্রসব |
অরুণ মুখোপাধ্যায় • সিউড়ি |
দয়াল সেনগুপ্ত • দুবরাজপুর |
জেলা হাসপাতালগুলির ‘রেফার-রোগ’ যে কতটা গুরুতর, বুধবার তার সাক্ষী রইল দুবরাজপুর।
রক্তচাপ বেশি, স্রেফ এই কারণে সিউড়ি সদর হাসপাতাল থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া এক অন্তঃসত্ত্বা প্রসব করলেন রাস্তাতেই, দুবরাজপুর থানার একেবারে সামনে। পুলিশ মা ও শিশুকে ঠিক সময়ে স্থানীয় গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানোয় দু’জনেই এখন সুস্থ আছেন। কিন্তু রেখা বাউরি নামে ওই বধূর বাড়ির লোকেদের ক্ষোভ, “কী এমন সমস্যা ছিল যে, জেলার সদর হাসপাতাল চিকিৎসা করতে পারল না? তার ঘণ্টা চারেক পরে রাস্তায় স্বাভাবিক প্রসব হল?”
বস্তুত, এর উত্তর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছেও ঠিক মতো নেই। ঘটনা হল, মঙ্গলবার রাতে দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে ‘রেফার’ হয়েই সদর হাসপাতালে ভর্তি হন ওই প্রসূতি। তা হলে আবার ‘রেফার’ করা হল কেন? এই প্রশ্নের সরাসরি জবাব এড়িয়ে সদর হাসপাতালের সুপার মানবেন্দ্র ঘোষের দাবি, “এ দিন কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই রোগিণীকে রেফার করে দেওয়ার পরে অন্য এক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের অধীনে তাঁকে ভর্তি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তার আগে ওঁরা কোথায় চলে গেলেন, বলতে পারব না।” অর্থাৎ, ‘রেফার’ করা সত্ত্বেও রেখাদেবীর চিকিৎসা
যে সদর হাসপাতালেই সম্ভব ছিল, তা প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছেন সুপার।
সিউড়ি হাসপাতাল সূত্রের খবর, এ দিন যে চিকিৎসক রেখাদেবীকে বর্ধমানে ‘রেফার’ করেছেন, তিনি স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ দেবাশিস দেবাংশী। এর আগেও অনেক বার ‘কর্তব্যে অবহেলার’ অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। গাফিলতির সেই সব অভিযোগকে ঘিরে হাসপাতালে একাধিক বার হাঙ্গামাও হয়েছে। সদর হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য তথা সিউড়ির পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “ওই চিকিৎসককে অনেক বার সতর্ক করা হয়েছে। কয়েক বছর আগে এমনই রাস্তায় প্রসব হওয়ার ঘটনার জেরে জেলাশাসক ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি বসিয়েছিলেন। দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে বদলিও করা হয়েছিল। কোর্টে গিয়ে তিনি বদলি ঠেকিয়েছেন।” |
|
সদ্যোজাতকে নিয়ে দুবরাজপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রেখাদেবী।-নিজস্ব চিত্র |
দেবাশিসবাবুর দাবি, “ওই রোগিণীর অবস্থা খারাপ ছিল। উচ্চ রক্তচাপ (১৭০/১৩০) থাকায় খিঁচুনি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ডাক্তারি ম্যানুয়াল মেনেই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে তাঁকে আমি বর্ধমানে রেফার করি। পরে শুনি, অন্য চিকিৎসকের অধীনে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল। এর পরে কী হয়েছে, জানি না।”
রেখাদেবীর শ্বশুরবাড়ি ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া জেলার কুসুমনগরে। এ দিন সন্ধ্যায় দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতালের শয্যায় বসে তিনি বলেন, “রাতে ওই হাসপাতালে ভর্তি হই। কিন্তু তখন কোনও চিকিৎসক আমাকে দেখেননি। বুধবার সকালে যে চিকিৎসক দেখেন, তিনি বলেন রক্তচাপ খুব বেশি। এখানে প্রসব হবে না। আমি বার বার অনুরোধ করি, অন্য জায়গায় না পাঠাতে। ওই চিকিৎসক কোনও কথা না শুনে বর্ধমানে রেফার করে দিয়ে চলে যান।”
রেখাদেবীর স্বামী আনন্দ বাউরি বলেন, “দিনমজুরি করে সংসার চালাই। বর্ধমানে গিয়ে যা খরচ হত, তা আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব ছিল না। বাধ্য হয়ে বাসে করে স্ত্রীকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম।”
দুপুর ২টো নাগাদ প্রচণ্ড প্রসব-যন্ত্রণা হওয়ায় স্ত্রীকে দুবরাজপুর থানার সামনে নামান আনন্দবাবু। কর্ত্যবরত এএসআই সমীর দাস দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতালে খবর দেন। হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুল্যান্স আসার আগেই রাস্তায় পুত্র সন্তানের জন্ম দেন রেখাদেবী। পথচারী মহিলারা এগিয়ে এসে রেখাদেবীর সম্ভ্রম রক্ষা করেন। কিন্তু সদর হাসপাতাল যা নিদর্শন রাখল, তাতে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার সম্ভ্রম বজায় রইল কি? |
|
|
|
|
|