জেপিসি রিপোর্ট পাশ করাতে ময়দানে কংগ্রেস
স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি) খসড়া রিপোর্টে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে ছাড় দেওয়া হলেও, সেই রিপোর্ট কমিটিতে যে পাশ করানো সহজ নয়, বিলক্ষণ বুঝতে পারছে কংগ্রেস। কারণ সংসদের দুই কক্ষের মতো জেপিসি-তেও সরকার পক্ষ এখন সংখ্যালঘু। কিন্তু তার পরেও এই রিপোর্ট পাশ করাতে উঠেপড়ে লেগেছে কংগ্রেস। বিরোধীদের অভিযোগ, সেই কারণেই রিপোর্ট গৃহীত হওয়ার আগেই তা ফাঁস করা হয়েছে। বিরোধী সদস্যদের অনুপস্থিত রেখে জেপিসি-তে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের খেলাতেও নেমেছে তারা।
কংগ্রেস এই কৌশল নিলেও বিজেপি-বামেরা ছাড়ার পাত্র নন। বরং জেপিসি-র খসড়া রিপোর্টকে ‘কংগ্রেসের রিপোর্ট’ আখ্যা দিয়ে তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, পাল্টা একটি রিপোর্ট তাঁরা প্রস্তুত করছেন। খসড়া রিপোর্টে আপত্তি জানিয়ে তাঁদের সেই নোট জেপিসি-তে তাঁরা পেশ করবেন। তাঁদের পাল্টা রিপোর্টে টুজি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির জন্য দায়ী করা হবে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম দু’জনকেই। জেপিসি-র চেয়ারম্যান তথা কংগ্রেস নেতা পি সি চাকোর তৈরি খসড়া রিপোর্টে কার্যত প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী এ রাজার ঘাড়েই সব দায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রবিশঙ্কর প্রসাদ, গুরুদাস দাশগুপ্তদের অভিযোগ, কোনও ভাবেই টুজি কেলেঙ্কারির দায় এড়াতে পারেন না প্রধানমন্ত্রী। একই অভিযোগ তুলেছেন এ রাজা-ও। তাঁর কথায়, “স্পেকট্রাম বণ্টন সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্তই প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে নেওয়া হয়েছিল। সুতরাং তিনি দায় এড়াতে পারেন না।” আর ডিএমকে-প্রধান করুণানিধিও জানিয়ে দিয়েছেন, “মন্ত্রিসভার এক জন সদস্য প্রধানমন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখে সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এ কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়।”
টুজি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি নিয়ে ২৫ এপ্রিল জেপিসি-র পরবর্তী বৈঠকে খসড়া রিপোর্ট পেশ করার কথা ছিল কমিটির চেয়ারম্যান তথা কংগ্রেস নেতা পি সি চাকোর। কিন্তু তার আগেই গত কাল খসড়া রিপোর্টটি ফাঁস হয়ে যায়। তাতে বলা হয়েছে টুজি স্পেকট্রাম বণ্টন নিয়ে অনিয়মে প্রধানমন্ত্রীর কোনও হাত ছিল না। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমেরও কোনও গাফিলতি নেই। বরং তখনকার টেলিকম মন্ত্রী এ রাজাই দুর্নীতির কাণ্ডারী ছিলেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, টুজি কাণ্ডে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে সিএজি যে হিসাব দিয়েছিল তা-ও ভ্রান্ত। উল্টে অভিযোগ তোলা হয়েছে, এনডিএ-জমানাতেই স্পেকট্রাম বণ্টনে ৪০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছিল।
কংগ্রেসের কাছেও স্পষ্ট যে এই খসড়া রিপোর্ট গৃহীত হবে না। প্রথমত, বিরোধীরা এই সব যুক্তি মানবেন না। দ্বিতীয়ত, কমিটিতে সরকার পক্ষ সংখ্যালঘু। ৩০ জন সদস্যের যৌথ সংসদীয় কমিটিতে চেয়ারম্যানকে বাদ দিলে সরকার পক্ষের সদস্য সংখ্যা ১৪। এর মধ্যে সপা-র এক জন এবং বসপা-র দু’জন সদস্য রয়েছেন। আর বিরোধীদের সংখ্যা ১৫। পক্ষে-বিপক্ষে সমান ভোট পড়লেই চেয়ারম্যান কাস্টিং ভোট দিতে পারেন। কিন্তু এ রাজার ঘাড়ে সব দোষ চাপানোয় এই রিপোর্ট ডিএমকে সমর্থন করবে না। আবার সপা-র মতিগতিও বোঝা ভার। কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে খসড়া রিপোর্টটি পাশ করাতে গেলে জেডিইউ, বিজু জনতা এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্যদের মধ্যে দু-এক জনকে অনুপস্থিত করানোর চেষ্টা করবেন তাঁরা। এ জন্য ইতিমধ্যেই দৌত্যে নেমে পড়েছেন কংগ্রেসের ম্যানেজাররা। বাম নেতারা অবশ্য দাবি করছেন, জেপিসি-তে তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের সঙ্গেই থাকবেন। ২৫ এপ্রিলের জেপিসি-বৈঠকের আগেই এ বিষয়ে সংসদে সরব হতে চায় বাম-বিজেপি।
জেপিসি-র সদস্য গুরুদাস দাশগুপ্ত বলেন, “অমি ও অন্য সাংসদরা প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে সতর্ক করেছিলাম। তাঁর মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য কমল নাথও টেলিকম মন্ত্রকের কাজকর্ম নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের যুগ্ম-সচিব, ক্যাবিনেট সচিবও লিখিত ভাবে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু সরকার পড়ে যাবে, এই ভয়ে সব জেনেও হাত গুটিয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রী।” বিজেপি-র রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “ওই রিপোর্টকে যৌথ সংসদীয় রিপোর্ট বলার চেয়ে কংগ্রেসের নথি বলাই ভাল। কারণ ওই রিপোর্টে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে বাঁচানোর তাগিদটাই বেশি।” যাঁর বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, সেই প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী এ রাজা বার বার জেপিসি-র সামনে নিজের বক্তব্য পেশের আবেদন জানানো সত্ত্বেও তা কেন গ্রাহ্য করা হয়নি, সেই প্রশ্নও তুলছেন গুরুদাস-রবিশঙ্কররা। জেপিসি-তে সিপিএমের সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “এই ভাবে সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট ফাঁস করে দেওয়া অধিকার ভঙ্গের সামিল।” খসড়া রিপোর্ট নিয়ে আজ পি সি চাকো বলেন, “ওঁদের ক্ষোভ স্বাভাবিক। তবে যথাসম্ভব তথ্য নির্ভর একটি খসড়া তৈরির চেষ্টা করেছি আমি।” তাঁর আশা, খসড়া রিপোর্টটি সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গেই গৃহীত হবে।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.