|
|
|
|
জবাব সূর্যেরও |
শিশুমৃত্যুর জন্য বামফ্রন্টকেই দায়ী করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
রাজ্যে সাম্প্রতিক শিশুমৃত্যুর জন্য বামফ্রন্ট সরকারের ‘অপদার্থতা’কেই শূলে চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
৩৪ বছরের বাম জমানায় রাজ্যের ভেঙে-পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় প্রচুর শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী বুধবার নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের বিশেষ অধিবেশনে অভিযোগ করেন, “শিশু চিকিৎসার কোনও পরিকাঠামোই তো বামফ্রন্ট সরকার করেনি। শিশু হাসপাতালই তো নেই! ওদের আমলে তো বছরে প্রচুর শিশু মারা যেত। এখন এক দিনে ৩০টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে যাঁরা স্বাস্থ্য দফতর নিয়ে জ্ঞান দিতে শুরু করেছেন, তাঁরা এত দিন যা করে গিয়েছেন, তাতে বোধবুদ্ধি থাকলে একটাও কথা বলতেন না!” এই ‘নেই রাজ্যে’র ক্ষমতায় এসে বিধানচন্দ্র শিশু হাসপাতালে তিনি যে নতুন একটি ইউনিট (সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট) তৈরি করেছেন, সে কথাও এ দিন জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে তাঁর ঘোষণা, “জেলায় জেলায় মহকুমাগুলিতে বেশ কয়েকটি ১০তলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়ব। যা কথা দিয়েছি, প্রত্যেকটাই পূরণ করব। খালি আমায় একটু সময় দিন!”
গত সপ্তাহে পরপর মৃত শিশুগুলির বেশির ভাগই কম ওজনের ছিল বলে মমতার দাবি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘অপুষ্টিতে ভোগা মায়েদের জন্যই এমন কম ওজনের বাচ্চা জন্মায়।” গ্রাম-গঞ্জ থেকে সদ্যোজাত মুমূর্ষু বাচ্চাদের কেন কলকাতায় নিয়ে আসতে হবে, এই প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, “গ্রামীণ হাসপাতালগুলিতে উন্নত পরিকাঠামো ব্যবস্থা তৈরির বদলে সব টাকা খেয়ে নিয়েছে বামেরা! সিপিএম ইট-বালি দিয়ে হাসপাতালের ঘর তৈরি করেছে কিন্তু চিকিৎসক, নার্স রাখেনি। ৫ হাজার হাসপাতাল না-করে সব রকমের ব্যবস্থা রয়েছে, এমন ৫০০টি হাসপাতাল তৈরি করলে হয়তো এ সমস্যা হত না। গ্রাম-জেলায় ভাল পরিস্থিতি থাকলে ১ দিনের বাচ্চাকে নিয়ে ১০ ঘণ্টার পথ বেয়ে কলকাতায় আসতে হত না।”
মমতার এই অভিযোগ অবশ্য খারিজ করে দিয়েছেন অধুনা বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র। আলিমুদ্দিনে এ দিন প্রশ্নের জবাবে সূর্যবাবু বলেন, “এই রাজ্যে শিশুমৃত্যুর হার কমে আসছিল। গ্রামীণ এলাকায় শিশুমৃত্যুর ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ সর্বভারতীয় স্তরে তৃতীয় সর্বনিম্ন এবং শহুরে এলাকায় চতুর্থ সর্বনিম্ন স্থানে ছিল। আরও উন্নতি দরকার ছিল, চেষ্টা চলছিল। ন্যাশনাল স্যাম্পল রেজিস্ট্রেশন সার্ভে (এসআরএস) দেখলেই এগুলো জানা যাবে। ওঁরা এসআরএস বা অন্যান্য তথ্য ঘাঁটার সময় পাননি হয়তো! ওঁদের উচিত, যে পরিকাঠামো তৈরি আছে, সেটা উন্নতি করা। সেই হাসপাতাল নেই, ডাক্তার নেই, নার্স নেই এ সব গান গেয়ে লাভ কী হচ্ছে?”
মমতার দীর্ঘ দিনের অভিযোগ, বামফ্রন্ট সরকার রাজ্যের কোষাগার বেহাল করে দিয়ে চলে গিয়েছে। ঋণের দায়ে জর্জরিত ওই সরকারকে নিলামে তুললেও কেউ কিনত না বলে এ দিনও মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বামফ্রন্টের কাছে তাঁর সরাসরি প্রশ্ন, “কর্মীদের মাইনে দেওয়ার টাকা নেই, বিধবা ভাতা বন্ধ, বিপিএল তালিকাভুক্ত মানুষদের চাল দেওয়া বন্ধ। কী করে রেখে গিয়েছেন রাজ্যটাকে?” বিরোধী দলনেতার জবাব, “ঋণের জন্য নিলামে উঠতে হলে তো গুজরাত সরকারকে অনেক আগেই নিলামে চড়াতে হত! এই কয়েক মাসে নতুন সরকার কত ঋণ করেছে? প্রাক্তন বিধায়কদের পেনশন আটকে আছে। রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহণ সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পেনশন আটকে ছিল, এখন বর্তমান কর্মীদের বেতন আটকেছে। এই ক’মাসে রাজ্যের আর্থিক হালের চিত্র তো দেখা যাচ্ছে!”
তৃণমূল নেত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতার অভিযোগ, তৃণমূলের পতাকা নিয়ে কিছু লোক অত্যাচার চালাচ্ছে, তোলা আদায় করছে, যারা আসলে ‘সিপিএমের লোক’। এ সবই সিপিএমের ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ (প্ল্যান্টেড গেম) বলে অভিযোগ মমতার। সূর্যবাবুর পাল্টা বক্তব্য, “সিপিএমের লোকেরা ওঁর দলের পতাকা নিতে যাবে কেন? যদি না পিছন থেকে বন্দুক ধরা হয় মাওবাদীদের মতো। তৃণমূলের পতাকা নিয়ে যে সিপিএমের লোকেরা টাকা তুলতে গিয়ে গোলমাল পাকাচ্ছেন বলে উনি বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীর উচিত তাদের সকলকে গ্রেফতার করতে বলা। পুলিশকে বলুন, তারা যেন ভয় না-পায়!”
তবে বহু ‘দুর্নীতি-অব্যবস্থা’র বেড়া পেরিয়েও গত সাড়ে পাঁচ মাসে তাঁর সরকার যে কিছু ‘ভাল’ কাজ করতে পেরেছে, তার খতিয়ানও পেশ করেন মমতা। তাঁর কথায়, “পাঁচ মাসে যা করেছি, ৩৪ বছরেও তা করেনি ওরা!” |
|
|
|
|
|