সম্পত্তি বেচে টাকা ফেরতের আর্জি
মানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে রাজ্য সরকার যে ধরনের পদক্ষেপ করতে চাইছে, কার্যত তেমন আর্জিই সিবিআইয়ের কাছে জানিয়েছেন খোদ সারদা গোষ্ঠীর মালিক সুদীপ্ত সেন।
সিবিআইয়ের কাছে ৬ এপ্রিল লেখা চিঠিতে সুদীপ্ত সেনের আর্জি, সারদা গোষ্ঠী ও তার সহযোগী কোম্পানিগুলির ব্যবসা ও সম্পত্তি বেচে যত দ্রুত সম্ভব আমানতকারীদের টাকা ফেরতের বন্দোবস্ত করা হোক।
তদন্তকারী সংস্থার কর্তারা অবশ্য সুদীপ্তবাবুর প্রস্তাবকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁদের অনেকেরই মত, সংস্থা দেউলিয়া হতে চলেছে এবং আমানতকারীদের টাকা দেওয়া যাবে না বুঝেই তিনি আগে থেকেই নিজেকে নির্দোষ ও স্বচ্ছ প্রমাণ করে সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করছেন। দীর্ঘ চিঠিতে সংস্থার বিভিন্ন পদাধিকারী ও অন্যান্য ব্যবসায়িক সহযোগীদের বিরুদ্ধেও তিনি নানা অভিযোগ এনেছেন। তাঁর আরও দাবি, এজেন্টরা যে টাকা তুলত, তা কোম্পানির ঘরে পুরো জমা পড়ত না। সুদীপ্তবাবু লিখেছেন, “যে টাকা পাইনি, তা কোনও আমানতকারীকে ফেরত দিতে দায়বদ্ধ নই।”
কিন্তু আমানতকারীদের কাছ থেকে যে সব টাকা উনি পেয়েছেন, কোম্পানির সম্পত্তি বেচে তা ফেরত দেওয়ার কথা সুদীপ্তবাবু বললেন কেন? এক তদন্তকারী অফিসারের ব্যাখ্যা, এটা আসলে জাহাজ ডুবছে দেখে নিজেকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা। যাতে বিচারপর্বে বলা যায়, তিনি কারও টাকা মারতে চাননি। এর কতটা ঠিক, আদৌ কত টাকা আমানতকারীদের কাছ থেকে পেয়েছিলেন এবং সম্পত্তি বেচে সত্যিই কত টাকা ফেরত দেওয়া যাবে, তার সবটাই তদন্তসাপেক্ষ। কত টাকা তিনি সরিয়েছেন বা বেনামে সম্পত্তি কিনেছেন, সেটাও খতিয়ে দেখার আগে কিছুই বলা যায় না।
সারদা কাণ্ডে তদন্ত চেয়ে ভবানীপুরে কুশপুত্তলিকা দাহ কংগ্রেসের। —নিজস্ব চিত্র
পুলিশ সারদা গোষ্ঠীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হদিস পেয়ে সেগুলি আটক করেছে, তার মূল্য নির্ধারণের জন্য বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। কোথায় কী পাওয়া গিয়েছে, তার একটি তালিকা ও আনুমানিক টাকার অঙ্ক উল্লেখ করে বৃহস্পতিবারই পুলিশ মুখ্যমন্ত্রীকে রিপোর্ট দিয়েছে। হদিস পাওয়া ৬০-৬৫টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের গত কয়েক বছরের যাবতীয় লেনদেনের তথ্য চাওয়া হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই সারদার টাকা পয়সার সবিস্তার হিসেব চলে আসবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। সেখান থেকে আমানতকারীদের টাকা সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার হদিস মিলবে বলেই তদন্তকারী অফিসারদের ধারণা। চিঠিতে সুদীপ্ত লিখেছেন, কম্পিউটারে যে বকেয়া হিসাব শেষ দিন তিনি দেখেছিলেন, তাতে ২০২৬ সাল পর্যন্ত তাঁকে আমানতকারীদের ২২০০ কোটি টাকা মেটাতে হত। অথচ এই সময়ের মধ্যে তাঁর ঘরে জমা পড়ত মাত্র ১২০০ কোটি টাকা, যা বাস্তবসম্মত নয়। মাঝপথেই টাকা অন্য কোথাও চলে যাচ্ছে বলে চিঠিতে সন্দেহপ্রকাশ করেছেন তিনি।
যদিও তদন্তকারী অফিসাররা বলেছেন, চিঠিতে যে সব কর্তাকে ফাঁসিয়েছেন সারদা মালিক, তাঁদের অনেকেই পুলিশকে তদন্তে সহায়তা করছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, সংস্থার আলপিন কেনার খরচও ঠিক করতেন সুদীপ্তবাবু নিজে। ফলে কর্তারা টাকা সরিয়েছেন বলে যে অভিযোগ তিনি করেছেন, তা-ও বিশদ তদন্তসাপেক্ষ।
সুদীপ্তবাবু লিখেছেন, তিনি সারদা নির্মাণ প্রাইভেট লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর। তার পর ১৬০টি কোম্পানি তৈরি করেছেন তিনি, যার সবেতেই সারদা নামটি যুক্ত। সংস্থাগুলির অংশীদার ও ডিরেক্টররা সকলেই সুদীপ্তবাবুর ভাষায়, ডামি অর্থাৎ পুতুল মাত্র। তিনি লিখেছেন,“আমার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের সুবাদেই তাঁরা অংশীদার বা ডিরেক্টর পদ গ্রহণ করেছেন। ব্যবসার সঙ্গে তাঁরা কোনও ভাবেই যুক্ত নন।” এই সূত্রে তিনি তাঁর রাঁধুনি হেমন্ত প্রধানের উদাহরণও দিয়েছেন।
সুদীপ্তবাবু লিখেছেন, তার ব্যবসার ভরাডুবির জন্য এক শ্রেণির এজেন্ট দায়ী, যাঁরা ‘বেচারা’ আমানতকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা কোম্পানির ঘরে জমা দিতেন না। জাল রসিদ দিতেন। যে সব আমানতকারীর টাকা জমা পড়েছে, তাদের তা ফেরত দিতে সারদার যাবতীয় সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে বিক্রি করে টাকা তোলার ব্যাপারে সিবিআইকে জানিয়েছেন সুদীপ্তবাবু। তাঁর চিঠি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যেই নিরপেক্ষ তদন্তকারী সংস্থা নিয়োগ করে আমানতকারীদের টাকা ফেরতের ব্যাপারে নিশ্চিত সময়সীমা দিতে বলেছেন সারদা মালিক। তদন্তকারী সংস্থার কর্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, এই চিঠির প্রতিটি অনুচ্ছেদ ধরে জেরা পর্ব চলবে। তা শেষ হলেই বোঝা যাবে এর সত্যাসত্য।
পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.