স্বাস্থ্যে গাফিলতি, চলছে সংশোধনের চেষ্টাও
অ্যাসিড ঢেলে ‘সাফাই’, পুড়ল প্রসূতির শরীর
লকাতার এসএসকেএম-এর পরে মুর্শিদাবাদের লালবাগ মহকুমা হাসপাতাল।
এ বার সাফাইয়ে ব্যবহৃত ‘অ্যাসিডে’ গা পুড়ল এক সদ্য প্রসূতির। মুর্শিদাবাদের টিকটিকিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ওই মহিলা শিখা বিবি আপাতত ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন। হাসপাতাল সুপার, কর্তব্যরত চিকিৎসক এবং ওয়ার্ডের আয়ার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেছেন রোগিণীর আত্মীয়েরা।
কিছু দিন আগে, এমন একটি ‘শিউরে’ দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছিল রাজ্যের একমাত্র সরকারি ‘সুপার স্পেশ্যালিটি’ হাসপাতাল এসএসকেএমেও। নিছক ইঞ্জেকশন দিতে গিয়ে এক মহিলার হাতে স্পিরিটের পরিবর্তে কর্তব্যরত নার্স ঘষে দিয়েছিলেন অ্যাসিডে ভেজানো তুলো। প্রায় দু’মাস পেরিয়ে গেলেও সেই ‘ভুলের’ তদন্তে নেমে এখনও কোনও নির্দিষ্ট শাস্তির সুপারিশ করতে পারেননি স্বাস্থ্য-কর্তারা।
গত ৩১ অক্টোবর, লালবাগ হাসপাতালও ‘দায়সারা চিকিৎসা’র প্রায় একই রকম ‘দৃষ্টান্ত’ রাখল! হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই দিন বিকেলে হাসপাতালের প্রসূতি সদনের ‘লেবার রুম’-এ স্বাভাবিক ভাবে একটি মৃত সন্তান প্রসব করেন শিখা বিবি। পরিজনদের অভিযোগ, ওই সদ্য প্রসূতিকে পরিষ্কার করাতে গিয়ে কতর্র্ব্যরত আয়া ব্যবহার করে বসেন অ্যাসিড। যন্ত্রণায় কুঁকড়ে ছটফট করতে থাকেন শিখা। পা-সহ শরীরের নীচের দিকের বেশ কিছু অংশ পুড়ে যায় তাঁর।
শিখা বিবির পুড়ে যাওয়া পা। লালবাগ হাসপাতালে।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, এর পরেই বিষয়টি ‘ধামাচাপা’ দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়। কিন্তু বুধবার জানাজানি হতে হাসপাতালের সুপার শাশ্বতী নাগ বলেন, “শিখা বিবির পরিবারের তরফে আমাদের কাছে কোনও লিখিত অভিযোগ হয়নি। তবে, ঘটনার কারণ জানতে তিন জন চিকিৎসককে নিয়ে একটি মেডিক্যাল বোর্ড গড়া হয়েছে। তাঁরা ওই দিনের ঘটনার তদন্ত করছেন।” সেই সঙ্গে তিনি জানান, প্রসূতি সদনে যে জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হয় আদতে সেটিতেই অ্যাসিডের মাত্রা বেশি ছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁর কথায়, “ওই লোশনটিও পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।”
এ দিন ওই হাসপাতালে গিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদ থানার আইসি ইন্দ্রজিৎ কুণ্ডু। শিখাদেবীর সঙ্গে বেশ কিছু ক্ষণ কথা বলে ওই পুলিশ অফিসার বলেন, “খোঁজ নিয়ে জানলাম, প্রসবের পরে ওই প্রসূতির জ্ঞান ছিল না। অসাড়ে বিছানা নোংরা হয়ে গিয়েছিল। তা পরিষ্কার করতে গিয়েই অ্যাসিড ব্যবহার করা হয়। শিখা বিবি শুয়ে থাকা অবস্থাতেই তাঁর পাশে অ্যাসিড ঢেলে তুলো দিয়ে তা সাফাই করছিলেন হাসপাতালের এক আয়া। সম্ভবত সেই সময়েই অ্যাসিডে ওই প্রসূতির শরীরের বেশ কয়েক জায়গা পুড়ে যায়।”
শিখা বিবির বক্তব্য, “প্রসবের পরে আমার জ্ঞান ছিল না। তবে কিছু ক্ষণ পরেই গায়ে প্রচণ্ড জ্বালা করতে থাকে। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আমি ফের জ্ঞান হারাই।” শিখাদেবীর দেওর ওয়াসেফ শেখ বলেন, “বৌদি মৃত সন্তান প্রসব করায় আমাদের মন-মেজাজ ভাল ছিল না। পর দিন হাসপাতালে এসে বৌদির কাছে অ্যাসিডে পুড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারটি জানতে পারি।”
তাঁর ক্ষোভ, “তখনই বিষয়টি সুপারকে জানাই। কিন্তু তিনি গুরুত্বই দিতে চাননি।”
স্থানীয় বিধায়ক কংগ্রেসের শাঁওনী সিংহরায়ের মন্তব্য, “অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। আমি হাসপাতালে গিয়ে ওই মহিলার সঙ্গে কথা বলেছি। সুপারকেও বিষয়টি খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেছি। কিন্তু সুপার দায় এড়াতে চাইছেন।” তাঁর জিজ্ঞাসা, সরকারি হাসপাতালের ‘লেবার রুম’-এ বহিরাগত আয়ারা প্রবেশাধিকার পেলেন কী করে? সুপারের কাছে কোনও জবাব মেলেনি। আর ঘটনার সময়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক নির্মলকুমার সাউয়ের বক্তব্য, “আমার যা বলার, তদন্তকারী মেডিক্যাল বোর্ডকে বলব।”

ছবি: গৌতম প্রামাণিক



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.