|
|
|
|
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন |
পাঁচ বছরের শিশুকে
ধর্ষণ সেই দিল্লিতেই
নিজস্ব প্রতিবেদন |
|
|
দামিনীর মৃত্যুর পর পাঁচ মাসও কাটল না। সারা শরীরে সংক্রমণ নিয়ে এইমসের শয্যায় এ বার মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে পাঁচ বছরের শিশু।
এই পাঁচ মাসে দিল্লি-সহ দেশের সর্বত্রই ধর্ষণ বা যৌন হেনস্থার ঘটনা বন্ধ ছিল, এমন নয়। কিন্তু দামিনীর মতোই এই পাঁচ বছরের মেয়েটির উপরেও যে ধরনের বীভৎস অত্যাচার হয়েছে, তাতে আরও এক বার হতবাক হয়ে গিয়েছে গোটা দেশ। মেয়েটির শরীরের ভিতর থেকে বেরিয়েছে মোমবাতি, তেলের বোতল। মৃত্যুদণ্ডের ভয়ও যদি এই জাতীয় নির্যাতন প্রতিরোধে সক্ষম না হয়, তবে পথ কী? উঠছে প্রশ্ন। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। সেই সঙ্গে আরও এক বার কাঠগড়ায় পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা।
ঘটনার সূত্রপাত পাঁচ দিন আগে। গাঁধীনগরের বাচ্চা মেয়েটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার বাড়ির লোক থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ অভিযোগ নথিভুক্ত করেনি। বলেছিল, আশেপাশে খুঁজে দেখুন।
গত কাল মেয়েটিকে তারই বাড়ির একতলার একটি ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়। মেয়েটির বাবা-মায়ের অভিযোগ, তাঁদেরই এক প্রতিবেশী যুবক বাচ্চা মেয়েটিকে চার দিন ধরে আটকে রেখে ধর্ষণ করেছে সেখানে। মেয়েটির সারা গায়ে ক্ষতচিহ্ন, কালশিটে। ধর্ষণের অভিযোগ জানাতে এ বার আবার থানায় গেলেন বাবা-মা। অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের বলল, “মেয়েকে জীবিত অবস্থায় ফিরে পেয়েছেন! এই যথেষ্ট।” সাধারণত পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ ক্ষেত্রে মেয়েটির বাবা-মায়ের হাতে পুলিশই গুঁজে দিল ২০০০ টাকা ঘুষ!
প্রথমে একটি সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল শিশুটিকে। সেখানকার চিকিৎসক আর কে বনশল জানিয়েছেন, মেয়েটির গলাতেও কালশিটের দাগ। চিকিৎসকদের সন্দেহ, ধর্ষণের পর তাকে গলা টিপে মারার চেষ্টা করা হয়েছিল। বনশল বলেন, “গায়ে হাত দিলেই যন্ত্রণায় ককিয়ে উঠছিল শিশুটি। অ্যানাস্থেসিয়া করে পরীক্ষা শুরু করি। আর তাতেই শরীর থেকে পাওয়া গেল মোমবাতি, ২০০ মিলিলিটারের তেলের বোতল।” পাকস্থলীতে সংক্রমণের জন্য খাবারও দেওয়া যাচ্ছে না। চিকিৎসক-জীবনে এত ভয়ানক অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয়নি, বলছেন বনশল।
খবরটা ছড়িয়ে পড়ার পরে হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে মেয়েটির পরিবার আত্মীয়েরা এবং আম আদমি পার্টির কিছু লোকজন। হাসপাতালে আসেন কংগ্রেস নেতা সন্দীপ দীক্ষিত এবং দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ কে ওয়ালিয়া। সেই সময় গণ্ডগোল আরও চরমে ওঠে। পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি বেধে যায় জনতার। দামিনীর সময় বিক্ষুব্ধদের উপরে জলকামান, লাঠি চলেছিল। এ বার বিক্ষোভকারী একটি মেয়েকে পুলিশ চড় মেরেছে বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় আলাদা করে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও দিল্লি পুলিশের কাছে তদন্ত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে। দিল্লির পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমার দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, “খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। তবে ব্যতিক্রমীও বটে। দিল্লি পুলিশের মধ্যে এমন উদ্ধত আচরণ দেখা যায় না। এসিপি-সহ আরও দু’জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।”
ধর্ষণের অভিযোগ নেওয়ার ব্যাপারে পুলিশি গাফিলতির অভিযোগও হালকা ভাবে নেওয়া হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন নীরজ। দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন মমতা শর্মা। নীরজ কুমার আশ্বাস দিয়েছেন, ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে। তাঁর কথায়, “ধর্ষণে অভিযুক্তকেও চিহ্নিত করা হয়েছে। তার নাম মনোজ। সে বিহারের মুজফ্ফরপুরের বাসিন্দা। পুলিশ তাকে ধরার জন্য রওনা দিয়েছে।”
জাতীয় মহিলা কমিশনের ভূমিকাও অবশ্য সমালোচনার বাইরে থাকেনি। আজ সকালে মমতা শর্মা বলেছিলেন, “আজ ছুটি, তাই কিছু করতে পারছি না। কাল মেয়েটিকে হাসপাতালে দেখতে যাব।” আগামিকালই মেয়েটিকে এইমসে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। ‘কাল’কের জন্য অপেক্ষা করতে হয়নি। সাধারণ মানুষ এবং সংবাদমাধ্যমের চাপে পড়ে আজই সন্ধে সাড়ে ছ’টা নাগাদ এইমসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে শিশুটিকে। যদিও এখানেও অভিযোগ, বনশল মেয়েটির অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানালেও এইমসে তাকে সাধারণ ওয়ার্ডেই রাখা হয়েছে।
|
পুরনো খবর: চলন্ত বাসে গণধর্ষণ, বন্ধু-সহ তরুণীকে ছুড়ে ফেলা হল পথে
|
পুরনো খবর: নাবালিকা ধর্ষিতা, ফের প্রতিবাদে উত্তাল দিল্লি |
|
|
|
|
|