ভাঙচুরের পরে আট দিন কেটে গিয়েছে। বেকার ল্যাবরেটরিতে ঝাঁট পড়েছে প্রতিদিন। পদার্থবিদ্যা বিভাগের ল্যাবরেটরির ভাঙা যন্ত্র সারানোর পরে তা দিয়ে পড়ুয়াদের প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাসও শুরু হয়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে ওই ল্যাবরেটরিতে হামলার কোনও
চিহ্নই আর অবশিষ্ট নেই। এই
অবস্থায় ফরেন্সিক বিভাগের একটি দল শুক্রবার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেকার ল্যাবরেটরিতে নমুনা সংগ্রহ করতে যায়!
ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের দুই সদস্যের দল এ দিন বেলা ১টা নাগাদ পৌঁছয় প্রেসিডেন্সিতে। ওই প্রতিনিধিরা বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষকে বলেন, বেকার ল্যাবরেটরি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আর যে-সব জায়গায় ১০ এপ্রিল ভাঙচুর হয়েছে, সেখান থেকে তাঁরা নমুনা সংগ্রহ করতে চান। কর্তৃপক্ষের তরফে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন করা হয়, ‘এত দিন পরে আপনারা এলেন কেন? ভাঙচুরের জায়গাগুলি তো ইতিমধ্যে পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। পদার্থবিদ্যা বিভাগে ক্লাস হচ্ছে। এই অবস্থায় কোথাও ভাঙচুরের কোনও চিহ্ন পাওয়া যাবে কি?’ ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা জানান, তাঁরা সব কিছুই খতিয়ে দেখতে চান।
তার পরেই বেকার ল্যাবরেটরি ও পদার্থবিদ্যার ল্যাবরেটরিতে তদন্তে যান ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা দেখেন, হাঙ্গামার দিন পদার্থবিদ্যা বিভাগের যে-যন্ত্রটি ভাঙা হয়েছিল বলে অভিযোগ, সেটি ইতিমধ্যেই মেরামত করা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা সেটি ব্যবহারও করছেন। বেকার ল্যাবরেটরির ভাঙা কাচ মেরামত করা হয়নি ঠিকই। কিন্তু গোলমালের পরে গোটা চত্বরে একাধিক বার ঝাঁট পড়ায় কাচের টুকরো কোথাও নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ভবনের সামনে কোনও পোস্টার উল্টে নেই। একাধিক বার ঝাঁট পড়েছে সেখানেও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক বলেন, “পুলিশ গত কয়েক দিনে এক বারের জন্যও আমাদের ফরেন্সিক তদন্তের কথা বলেনি। ভাঙা যন্ত্র যে মেরামত করা যাবে না কিংবা বেকার ল্যাবরেটরি যে এখনই পরিষ্কার করা যাবে না, পুলিশ তা জানায়নি। আমাদের আগে থেকে বললে আমরা সব আগের মতো রেখে দিতাম।” এত দিন পরে ফরেন্সিক তদন্ত শুরু হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও বিস্মিত। এমন তদন্তের কী মানে হয়, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরাও।
প্রেসিডেন্সি থেকে কী কী নমুনা পেলেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা?
পুলিশ জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক, মূল প্রশাসনিক ভবনের সামনের এলাকা, বেকার ল্যাবরেটরি ঘুরে দেখেন তাঁরা। কিছু নমুনা সংগ্রহও করেন। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে হামলায় ব্যাপক ভাঙচুরের প্রমাণ পাননি ফরেন্সিকের অফিসারেরা। পুলিশের কাছে মূল ফটকের ভাঙা তালা, চাবি, বেকার ল্যাবরেটরি থেকে পাওয়া জ্যাভলিন বা বর্শা এবং অন্যান্য ভাঙা জিনিসের নমুনা চেয়েছেন তাঁরা।
মূল ফটকের অবস্থা যে খুব একটা ভাল নয়, তাতে যে মরচে পড়েছে, তা-ও নজর করেছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। বহু দিন মূল ফটকে রং করা হয়নি। ভাঙা তালা এবং তার চাবি নিজেদের গবেষণাগারে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করবেন তাঁরা।
ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের সফরের সঙ্গে সঙ্গে এ দিনও প্রেসিডেন্সিতে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের গড়া এক সদস্যের তদন্ত কমিটির জিজ্ঞাসাবাদ চলে। মূলত বেকার ল্যাবরেটরিতে হামলার দিন কী ঘটেছিল, প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে তা জানতে চান ওই কমিটির সদস্য, প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ও অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায়।
|