‘নেই’-এর ফাঁদে আদ্রার রেল হাসপাতাল
স্ত্রোপচার করা হয়? না।
অস্থিশল্য চিকিৎসক রয়েছে? না।
ইসিজি মেশিন আছে? না।
চুম্বকে এই হল আদ্রায় রেলের বিভাগীয় সদর হাসপাতালের ছবি। চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্যকর্মীর বহু পদ বছরের পরে বছর ধরে শূন্য পড়ে রয়েছে। ন্যূনতম পরিষেবা দেওয়ার মতো যন্ত্রপাতিও এই হাসপাতালে নেই। নেই-এর দীর্ঘ তালিকাই বুঝিয়ে দেয় রেলের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ দফতরের হাসপাতালের হাল কেমন!
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিভাগীয় সদর আদ্রায় রেল হাসপাতালের পরিকাঠামোগত বেহাল দশার কারণে ক্ষোভ ছড়িয়েছে রেল কর্মীদের মধ্যে। সম্প্রতি দক্ষিণ-পূবজ্ঞ রেলের ফার্মাসস্টিদের সম্মেলনে যোগ দিতে আদ্রায় আসেছিলেন ওই বিভাগের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিক্রমাদিত্য সওয়াইন। এই রেল হাসপাতালের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে দাবি জানিয়েছে রেল কর্মী সংগঠনগুলি। একই বিষয়ে সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসও। দলের আদ্রা শহর কমিটির নেতৃত্বের দাবি, পরিকাঠামোর উন্নয়ন ঘটিয়ে স্বাস্থ্য পরিষেবার মান উন্নয়ন করা হোক।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৮ শয্যা বিশিষ্ট আদ্রার এই বিভাগীয় হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল এই বিভাগের প্রায় ১৭ হাজার রেলকর্মী ও তাঁদের পরিবারের লোকজন। তাঁদের সঙ্গেই এই হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার কথা প্রায় সাত হাজার অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী। সব মিলিয়ে ৬৫-৭০ হাজার মানুষ এই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল।
কিন্তু, ঘটনা হল, পরিকাঠামোগত সমস্যার জন্য সেই পরিষেবা ঠিকমতো তাঁরা পাচ্ছেন না। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সব থেকে বেশি সমস্যা অস্ত্রোপচার নিয়ে। অ্যানাসথেসিস্ট না থাকায় দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ রয়েছে অস্ত্রোপচার। আগে চুক্তির ভিত্তিতে অ্যানাসথেসিস্ট থাকলেও উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি ইস্তফা দিয়েছেন। রেলকর্মী সংগঠনগুলির অভিযোগ, ছ’মাসের বেশি সময় ধরে এই হাসপাতালে অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে। ফলে সন্তান সম্ভবা প্রসূতি বা অন্য কোনও অস্ত্রোপচারের রোগী এখানে এলেই অন্যত্র স্থানান্তর করে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া হাসপাতালে নেই পূর্ণ সময়ের অস্থিশল্য চিকিৎসক। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এক জন চিকিৎসক সপ্তাহে এক দিন খড়গপুর থেকে রোগী দেখতে আসেন। ফলে, তাঁর কাছে চিকিৎসা করানোর জন্য সপ্তাহভর রোগীদের অপেক্ষায় থাকতে হয়। কোনও সপ্তাহে তিনি না এলে রোগীদের কপালে দুগর্তি থাকে। নেই-এর তালিকা এখানেই শেষ নয়। দীর্ঘদিন ধরে এখানকার ইসিজি মেশিনটি বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। রেল কর্মী সংগঠন মেনস কংগ্রেসের নেতা সুব্রত দে বলেন, “অত্যাধুনীক কালার ডপলার ইউএসজি মেশিন আদ্রা রেল হাসপাতালের জন্য অনুমোদন হয়েছে। কিন্তু, এখড়ও পর্যন্ত তা পাঠানো হয়নি।”
অন্য দিকে, রেল হাসপাতালের মধ্যে ব্লাড ব্যাঙ্ক থাকলেও তার অবস্থাও একই। তা নিয়েও অসন্তোষ ছড়িয়েছে রেল-কর্মীদের মধ্যে। তাঁদের অভিযোগ, নামেই এটি ব্লাড ব্যাঙ্ক। আদপে রক্ত সংগ্রহ ও পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবেই রয়ে গিয়েছে। রেল কর্মী সংগঠনের নেতা গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, “ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত পাওয়া যায় না। জরুরী প্রয়োজনের সময়ে রক্তের দাতা নিয়ে গেলে শুধু পরীক্ষা করে রক্ত স্থানান্তর করা হয়।” হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগ নিয়েও অব্যবস্থার অভিযোগ যথেষ্ট।
হাসপাতালের ওষুধ বিভাগ নিয়েও অনেক সমস্যা রয়েছে। রেলকর্মীদের নিখরচায় ওষুধ দেওয়ার নিয়ম। রেল কর্মীদের অভিযোগ, ওষুধ কেনার জন্য বরাদ্দ টাকার পরিমাণ অর্ধেকের বেশি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে অনেকক্ষেত্রে জীবনদায়ী ওষুধও কেনা হচ্ছে না। তবে মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। আদ্রার ডিআরএম অমিতকুমার হালদার বলেন, “হাসপাতালের সমস্যা নিয়ে কর্মী সংগঠনগুলি মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে জানিয়েছেন। তিনি সমস্যাগুলি মেটানোর আশ্বাস দিয়েছেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.