সংসদে ধর্ষিতা তিন বোনের নাম জানিয়ে নিন্দিত শিন্দে
ংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটি বলছে, ধর্ষণে মৃত্যু হলে কোনও ক্ষমা নেই। কঠোরতম শাস্তিই দিতে হবে সরকারকে। যে দিন কমিটি এই রিপোর্ট পেশ করল সংসদে, সেই দিনই ধর্ষণের প্রশ্নে চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো কাণ্ড ঘটিয়ে বসলেন খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে। ভন্ডারায় তিন বোনকে ধর্ষণ ও খুনের প্রসঙ্গে বলতে উঠে রাজ্যসভায় তিন জনেরই নাম বলে দিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বিরোধীদের চিৎকারে যখন তাঁর হুঁশ ফিরল, ক্ষতি যা হওয়ার হয়েই গিয়েছে। স্পিকারের নির্দেশে সংসদের কার্যবিবরণী থেকে ওই অংশটুকু ছেঁটে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হল বটে, কিন্তু রাজ্যসভা টিভির দৌলতে তত ক্ষণে তা শুনে ফেলেছে গোটা দেশ। এই ভুল কি আর কোনও ভাবে মুছে দেওয়া সম্ভব, এ নিয়ে যখন জোর আলোচনা, আবার ভুলের গেরোয় শিন্দে! স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের লিখিত বয়ান সাংসদদের মধ্যে বিলি করার পর দেখা গেল, তিন বোনের নাম রয়েই গিয়েছে তাতে!
সংসদে দাঁড়িয়ে ধর্ষিতাদের নামধাম বলে দেওয়ার মতো বেআইনি কাজ করার কথা মনে করিয়ে দেওয়ার পরেও কী করে সম্ভব হল এটা? দেখে-শুনে রীতিমতো হতবাক রাজনীতির কারবারিরা। বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি বললেন, “ভুলটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার পরেও যেটা হওয়ার নয়, ঠিক সেটাই হল।” আজকের ঘটনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আক্রমণ করতে ছাড়েনি সিপিএম-ও। শিন্দের এই কীর্তিতে বেজায় চটেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীও।
ভারতে ধর্ষিতাদের নাম প্রকাশ করা যে আইনবিরুদ্ধ, সেটা সকলের জানা। তবু বারবার কেন এত বড় ভুল, ধোঁয়াশা সেখানেই। আমলারাও এর দায় এড়াতে পারছেন না। সংসদে মন্ত্রীদের বয়ান তৈরি করেন তাঁরাই। অন্তত চার-পাঁচ জনের হাত ঘুরে তা পৌঁছয় মন্ত্রীর টেবিলে। এত বড় একটা ভুল নিচুতলা থেকে একেবারে শীর্ষ স্তরের আমলাদের চোখ এড়িয়ে থেকে গেল কী করে, উঠছে সেই প্রশ্নও।
বিরোধীরা শুধু নন, দলেই প্রশ্ন উঠছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিন্দে নিজে এক জন প্রাক্তন পুলিশকর্মী। ধর্ষণ সংক্রান্ত আইনকানুন তাঁর অজানা থাকার কথা নয়। বলতে গিয়ে তিনিও এক বারের জন্য আটকালেন না কেন? বয়ান আমলাদের তৈরি বলে এ ভাবে কি নিজের দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে পারেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? নিজের ভুল অবশ্য টের পেয়েছেন শিন্দে। পরে দোষ স্বীকার করে নিয়ে বিষয়টি দিনভর কার্যত এড়িয়ে যাওয়ারই চেষ্টা করে গিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
শিন্দের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় এই প্রথম নয়। আগেও বেফাঁস মন্তব্য করে দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন তিনি। আজমল কসাবের ফাঁসির পর ঝাঁকে ঝাঁকে টিভি ক্যামেরার সামনে তিনি বলেছিলেন, ফাঁসি এতটাই গোপনে দেওয়া হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী, সনিয়া গাঁধীও তা জানতেন না!
