বিমানের ভিতরে আচমকা ‘লোডশেডিং’। এমনই ঘুটঘুটে অন্ধকার যে, পাশের সহযাত্রীকেও দেখা যাচ্ছে না। মুম্বই থেকে এসে বিমানটি তখন কলকাতায় দাঁড়িয়ে। বেগতিক দেখে টর্চ বার করলেন এক বিমানসেবিকা। যাত্রীরা যে যাঁর মোবাইল ফোন ‘সুইচ অন’ করে আলোর ব্যবস্থা করলেন। টিমটিমে সেই আলোর মধ্যে একে একে নেমে এলেন ১১৮ জন যাত্রী।
বৃহস্পতিবার রাতে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছে আশুতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। রাত তখন প্রায় পৌনে বারোটা। এ ভাবে হঠাৎ আলো নিভে যেতে বয়স্ক যাত্রীরা খানিকটা ঘাবড়েও যান। বিমানের ভিতরে বাতানুকূল ব্যবস্থাও কাজ করছিল না। যাত্রীদের অনেকেই অন্ধকারে নামার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করে দেন। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার, ৬২ বছরের আশুতোষবাবুর কথায়, “এত দিন দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছি। এমন অভিজ্ঞতা এ-ই প্রথম। মনে হচ্ছিল, অন্ধকার সুড়ঙ্গে দাঁড়িয়ে রয়েছি।”
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, রাত প্রায় এগারোটা নাগাদ বিমানটি কলকাতায় নামে। গাড়ির যেমন ব্যাটারি থাকে, তেমনই প্রতিটি বিমানে ‘অক্সিলিয়ারি পাওয়ার ইউনিট’ (এপিইউ) থাকে। তার সাহায্যেই ইঞ্জিন ‘অন-অফ’ করা হয়। তার সাহায্যেই বিমানে আলো জ্বলে, বাতানুকূল ব্যবস্থা চালু থাকে। এয়ার ইন্ডিয়ার এই বিমানটির এপিইউ খারাপ ছিল বলে জানা গিয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিমান নামার পরে বাইরের ব্যাটারি (গ্রাউন্ড পাওয়ার ইউনিট বা জিপিইউ) দিয়ে আলো ও বাতানুকূল ব্যবস্থা চালু রাখার কথা। |
সেই মতো বৃহস্পতিবার রাতে এই বিমানটিতে জিপিইউ লাগানোর পরে তা কাজ করেনি। এয়ার ইন্ডিয়ার কাছে আর যে দু’টি জিপিইউ ছিল, সেগুলিও এই বিমানের ক্ষেত্রে কাজ করেনি। ওই ভাবে প্রায় ২৫ মিনিট যাত্রীদের বিমানে বসিয়ে রেখে ইঞ্জিন চালিয়ে আলো ও বাতানুকূল ব্যবস্থা চালু রাখা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, ইঞ্জিন চালু থাকা অবস্থায় যাত্রীদের নামানো যাবে না। বিমানে বসে যাত্রীরাও অধৈর্য হয়ে পড়ছিলেন। জ্বালানিও পুড়ছিল হু হু করে। ফলে, সাড়ে ১১টা নাগাদ পাইলট ইঞ্জিন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন।
আশুতোষবাবু বলেন, “প্রথমে পাইলট ঘোষণা করেন বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় সমস্যা হয়েছে। বলা হয়, পাঁচ মিনিটের মধ্যে সমস্যা মিটে যাবে। ওই অবস্থায় বেশ কিছুক্ষণ বসে ছিলাম। শেষে পাইলট বলেন, এপিইউ কাজ করছে না।” পাইলট ইঞ্জিন বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত আলো নিভে গেলেও বিমানের ইমার্জেন্সি আলো জ্বলে ওঠে। তবে তা হাতে গোনা। তাতে আধো-অন্ধকার পরিবেশ তৈরি হয় বিমানের ভিতরে। ওইটুকু আলো কাজে লাগিয়ে যাত্রীরা মাথার উপরে রাখা মালপত্র নামাতে শুরু করেন। বিমানের অন্য এক যাত্রী, সৌরভ বিশ্বাস বলেন, “বড় জোর পাঁচ মিনিট জ্বলেছিল ইমার্জেন্সি আলো। তার পরে সব অন্ধকার। একেবার নিকষ কালো অন্ধকার। এই অবস্থায় বয়স্কদের তো একটু সমস্যা হবেই।” দরজা খোলার পরে বাইরে থেকে সামান্য টিমটিমে আলো এসে পড়ে। কখন সিঁড়ি এসে লাগে, তা-ও বুঝতে পারেননি যাত্রীরা। শেষমেশ বিমানের বাইরে এসে সিঁড়ির পাদানির আলো দেখে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন তাঁরা।
এয়ার ইন্ডিয়া সূত্রের খবর, কলকাতায় তাদের যত বিমান নিয়মিত ওঠানামা করে, তার মধ্যে চার-পাঁচটি বিমানের এপিইউ সব সময়েই খারাপ থাকে। সংস্থার আর্থিক অবস্থার জন্যই নাকি যন্ত্রাংশ বাইরে থেকে আনা যাচ্ছে না। তাই পুরোপুরি সারানো যাচ্ছে না এপিইউ। জানা গিয়েছে, নিয়ম মতো কোনও বিমানের এপিইউ খারাপ থাকলে তা দু’মাসের মধ্যে সারিয়ে ফেলার কথা। সংস্থার এক অফিসার বলেন, “যখন দেখা যায়, কোনও বিমানের খারাপ এপিইউ-এর ক্ষেত্রে দু’মাস সময় পেরিয়ে গিয়েছে, তখন অন্য বিমানের এপিইউ থেকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ খুলে এনে এই বিমানে লাগিয়ে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় বিমানের ক্ষেত্রে আবার দু’মাস হাতে সময় পাওয়া যায়। এ ভাবেই চলছে।” খারাপ এপিইউ-এর বিমানগুলি কলকাতায় নামার পরে প্রতিটি ক্ষেত্রে বাইরের জিপিইউ দিয়ে আলো ও বাতানুকূল ব্যবস্থা চালু রাখা হচ্ছে। যাত্রীরা নেমে গেলে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে জিপিইউ। সেই বিমান ওড়ার সময় এলে যাত্রীদের ওঠার আগে আবার জিপিইউ লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনকী, এই জিপিইউ-এর সাহায্যেই চালু করা হচ্ছে বিমানের ইঞ্জিন।
বিমান সংস্থা সরকারি ভাবে বলেছে, যাত্রীদের পায়ের কাছে আলো জ্বলছিল। তাই একেবারে ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়নি। যদিও আশুতোষবাবু ও সৌরভবাবু দু’জনেই বলেন, “পায়ের তলায় কোনও আলো জ্বলেনি।” |