আগের স্পেশ্যাল অফিসার ব্যাঙ্কের চাবি উদ্ধার করতে পারেননি। পুলিশি উদ্যোগে সেই চাবি উদ্ধারের পরে হাওড়ার রামকৃষ্ণপুর সমবায় ব্যাঙ্কের মন্দভাগ্যের তালা খুলতে কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কিশোরকুমার প্রসাদকে নতুন স্পেশ্যাল অফিসার নিয়োগ করা হল।
হাইকোর্টের বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায় ও বিচারপতি মুরারিপ্রসাদ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ শুক্রবার বিচারপতি প্রসাদকে ওই দায়িত্ব দেয়। সাধারণ গ্রাহকদের জমানো টাকা উদ্ধারের ব্যবস্থা করে ব্যাঙ্কটির পুনরুজ্জীবন ঘটানোই ডিভিশন বেঞ্চের লক্ষ্য। তাদের নির্দেশ, নতুন স্পেশ্যাল অফিসার রোজ ওই ব্যাঙ্কে বসবেন। তাঁর খরচ দেবে রাজ্য সরকার। ব্যাঙ্কের চাবি থাকবে তাঁর হেফাজতেই। ম্যানেজার ও অ্যাকাউন্ট্যান্ট ছাড়া অন্য কোনও কর্মী ব্যাঙ্কে ঢুকতে পারবেন না। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দক্ষ অফিসারেরা এবং জেলা প্রশাসন ও পুলিশ ব্যাঙ্কটির পুনরুজ্জীবনে সহায়তা করবেন।
প্রায় ১০০ কোটি টাকা সরিয়ে ফেলায় ঐতিহ্যবাহী ওই সমবায় ব্যাঙ্কটি বছর তিনেক আগে বন্ধ হয়ে যায়। টাকা উদ্ধারের সব পথ বন্ধ দেখে কিছু গ্রাহক হাইকোর্টে নিজেদের দুরবস্থার কথা জানিয়ে মামলা করেন। ব্যাঙ্কের ভিতরে কী আছে, তা দেখার জন্য তালা খোলার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। কিন্তু চাবি লোপাটের অজুহাত দেখিয়ে ব্যাঙ্কের দরজা খোলা হয়নি। সমবায় দফতরের যুগ্ম রেজিস্ট্রারকে স্পেশ্যাল অফিসার হিসেবে নিয়োগ করে চাবি উদ্ধারের ব্যবস্থা করে হাইকোর্ট। কিন্তু সেই স্পেশ্যাল অফিসার চাবির গোছা উদ্ধার করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশে তদন্তে নামে পুলিশ। হাওড়ার পুলিশ কমিশনারকে দায়িত্ব দেওয়া পরে ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের কাছ থেকে উদ্ধার হয় ৫১টি চাবি।
ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন জানিয়ে দেয়, আগের স্পেশ্যাল অফিসার প্রাক্তন বিচারপতি কিশোরকুমার প্রসাদের হাতে ব্যাঙ্কের চাবি তুলে দেবেন। আবেদনকারীদের আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ডিভিশন বেঞ্চের কাছে বলেন, এত দিন ওই চাবির গোছার হদিস ছিল না। এমনও হতে পারে যে, ওই চাবির নকল তৈরি করা হয়েছে। ডিভিশন বেঞ্চ বলে, নতুন স্পেশ্যাল অফিসার মনে করলে আলাদা তালাচাবির ব্যবস্থা করবেন।
রামকৃষ্ণপুর সমবায় ব্যাঙ্ক রাজ্যের সুপ্রাচীন সমবায় ব্যাঙ্কগুলির অন্যতম। উচ্চ আদালত সেটির অপমৃত্যু আটকাতে চায়। তাই রুগ্ণ বলে ধরে নিয়ে হাল ছেড়ে না-দিয়ে বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায় এই মামলার শুরু থেকেই ব্যাঙ্কটির পুনরুজ্জীবন এবং গ্রাহকদের টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়টিতে জোর দেন। এ দিনের রায়ের পরে আশা করা হচ্ছে, ওই ব্যাঙ্ক ফের চালু করার বাধা অনেকটাই কেটে গিয়েছে। আবেদনকারীদের আইনজীবী সুব্রতবাবু আদালতের বাইরে বলেন, যাঁরা নানা কায়দায় টাকা সরিয়েছেন, তাঁদের এ বার চিহ্নিত করা যাবে বলেই আশা করা হচ্ছে। গ্রাহকদের টাকা উদ্ধারের ব্যবস্থা সফল হলে ব্যাঙ্কটির নতুন জীবন পেতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
|