খোরপোষ দেওয়া এড়াতে মাকে ভিখিরি
বলল ছেলে, আদালতের ভর্ৎসনা
মাকে দেখভাল করতে চান না। তাই আদালতে দাঁড়িয়ে ৮৮ বছরের বৃদ্ধাকে ‘ভাড়া করা ভিখিরি’ বলে দাবি করেছিলেন ছেলে।
সন্তানের বিরুদ্ধে খোরপোষ চেয়ে বুড়ো মা-বাবা আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন, এ দেশের বিচারব্যবস্থায় সেটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু নিজের মাকে ‘ভিখিরি’ পরিচয় দেওয়াতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কানোয়ালজিৎ সিংহ অহলুওয়ালিয়া মন্তব্য করেন, এই দুর্বিনীত, কুলাঙ্গার ছেলের নিজের মাকে ন্যায্য প্রাপ্য দেওয়ার মতো ভব্যতা ও মনুষ্যত্বটুকুও নেই!
কে এই ‘কুলাঙ্গার’? নাম অমল অধিকারী। রাজ্য সরকারের আবাসন পর্ষদের এক পদস্থ অফিসার। স্ত্রী সল্টলেকের একটি মেয়েদের স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। কলকাতার উপকণ্ঠে, ৬৪/৫৬ বেলগাছিয়া রোডে একটি তিনতলা বাড়িতে থাকেন তাঁরা। বাড়িটি অবশ্য তৈরি করেছিলেন অমল অধিকারীর বাবা। সে কয়েক যুগ আগের কথা। অমলরা তিন ভাই। তিনি মেজ। দাদা ও ভাই বিদেশে। বৃদ্ধা মা মনিকা অধিকারী এই মেজ ছেলের সঙ্গেই থাকতেন।
স্বামীর মৃত্যুর পরে আইনের চোখে মনিকাদেবীই বাড়ির আসল মালিক। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতিটা সম্পূর্ণ আলাদা। অকথ্য শারীরিক আর মানসিক অত্যাচার ছিল তাঁর নিত্যদিনের সঙ্গী। বুড়ো বয়সে সব কাজ আর পেরে ওঠেন না। তাই নিজের জন্য এক জন আয়া রাখতে চেয়েছিলেন বৃদ্ধা। শুনেই খেপে ওঠেন ছেলে। মায়ের জন্য পানীয় জল নেওয়া বন্ধ করে দেন। আদালতে মনিকাদেবী জানিয়েছেন, অত্যাচারের মাত্রা যখন আর তিনি নিতে পারতেন না, বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেন। তাতেও অবশ্য হুঁশ ফেরেনি অফিসার-পুত্রের।
সন্তানের এ হেন আচরণে বীতশ্রদ্ধ হয়ে শেষমেশ শিয়ালদহের বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলা করেন বৃদ্ধা। সেটা ২০০৯ সাল। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে অমলবাবুকে বিচারক নির্দেশ দেন, মাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিতে হবে। মায়ের দেখাশোনার জন্য লোক রাখতে হবে। প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে খোরপোষ বাবদ ৫ হাজার টাকা দিতে হবে। এ ছাড়া, মামলার সময়কাল বিচার করে বকেয়া বাবদ এককালীন দেড় লক্ষ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক। শিয়ালদহ আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আলিপুর আদালতে মামলা করেছিলেন অমলবাবু। কিন্তু তাতে রায়ের কোনও হেরফের হয়নি।
এ বার কলকাতা হাইকোর্টে যান অমলবাবু। তাঁর দাবি, যাঁকে খোরপোষ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নিম্ন আদালত, সেই বৃদ্ধা তাঁর মা নন। শিয়ালদহ স্টেশন থেকে এক ভিখিরিকে ভাড়া করে এনে তাঁর মা বলে দাবি করা হচ্ছে। ছেলের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পেয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি দু’পক্ষের আইনজীবীকে যাবতীয় কাগজপত্র, মায়ের ছবি এবং অন্যান্য নথি পেশ করতে বলেন। ব্যক্তিগত ভাবে বৃদ্ধাকে আদালতে হাজির হওয়ারও নির্দেশ দেন বিচারপতি। সব দিক খতিয়ে দেখে তিনি নিশ্চিত হন, ভিখিরি নন, এই বৃদ্ধাই অমলবাবুর মা মনিকাদেবী। এই মামলার রায় ঘোষণার শুরুতেই অমলবাবুকে ‘দুর্বিনীত, কুলাঙ্গার’ ছেলে বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি অহলুওয়ালিয়া।
বৃদ্ধার ভবিষ্যৎ-সুরক্ষায় কী রায় দিলেন বিচারপতি?
প্রতি মাসে খোরপোষ বাবদ মাকে চার হাজার টাকা দিতে হবে অমল অধিকারীকে। এ ছাড়া রাজ্য লিগাল এড্স-এর কাছে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে জমা দিতে হবে। ওই টাকা দরিদ্র মহিলাদের মামলার কাজে ব্যয় করবে লিগাল এড্স। এই দম্পতির মাসিক আয় কত, তদন্ত করে তা-ও আদালতকে জানাতে বলেছেন বিচারপতি।
এই মামলায় মনিকাদেবীর আইনজীবী ছিলেন সুপ্রদীপ রায় এবং সিদ্ধার্থ রায়। তাঁদের মন্তব্য, “শেষ পর্যন্ত মানবিকতারই জয় হল। এই মামলা লড়ে যা তৃপ্তি পেলাম, তা আগে কখনও পাইনি।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.