সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন বেপাত্তা। পুলিশ তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। গত দু’দিনে রাজ্যের বিভিন্ন থানায় জালিয়াতি, প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গ-সহ এক গুচ্ছ ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যার পর থেকে তাঁর আর হদিশ মেলেনি।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেক্টর ফাইভে সংস্থার দফতরে তাঁকে শেষ বারের মতো দেখা গিয়েছে। তার পর থেকে সুদীপ্তবাবু মোবাইল ফোনগুলি বন্ধ করে দিয়েছেন। ভিনরাজ্যে বা সড়কপথে নেপাল-ভুটান-
বাংলাদেশেও তিনি চলে যেতে পারেন বলে পুলিশ মনে করছে। তদন্তকারী অফিসাররা জানাচ্ছেন, সারদা গোষ্ঠীর মালিকের দু’টি পরিবার। সল্টলেকের এফডি এবং এইচএ ব্লকে তাঁর দু’টি বাড়িতে দুই পরিবার থাকেন। শুক্রবার পুলিশ দুই বাড়িতেই কেয়ারটেকার ছাড়া কারওকে পায়নি। দুই স্ত্রী-সহ পরিবারের অন্যদেরও ফোন বন্ধ। কেয়ারটেকারদের জেরা করে পুলিশ সুদীপ্ত সেনের সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানতে পারেনি। |
স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা এ দিন বলেন, “এখনও পর্যন্ত সুদীপ্ত সেনের কোনও হদিশ আমাদের কাছে নেই। তবে কত দিন আর লুকিয়ে থাকবেন? পুলিশকে তাঁকে ধরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, উনি ধরা পড়বেন।” বৃহস্পতিববার মহাকরণ ছাড়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানিয়েছিলেন, “উত্তর ভারতে কোথাও লুকিয়ে রয়েছেন সুদীপ্ত সেন। পুলিশ খুঁজছে। ধরা পড়লেই জানতে পারবেন।” কোনও কোনও সূত্রের খবর, উত্তরাখণ্ডের কোনও প্রান্তে তাঁকে ইতিমধ্যেই আটক করা হয়েছে। যদিও রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে তা স্বীকার করা হয়নি।
পুলিশ জেনেছে, বেপাত্তা হয়ে যাওয়ার আগে তিনি একটি দীর্ঘ চিঠিতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে নানা কথা লিখে গিয়েছেন। তাতে দিল্লি ও কলকাতার বহু প্রভাবশালী ব্যক্তিকে টাকা দেওয়ার কথা লেখা রয়েছে। তাঁকে আত্মহত্যা করতে হলে ওই সব প্রভাবশালী ব্যক্তিই দায়ী থাকবেন বলে ঘোষণা করে গিয়েছেন তিনি। তবে এটি স্বেচ্ছায় লেখা, নাকি চাপ দিয়ে লেখানো হয়েছে, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।
গত ১৬ থেকে ১৮ এপ্রিলের মধ্যে সারদা-র মালিকের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ দায়ের করেছেন সংস্থার একাধিক শাখার কর্মীরা। সঙ্গে পুরনো একটি খুনের মামলাতেও সুদীপ্ত সেনকে জেরা করতে চায় সিআইডি। ১৯৯৯ সালের ২৯ জানুয়ারি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর থানায় খুন হন বিশ্বনাথ অধিকারী। সেই মামলায় তিন জনের বিরুদ্ধে চার্জশিটও দেওয়া হয়েছিল। এই বিষ্ণুপুরেই জমির প্লট দেখিয়ে আমানতকারীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা তুলেছে সারদা গোষ্ঠী। সিআইডি সে সময় মামলার তদন্তভার নিয়েছিল। কিন্তু তা এগোয়নি। ফের সেই তদন্ত করতে চায় সিআইডি। |