|
|
|
|
ন্যাশনাল মেডিক্যাল |
হাল দেখতে রোগী
সাজলেন সচিব নিজেই
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
 |
|
আর পাঁচ জন সাধারণ রোগীর মতো বসে ছিলেন তিনিও। কার্ডিওলজির আউটডোরের ভিড়ে মিশে।
তবে যা করছিলেন, সেটা মোটেই আর পাঁচ জন সাধারণ রোগীর মতো নয়!
কান খাড়া করে শুনছিলেন অন্য রোগীদের সমস্যা, তাঁদের অভাব-অভিযোগের কথা। চোখ বার বার চলে যাচ্ছিল হাতঘড়ির দিকে। সকাল সওয়া ন’টা বাজার পরে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে যখন নিয়মমাফিক আউটডোর ‘চালু হওয়ার’ খবর এসএমএস মারফত স্বাস্থ্যভবনে পৌঁছাচ্ছে, তিনি তখন স্বচক্ষে ঘুরে দেখছেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অন্যান্য আউটডোরের চেহারা। কী দেখলেন?
দেখলেন, আউটডোর চালু হয়ে গিয়েছে শুধু মোবাইল-বার্তাতেই। সকাল সাড়ে ন’টাতেও অধিকাংশ জায়গায় সিনিয়র চিকিৎসকদের দেখা নেই!
ফের কার্ডিওলজির আউটডোরে ফিরে এলেন তিনি। রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট বেঞ্চে রোগীদের পাশে বসেই পকেট থেকে বার করলেন মোবাইল ফোন। ধরলেন খোদ হাসপাতালের সুপারকে। বললেন, “আমি সঞ্জয় মিত্র, রাজ্যের স্বাস্থ্য-সচিব। আপনাদের হাসপাতাল দেখতে এসেছি। কার্ডিওলজি আউটডোরে আছি।”
নিমেষে শোরগোল পড়ে গেল গোটা হাসপাতালে!
রাজ্যের স্বাস্থ্য-পরিকাঠামোর হাল ফেরাতে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে সঞ্জয়বাবুকে পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মহাকরণের কুর্সিতে বসার পরে-পরে মুখ্যমন্ত্রী নিজে যে ভাবে অতর্কিতে এক-একটা হাসপাতালে ঢুঁ মারতেন, অনেকটা সেই ধাঁচে বুধবার সাতসকালে ন্যাশনালে পৌঁছে যান সঞ্জয়বাবু। সামনাসামনি তাঁকে অনেকেই যে হেতু চেনেন না, তাই আউটডোরের ভিড়ে মিশে যেতেও স্বাস্থ্য-সচিবের বিশেষ অসুবিধে হয়নি।
কী দেখতে তাঁর এই আচমকা সফর?
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর: সরকারি সব হাসপাতালে সকাল সওয়া ন’টায় আউটডোর চালু করতে কড়া নির্দেশ জারি হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ: কোন হাসপাতালে কোন কোন আউটডোর যথাসময়ে চালু হল, তা এসএমএস করে জানাতে হবে। ফলে রোজ সকালে নিয়মমাফিক এসএমএসের ঢল নামছে স্বাস্থ্যভবনে। কিন্তু সেগুলো কতটা সত্যি, সেটাই এ দিন সরেজমিনে যাচাই করতে গিয়েছিলেন সঞ্জয়বাবু।
আর তার জন্য তিনি প্রথম বেছে নিয়েছিলেন ন্যাশনাল মেডিক্যালকে। যেখানে তাঁর এ দিনের অভিজ্ঞতা বলছে, খাতায়-কলমে বহির্বিভাগ চালু হয়ে গেলেও বহু জায়গায় কাজ সামলান দু’-চার জন জুনিয়র ডাক্তার। সিনিয়রদের পাত্তা মেলে না। অবস্থা দেখে সুপারকে ফোন করে ডেকে পাঠিয়ে সচিব বিরক্তি প্রকাশ করেন। সুপার পার্থ প্রধান তখন ফোন করেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসকদের। হাসপাতাল জুড়ে রীতিমতো হইচই শুরু হয়ে যায়। কোনও ডাক্তার ফোনে জানান, তিনি ওটি-তে আছেন, কেউ বলেন আইসিইউয়ে। কেউ কেউ আবার স্বীকার করে ফেলেন, তাঁরা হাসপাতালে পৌঁছানইনি। খোদ স্বাস্থ্য-সচিব হাসপাতালে এসেছেন শুনে পড়িমরি করে ছুটে আসেন অনেকে।
শেষমেশ কী ধারণা নিয়ে ফিরলেন সচিব? ন্যাশনালের সুপার পার্থবাবুর জবাব, “মোটের উপরে হাসপাতালের পরিস্থিতি দেখে উনি সন্তুষ্ট বলেই তো মনে হল! বর্তমান পরিকাঠামো নিয়েই কী ভাবে পরিষেবা আরও ভাল করা যায়, সে ব্যাপারে নানা পরামর্শ দিলেন। আমাদের কথা শুনলেন। হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা বাড়াতে কী করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা হল।”
পরে স্বাস্থ্য-সচিব নিজেও বলেন, “হাসপাতাল খারাপ চলছে না। চিকিৎসকেরা অনেকে আউটডোরে না-থাকলেও হাসপাতালের ভিতরে ছিলেন। ফোন পেয়ে দ্রুত চলে এসেছেন। আরও কিছু সমস্যা আছে। তা মিটিয়ে নেওয়া যাবে।”
পাশাপাশি অন্য কিছু ‘অনিয়ম’ও চোখ এড়ায়নি স্বাস্থ্য-সচিবের। যেমন?
ন্যাশনালের এক ডাক্তার জানাচ্ছেন, “রোগী ভর্তি করতে এক জন এসেছিলেন বিপিএল কার্ড নিয়ে। অথচ তাঁর হাতে ব্ল্যাকবেরি ফোন! দেখে সচিব তো একেবারে স্তম্ভিত!”
বস্তুত স্বাস্থ্য-পরিষেবা ক্ষেত্রে বিপিএল কার্ডের এ হেন ‘অপব্যবহার’ দেখে সঞ্জয়বাবু যৎপরোনস্তি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গিয়েছে। |
|
|
 |
|
|