এর পর হিন্দু সন্ত্রাস নিয়ে শিন্দের মন্তব্য। গেরুয়া সন্ত্রাসের কথা আগেও রাজনৈতিক চাপানউতোরে উঠে এসেছে। কিন্তু জয়পুরে দলের চিন্তন বৈঠকের মঞ্চ থেকে তিনি বিরোধী শিবিরকে আক্রমণ করতে গিয়ে বলেন, “বিজেপি-আরএসএসের শিবিরে সন্ত্রাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।” সঙ্ঘ পরিবারের বিরুদ্ধে এমন আক্রমণ আগে কেউ করেননি কংগ্রেসের তরফে। পরে দলের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওই কথা বলেছেন।
শিন্দের এ দিনের কাণ্ডে সমালোচনার ঝড় উঠেছে নেট দুনিয়াতেও। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলিতে অনেকেই ছি-ছি করছেন শিন্দের কাজে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব যাঁর কাঁধে, বারে বারে এ রকম কাজ তিনি করেন কী করে, সেই প্রশ্ন আছড়ে পড়ছে ফেসবুক, টুইটারে। যে ভুল তিনি করলেন, আজীবন তার খেসারত দিতে হবে ধর্ষিতার পরিবারকে। তার হিসেব কে রাখবে, তোলা হচ্ছে সেই প্রশ্ন। গত বছর গুয়াহাটিতে ধর্ষিতাকে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন মহিলা কমিশনের সদস্যা অলকা লম্বা। আইনের মর্যাদা রাখতে শেষ পর্যন্ত নিজের পদ থেকে সরে যেতে হয়েছিল তাঁকে। আর সংসদের দাঁড়িয়ে এত বড় ভুল করেও কি পার পেয়ে যাবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? প্রশ্ন অনেক।
এ দিন অবশ্য নামটুকু বলেই থেমে থাকেননি শিন্দে। ভন্ডারা-কাণ্ডের তদন্তে কোনও রকম সাফল্য দেখাতে না পারা পুলিশের হয়েই সওয়াল করেছেন তিনি। আজই ওই ঘটনার তদন্তে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছে জাতীয় মহিলা কমিশন। প্রথমে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ নিতেই অস্বীকার করেছিল স্থানীয় থানা। অভিযোগ নেওয়ার দু’সপ্তাহ পরেও এক জন অপরাধীকেও চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ। শেষ মুহূর্তে তিন বোনকে একটি গাড়িতে দেখা গিয়েছিল বলে তদন্তে জানতে পেরেছে তারা। দেড়শো জনকে জেরা করেছে। কিন্তু খোঁজ মেলেনি সেই গাড়িটির। ঘটনার এত দিন পরেও পুলিশের কাছে উত্তরের চেয়ে প্রশ্নই বেশি বলে সমালোচনা করেছে মহিলা কমিশন। এ সবের মধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজ প্রকাশ্যে পাশে দাঁড়ালেন পুলিশের। গাফিলতির জন্য এক জন পুলিশকে সাসপেন্ড করা হয়েছে, তা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ করেছে। তদন্ত ভাল এগোচ্ছে।”
যাদের ঘিরে এত বিতর্ক, সেই তিনটি ছোট্ট মেয়ে প্রাণ হারিয়েছে স্রেফ খাবারের হাতছানিতে সাড়া দিয়ে। ইউপিএ সরকার দীর্ঘদিন ধরেই খাদ্য সুরক্ষা আইন করার কথা বলে আসছে। সেটা যে কতটা জরুরি, ভন্ডারার ঘটনা বুঝি তার সব চেয়ে মর্মান্তিক প্রমাণ। সেই আইন কবে হবে? আইনে কি পাল্টাবে বাস্তব ছবিটা? প্রশ্ন থাকছেই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.