নাবালিকা ধর্ষিতা, ফের প্রতিবাদে উত্তাল দিল্লি
ফের ধর্ষণ। সেই দিল্লিতেই। এবং সেই দিন, যে দিন কেন্দ্রীয় বাজেটে মহিলাদের নিরাপত্তার লক্ষ্যে গঠিত হল ‘নির্ভয়া’ তহবিল!
এ বার শিকার এক নাবালিকা। বৃহস্পতিবার স্কুল চত্বরেই ধর্ষিত হতে হয়েছে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রীটিকে। গত কালের এই ঘটনাটি সামনে আসতেই আজ পথে নামে দিল্লির ক্ষুব্ধ জনতা। ভাঙচুর হয় একাধিক সরকারি বাস। আগুনও লাগানো হয় কয়েকটিতে। পাল্টা হিসেবে পুলিশ লাঠি-কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। দশ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

ফের ধর্ষণ। প্রতিবাদে ভাঙচুর, আগুন বাসে। সামাল দিতে মারমুখী পুলিশ।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, সাত বছরের ওই ছাত্রী মঙ্গলপুরীর এক প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়া। বৃহস্পতিবার দুপুরে উত্তর দিল্লি পুরসভার আর্থিক সাহায্যপ্রাপ্ত ওই স্কুলটির ভিতরেই ধর্ষণের শিকার হয় সে। গুরুতর জখম অবস্থায় মেয়েটিকে সঞ্জয় গাঁধী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডাক্তারি পরীক্ষায় প্রমাণিত হয় ধর্ষণ।
শুক্রবার সকালে মেয়েটির পরিবার ঘটনার কথা পুলিশকে জানালে প্রকাশ্যে আসে বিষয়টি। স্থানীয় থানায় দায়ের করা হয় ধর্ষণের অভিযোগ। তবে অভিযুক্তের সম্পর্কে মেয়েটি কোনও বিবরণ দিতে না পারায় ধন্দে রয়েছে পুলিশ। আতঙ্কগ্রস্ত মেয়েটির থেকে ঘটনা সম্পর্কে বিশদে জানার জন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, মেয়েটি জানিয়েছে তার মুখ বেঁধে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালায় এক ব্যক্তি। বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য হুমকিও দিয়েছে সে। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে স্কুলের এক নিরাপত্তা রক্ষী ও দুই শিক্ষককে আটক করেছে পুলিশ। চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। পুরসভার তরফে গোটা ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনার খবর সামনে আসতেই উত্তেজনা চড়িয়ে পড়ে। মেয়েটির পাড়ার অনেকেই পথে নামেন। ক্ষুব্ধ জনতা বিক্ষোভ দেখায় সঞ্জয় গাঁধী হাসপাতালের সামনে। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন স্থানীয় মহিলারাও। তার মধ্যেই বিক্ষোভ ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীদের ছোড়া পাথরের আঘাতে জখম হন দুই পুলিশ কর্মী। ক্ষতিগ্রস্ত হয় একাধিক সরকারি বাস ও বেসরকারি যানবাহন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। ব্যবহার করা হয় কাঁদানে গ্যাসও। দশ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে মোতায়েন করা হয় বাড়তি বাহিনী। হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, মেয়েটির অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল। তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
মাস তিনেক আগেই চলন্ত বাসে এক তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল গোটা দিল্লি। বেশ কয়েক দিন রাজধানী কার্যত অচল হয়ে পড়ে বিক্ষোভের ধাক্কায়। ক্ষোভের আঁচ ছড়িয়ে পড়ে দেশের অন্যান্য শহরেও। মেয়েদের নিরাপত্তার দাবিতে সরব হয়েছিলেন আমজনতা থেকে রাজনীতিবিদ সকলেই। বাধ্য হয়ে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের তরফে একের পর এক প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। চিন্তন বৈঠকে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীও জানিয়ে দিয়েছিলেন, মহিলাদের সার্বিক নিরাপত্তা সুদৃঢ় করতে পদক্ষেপ করবে কেন্দ্র। তার পরেই গত কাল বাজেটে ‘নির্ভয়া তহবিল’ গঠনের কথা ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।

উত্তেজিত জনতাকে হটাতে পাল্টা ইট।
তবু দিল্লির বদল হল না। মেয়েদের নিরাপত্তা সেই তিমিরেই। ফের ধর্ষণের ঘটনায় স্বভাবতই বিড়ম্বনায় কেন্দ্র। এ দিনের ঘটনা নিয়ে কংগ্রেসের তরফে এখনও পর্যন্ত কেউ মুখ না খুললেও মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত বলেছেন, ‘‘স্কুল চত্বরে নাবালিকাকে ধর্ষণের ঘটনা অত্যন্ত লজ্জাজনক। শিশুদের নিরাপত্তা বজায় রাখা আমাদের দায়িত্ব। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, তার চেষ্টা করছি আমরা।”
দিল্লিতে মহিলারা যে মোটেই নিরাপদ নয়, তা গত কয়েক মাসে বারেবারেই মেনে নিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিটি ধর্ষণের ঘটনা সামনে আসার পরেই মেয়েদের নিরাপত্তা জোরদার করার কথা বলেন তিনি। তবু একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেই চলেছে রাজধানীতে।
‘ধর্ষণের রাজধানী’ হয়ে ওঠা দিল্লি তাই মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের পরেও নিশ্চিন্ত আর থাকতে পারছে না!

ছবি: রয়টার্স


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.