নিয়ম-রাজার হাতে বেদান্ত-প্রকল্পের ভাগ্য
গ্নির অনুমতি বা প্রকল্পের ছাড়পত্রের জন্য বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী-আমলাদের সঙ্গে আলোচনায় অভ্যস্ত তিনি। সিদ্ধহস্ত ব্যবসায়িক দর কষাকষিতে। কিন্তু ওড়িশায় সংস্থার বক্সাইট খনি প্রকল্পে সবুজ সংকেতের জন্য আপাতত স্থানীয় আদিবাসীদের দিকেই তাকিয়ে অনিল অগ্রবাল। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের দৌলতে ওই প্রকল্প নিয়ে বেদান্ত গোষ্ঠীর কর্ণধারের ভাগ্য এখন নিয়মগিরির আদিবাসীদের দেবতা নিয়ম-রাজার হাতে।
ওড়িশায় রায়গড় ও কালাহান্ডি জেলার নিয়মগিরি পাহাড় থেকে বক্সাইট তুলতে ৬৬০ কোটি ডলার ঢেলেছে বেদান্ত। কিন্তু এই খনি প্রকল্পকে বিতর্ক তাড়া করেছে প্রায় প্রথম দিন থেকে। গোড়া থেকেই এ নিয়ে প্রবল আপত্তি স্থানীয় ডোংরিয়া ও কুটিয়া কন্ধ আদিবাসীদের। তাঁদের অভিযোগ, খনি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরেই পাহাড়ের মাথায় তাঁদের দেবতা নিয়ম-রাজার অধিষ্ঠান। তাই ওখানে খনি-কারখানা হলে, তাঁরা পুজো দেবেন কেমন করে? আর এই ধর্মীয় বিশ্বাসকেই অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের রায়, ওই প্রকল্প যেন পুজোর অধিকারে বাধা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
তাই প্রকল্পকে ছাড়পত্র দেওয়ার প্রাথমিক ভার আদিবাসীদের নির্বাচিত স্থানীয় গ্রামসভার উপরেই ছেড়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। জানিয়েছে, আলোচনা করে গ্রামসভা প্রথমে আদিবাসীদের মতামত নেবে। তার পর সেই অনুযায়ী কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রককে রিপোর্ট দেবে। যা মাথায় রেখে ছাড়পত্রের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রক। এ জন্য ছ’মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে আদালত। স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কেউ যেন গ্রামসভাকে প্রভাবিত করতে না-পারে, তা দেখতে ওড়িশা হাইকোর্টকে নির্দেশও দিয়েছে তারা।
স্থানীয় আদিবাসীদের প্রতিবাদ হিসেবে শুরু হলেও, পরে নিয়মগিরি নজর কেড়েছিল সারা বিশ্বের। তাই এই রায়ও দুনিয়াজুড়ে শিল্প বনাম পরিবেশ বিতর্কে নয়া ইন্ধন জুগিয়েছে।
এক দিকে শিল্পের আশঙ্কা, জমি-জট আর পরিবেশের ছাড়পত্র সংক্রান্ত জটিলতায় এমনিতেই জেরবার মনমোহন-সরকার। তার উপর এ বার জমি নেওয়ার সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আবেগের কথাও মাথায় রাখতে হবে তাদের। ফলে আরও কঠিন হবে শিল্পের খিদে মেটানো। তবে আর একটি অংশের তেমনই মত, এর ফলে গোড়া থেকেই সম্ভাব্য সমস্যার বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকবে শিল্প। সেই অনুযায়ী খরচের হিসেব করবে তারা।
তেমনই আবার রায়কে স্বাগত জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। উল্লেখ্য, নিয়মগিরি নিয়ে লন্ডনে বেদান্তর সদর দফতরের সামনেও বিভিন্ন সময়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন।
নিয়মগিরিতে বেদান্তর বক্সাইট প্রকল্প থমকে যাওয়ার পর তা নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে ওড়িশার নবীন পট্টনায়েক-সরকারের সংঘাত সামনে আসে। দ্বিতীয় দফার প্রকল্প খারিজের পিছনে পরিবেশ মন্ত্রকের যুক্তি ছিল, এর দরুন ওই অঞ্চলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য এবং বসবাসকারী আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর পর স্থানীয় মানুষের প্রতিবাদকে সমর্থন জানাতে কালাহান্ডিতে পা রেখেছিলেন রাহুল গাঁধীও। উল্টো দিকে ওড়িশা সরকারের দাবি ছিল, প্রকল্প আটকে যাওয়া রাজ্যের উন্নয়নের পরিপন্থী।
নিয়মগিরির মতো সমস্যার এই চিত্র অবশ্য শুধু এ দেশে নয়। বছর পাঁচেক আগে আমাজনের জঙ্গলে খনিজ তেলের সন্ধানেও এই একই বিতর্ক হয়েছিল। আপত্তি উঠেছিল, সেখানে বসবাসকারী আদিবাসীদের অস্তিত্বের সংকট তৈরি হওয়া নিয়ে। তা ছাড়া, ব্রাজিলের বেলে-মন্টে জলাধার নির্মাণের সময় কিংবা চিনের ইয়াংসিকিয়াং নদীর উপর প্রকল্পেও দেখা দিয়েছিল এই একই সমস্যা।
নিয়মগিরি প্রসঙ্গে রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, “আদিবাসীদের কাছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান সম্পদ হল জমি। ওই জমিই তাঁদের ঠিকানা। জীবন ও জীবিকার উৎস। সামাজিক সম্মানও।” তাই জমির সঙ্গে তাঁদের নিবিড়-আধ্যাত্মিক-আবেগপ্রবণ সম্পর্ক বজায় রাখার অধিকারের পক্ষে রায় দিয়েছে শীর্ষ আদালত। যার দরুন আপাতত গ্রামসভার দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে অনিল অগ্রবালকেও।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.