কেন্দ্র আইন বদলেছে। এ বার রাজ্য কিছুটা নমনীয় হলেই তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে লগ্নির পথ আরও প্রশস্ত হতে পারে বলে আশা করছে এ রাজ্যের শিল্পমহল। তাদের মতে, যে কোনও ধরনের শিল্পে বিশেষ আর্থিক অঞ্চল (সেজ) নিয়ে কেন্দ্রের ওই নয়া নীতি নিজেদের অবস্থান বদলানোর অনেকটা সুযোগ করে দেবে রাজ্যকেও।
কেন্দ্রের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, তথ্যপ্রযুক্তি-সেজ গড়তে এখন আর ন্যূনতম জমির বিধি-নিষেধ থাকবে না। বরং তা নির্ভর করবে ‘বিল্ট-আপ এরিয়া’র উপর। এত দিন বায়ো-টেকনোলজি ও তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে সেজ তৈরির জন্য জমি লাগত অন্তত ২৫ একর। এ রাজ্যের শিল্পমহলের এক বড় অংশের অভিমত, অন্তত এর পর ওই ধরনের সেজ নিয়ে রাজ্যের আর আপত্তি থাকা উচিত নয়। নিজেদের যে আপত্তির কারণে লগ্নি হাতছাড়া হতে পারে জেনেও ইনফোসিসের প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রের কাছে সেজ তকমার সুপারিশ করতে পারেনি তারা। শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য জানান, সেজ সংক্রান্ত সম্পূর্ণ নথিপত্র না পেয়ে এ বিষয়ে মন্তব্য করবেন না।
সেজ-এর বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থানের কথা নির্বাচনী ইস্তেহারেই স্পষ্ট করে দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের আপত্তির মূল কারণ দু’টি। এক, এ জন্য এক লপ্তে বিপুল পরিমাণ জমি প্রয়োজন হয়। আর দুই, সেখানকার শ্রম আইন। কিন্তু তেমনই শিল্পেরও পাল্টা যুক্তি হল, অন্তত তথ্যপ্রযুক্তি সেজ-এর ক্ষেত্রে এই দুই আপত্তি তেমন ধোপে টেকে না। কারণ, দক্ষ কর্মীর অভাবে কম টাকায় ইচ্ছেমতো কাজ করিয়ে নেওয়ার সুযোগ এখানে নেই। আর অন্যান্য শিল্পের তুলনায় জমিও লাগে অনেক কম। শিল্পমহল মনে করছে, তথ্যপ্রযুক্তি-সেজ তৈরির ক্ষেত্রে ন্যূনতম জমির শর্ত কেন্দ্র তুলে নেওয়ার পর তাদের যুক্তিই আরও জোরালো হল। |
বদল |
• বহু পণ্যের সেজ-এ ন্যূনতম জমি ২৫০০ থেকে কমে ১২৫০ একর
• তথ্যপ্রযুক্তি সেজ গড়তে জমির শর্ত থাকল না। এ জন্য কলকাতা সমেত সাত মেট্রো শহরে লাগবে অন্তত এক লক্ষ বর্গ ফুট ‘বিল্ট-আপ এরিয়া’। অন্য কোথাও আরও কম
• সেজ-এ থাকা অফিস ও কারখানা বিক্রি/হস্তান্তরে সায় |
|
তবে শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়। সেজ-এর জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়েছে উত্তরপ্রদেশের নয়ডা, হরিয়ানার ঝজ্জর বা মহারাষ্ট্রের রঞ্জনগাঁওয়েও। অভিযোগ উঠেছে জমি অপব্যবহার নিয়ে। আঙুল উঠেছে, শিল্পায়নের বদলে রিয়েল এস্টেট ব্যবসার রমরমার দিকে। হয়তো সে সব কথা মাথায় রেখেই বহু পণ্যের সেজ-এও ন্যূনতম জমির পরিমাণ অর্ধেক করে দিয়েছে কেন্দ্র।
ন্যাসকমের প্রেসিডেন্ট সোম মিত্তল জানান, জমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় সেজ-এর সুবিধা নিতে এগিয়ে আসবে ছোট-মাঝারি সংস্থা। ফলে লগ্নি বাড়বে।
রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি কমিটির এক সদস্যের মতে, জেলায় জেলায় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প ছড়িয়ে দিতে অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধার কথা আগেই ঘোষণা করা হয়েছে। তার সঙ্গে ছোট ছোট সেজ গড়লে লগ্নি টানা সহজ হবে। তবে সেজ নিয়ে অবস্থান না বদলালে কেন্দ্রের নয়া নীতির সদ্ব্যবহার করা যাবে না বলেই মনে করছে শিল্পমহল। সে ক্ষেত্রে অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আরও পিছিয়ে পড়তে হবে।
পাশাপাশি নয়া নিয়মে সেজ-এর কারখানা/অফিস বিক্রি ও হস্তান্তরে সায় মেলায় ব্যবসা চালাতে না পারলেও লগ্নি আটকে থাকার সমস্যা এড়ানো যাবে। যে সমস্যা প্রবল ভাবে ভুগিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের গয়না শিল্পের বিশেষ আর্থিক অঞ্চল মনিকাঞ্চনকে। |