পশ্চিমবঙ্গের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগকে সামনে রেখে জাতীয় স্তরে ধীরে ধীরে স্বর চড়াতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সবে গত কাল, বৃহস্পতিবার বিহারকে বিশেষ আর্থিক সহায়তার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গকে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে ফের কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন মমতা। ফেসবুক-বার্তায় মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, “বেছে বেছে কেন পশ্চিমবঙ্গকেই বঞ্চিত করা হচ্ছে? এটা কি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা?”
ক্ষমতায় থাকার সময় যে শব্দবন্ধ বামেদের প্রিয় ছিল, মমতাও সেই ‘কেন্দ্রের বঞ্চনা’ আওয়াজ তুলে একই পথে হাঁটতে শুরু করেছেন। তৃণমূল সূত্রে খবর, পশ্চিমবঙ্গের প্রতি এই বঞ্চনার আওয়াজকে জাতীয় ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে আরও বাড়াতে চাইছেন তিনি। তাই এক দিকে ফেসবুকে তিনি বলছেন, “আমরা কেন্দ্রের সামনে ভিক্ষাপাত্র নিয়ে দাঁড়াব না। আমরা ন্যায় চাই।” অভিযোগ করেছেন, “কেন্দ্রের যাকে দরকার, তাকে তহবিল জুগিয়ে যাওয়াটা কি অগণতান্ত্রিক এবং অনৈতিক নয়? আমাদের ‘উচ্চ শির’ এবং ‘চিত্ত ভয়শূন্য’। কিন্তু আপনারাই দেখুন, পশ্চিমবঙ্গকে তাদের ন্যায্য দাবি থেকে বঞ্চিত করতে কী ভাবে অন্যায় এবং রাজনৈতিক বৈষম্য হচ্ছে।” অন্য দিকে, যোজনা কমিশনের সামনে অমিত মিত্রকে হেনস্থা এবং সেই ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে সোমবার সংসদ চত্বরে গাঁধীমূর্তির পাদদেশে অবস্থান-বিক্ষোভে বসতে চলেছেন তৃণমূলের সাংসদরা। ওই দিন থেকে বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হচ্ছে। শুধু সংসদ চত্বরে বিক্ষোভই নয়, সংসদেও বিভিন্ন ভাবে বিষয়টি তুলবেন তৃণমূল সাংসদরা। মূল উদ্দেশ্য, সব দিক থেকে সরকারকে চাপে ফেলা এবং বারবার বোঝানো, পশ্চিমবঙ্গকে বঞ্চিত করছে কেন্দ্র। |
এর মধ্যেই রাজ্যের বাইরে (যেমন কুরুক্ষেত্রে) সমাবেশ করেছে তৃণমূল। সেখানেও তাদের মূল বক্তব্য ছিল পশ্চিমবঙ্গের প্রতি বঞ্চনা। তাৎপর্যপূর্ণ হচ্ছে, যাঁকে বিশেষ আর্থিক অনুদান নিয়ে তাঁর এই ক্ষোভ, সেই নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে মমতা কিছুই বলেননি। মনে করা হচ্ছে, সম্ভাব্য তৃতীয় ফ্রন্টের কথা মাথায় রেখেই বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নীরব মমতা। শীঘ্রই নীতীশের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের কথাও রয়েছে। তাই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মুখে শুধুই কেন্দ্রের বঞ্চনার অভিযোগ।
যাদের বঞ্চনার অভিযোগ হাইজ্যাক করেছেন তৃণমূল প্রধান, সেই বামেদের সঙ্গে সংসদে তাঁর দলের টক্কর লাগতে চলেছে ছাত্রনেতা সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যু ও তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে। সুদীপ্তর মৃত্যুর পরেই যোজনা কমিশনের সামনে বিক্ষোভের মুখে পড়েন অমিত মিত্র। তার জেরে পশ্চিমবঙ্গে একের পর এক সিপিএম অফিস আক্রান্ত হয়। আজ এ কে গোপালন ভবনে চার বাম দলের শীর্ষনেতাদের বৈঠকের পর সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “অমিত মিত্রকে কেন্দ্র করে যে ঘটনা ঘটেছে, তা দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু তাকে হাতিয়ার করে রাজ্য জুড়ে বামেদের উপর হামলা চালাচ্ছে তৃণমূল।” এ নিয়ে সংসদেও সরব হবেন বলে জানান ইয়েচুরি।
কিন্তু অমিত মিত্রকে হেনস্থার ঘটনায় জড়িত সিপিএমের কর্মীদের বিরুদ্ধে দল কী ব্যবস্থা নিচ্ছে? ইয়েচুরি বলেন, “দিল্লি রাজ্য কমিটি ওই বিক্ষোভের আয়োজন করেছিল। তাই তাদের এই বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে। আমরা পুলিশের কাছে ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ চেয়ে পাঠিয়েছি।” এ দিনই আবার কলকাতার নজরুল মঞ্চেই এসএফআইয়ের পাল্টা সভা করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ জানায়, দিল্লি-কাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ নিয়ে এ বার তারা প্রতিবাদ-প্রচারে নামবে।
|