বাবার ছবিতে ফুল দিলেও মাকে খোঁটা দিত ছেলে
কালিকাপুরের সাত তলার এই ফ্ল্যাটে এখন স্বস্তিতে আছেন ৮৮ বছরের মনিকা অধিকারী। ছোট ছেলে অলোকের এই চার কামরার ফ্ল্যাটে তাঁর জন্য একটি ঘর বরাদ্দ হয়েছে। তাঁকে দেখভালের জন্য আছেন সর্বক্ষণের আয়াও। তবু অশক্ত শরীরটাকে টেনে এনে ফ্ল্যাটের পুব দিকের বারান্দায় এসে দাঁড়ালে কেবলই মনে পড়ছে বেলগাছিয়ার একতলা বাড়িটার কথা। বাড়ির লাগোয়া বাগানটার কথা।
স্বামীর তৈরি করা ৩৫ বছরের পুরনো বাড়িটার সঙ্গে কত স্মৃতি জড়িয়ে। তবু এখন সেই বাড়িই বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে মনিকা দেবীর কাছে! “যদি ওখানে গেলে আমাকে মেরে ফেলে মেজো? ওই কুলাঙ্গার ছেলেকে বিশ্বাস নেই। ওকে আমার ছেলে বলতে ঘেন্না করে।”
মনিকাদেবী জানেন, মেজো ছেলে অমল আদালতে দাঁড়িয়ে তাঁকে মা বলে চিনতে অস্বীকার করেছে। ‘ভাড়া করা ভিখিরি’ বলেছে। তিনি জানেন, হাইকোর্টের বিচারপতি কানোয়ালজিৎ সিংহ অহলুওয়ালিয়া ছেলেকে ‘দুর্বিনীত ও কুলাঙ্গার’ বলে তিরস্কার করেছেন। তিনি নিজেও কি তাই মনে করেন? চোখের জল মুছে মনিকাদেবী বললেন, “ওকে কুলাঙ্গার ছাড়া আর কী বলব? নিজের মাকে যে চিনতে পারে না, তার সম্পর্কে আমার আর কী বলার আছে? ... আমাকে বোধহয় বিষ খাইয়েই মেরে ফেলত।”

কালিকাপুরে মনিকাদেবী। —নিজস্ব চিত্র
মনিকাদেবীর স্বামী অনিলচন্দ্র অধিকারী ২০০২ সালে মারা যান। তার দু’বছর পরে বড় আর ছোট ছেলে বেলগাছিয়ার বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র বসবাস শুরু করেন। মেজো ছেলের সঙ্গে স্বামীর ভিটেয় থেকে যান মনিকা দেবী। কান্না জড়ানো গলায় বলেন, সব বিষয়েই টাকা চাইত মেজো ছেলে। “আমার সম্বল বলতে স্বামীর পেনশনের ছ’হাজার টাকা। আমি সব সময় দিতে পারতাম না। এই নিয়েই শুরু হত অশান্তি।” চোখ ছলছল করে উঠল তাঁর। “অসুখ করলে যদি ওসুধ আনতে বলতাম, তা হলেও টাকা চাইত অমল। এক বার টিভি দেখতে বসে চেয়ার থেকে পড়ে গেলাম। কেউ তুলল না।” পাঁচ বছর ধরে এই ভাবেই অত্যাচার চালিয়েছে মেজো ছেলে। “সব কিছু নিয়ে গঞ্জনা শুনতে হত। টিভিতে সিনেমা দেখা নিয়ে কটু কথা শোনাত। ট্যাপকলে শিকল দিয়ে তালা দিয়ে রাখত। আমার আয়াকে জল আনতে হত পাশের বাড়ি থেকে।”
কী নিয়ে মায়ের প্রতি এত আক্রোশ? অমলবাবুর বক্তব্য জানা যায়নি। এ দিন দুপুরে বেলগাছিয়ার বাড়িতে গিয়ে বারবার কড়া নাড়লেও কেউ দরজা খোলেননি। অমলবাবু এ দিন অফিসেও যাননি। রাজ্যের আবাসনমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, “অমলবাবুকে আমি ডেকে পাঠিয়েছিলাম। উনি আজকে অফিসে আসেননি। আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি।” মনিকাদেবীর বড় ছেলে অনুপবাবুর কথায় সম্পত্তি ও বাড়ি নিয়ে বিবাদের ইঙ্গিত মিলেছে। মনিকাদেবীর প্রতিবেশীদের ধারণাও তা-ই। কিন্তু তবুও সকলেরই বিস্ময়, “মায়ের সঙ্গে কেউ এই ব্যবহার করে?”
২০০৮ সালে জুলাই মাসে এক বার বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন মনিকা দেবী। “সে বার তাড়াহুড়োয় চশমাটা নিতে ভুলে গিয়েছিলাম। পথে এক পাটি জুতো খুলে গিয়েছিল।” স্মৃতিগুলো ঝাপসা হয়ে আসছে। মনিকাদেবী কথা হারিয়ে ফেলছেন। স্বামীর ভিটের মায়া কাটাতে পারেননি বলে এত যন্ত্রণা সইতে হল। ছোট ছেলের ফ্ল্যাট এখন নতুন ঠিকানা।
এই বাড়িতে রয়েছে প্রয়াত স্বামীর একটি ল্যামিনেট করা ফটো। বেলগাছিয়ার বাড়িতে একটা বড় ছবি ছিল। বৃদ্ধা বলে ওঠেন, “জানেন, রোজ ওখানে ফুল দিতাম! সেই নিয়েও গঞ্জনা শুনতে হত!”

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.